—ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটে মুখ থুবড়ে পড়েছে ‘বুয়া বাবুয়া’-র মহাজোট। আর তার পরে দুই নেতানেত্রীর রাজনৈতিক সমীকরণেও ইতি টানা হয়ে গিয়েছে বলে সূত্রের খবর।
ভোটের ফলাফলে বিপর্যয়ের ইঙ্গিত পাওয়ার পরে গত কাল রাতে ঘনিষ্ঠ কিছু নেতার সঙ্গে আসন ধরে ধরে হিসেব কষতে বসেন অখিলেশ সিংহ যাদব। অন্য দিকে ইভিএম-কে দায়ী করে সংক্ষিপ্ত সাংবাদিক সম্মেলন সেরে কিছুটা রহস্যজনক ভাবেই দিল্লির বিমান ধরেন মায়াবতী। দু’পক্ষের মধ্যে নিতান্ত সৌজন্যমূলক বাক্যালাপও নাকি হয়নি।
আজ দলের সমস্ত মুখপাত্রকে সরিয়ে দিয়েছেন অখিলেশ। নেতাদের বলে দিয়েছেন, শোচনীয় পরাজয় নিয়ে তাঁরা যেন কোথাও মুখ না-খোলেন। এমনকি টিভি চ্যানেলগুলিকেও চিঠি দিয়ে এসপি জানিয়ে দিয়েছে, কোনও রাজনৈতিক আলোচনার প্যানেলে আপাতত যেন তাদের প্রতিনিধিকে ডাকা না-হয়। দলীয় সূত্রের বক্তব্য, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ‘একলা চলো’ নীতির ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলেছেন অখিলেশ। ঘনিষ্ঠদের তা জানিয়েও দিয়েছেন।
হিসেব কষে এসপি দেখেছে, বেশ কিছু আসনে মায়াবতীর দলিত ভোট এসপি প্রার্থীর দিকে যায়নি। কোথায় গেল সেই ভোট? এসপি নেতা কিরণময় নন্দের কথায়, ‘‘বিএসপি ক্যাডারভিত্তিক দল। তাদের ভোটাররা অগোছালো ভাবে ভোট দেবেন, এমন ভাবার কারণ নেই। কিন্তু ভোট শতাংশ দেখে আমাদের কাছে এটা স্পষ্ট যে, জোটের ধর্ম মেনে মায়াবতীর ভোট আমাদের কাছে না-এসে বিজেপি প্রার্থীর দিকে গিয়েছে!’’
যড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন এসপি নেতারা। মায়াবতীর সামনে ঝুলছে আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআই তদন্তের জুজু। তিনি তড়িঘড়ি দিল্লি গিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে কোনও বার্তা দিচ্ছেন কি না, সেই সন্দেহও রয়েছে এসপি শিবিরে।
অখিলেশের দলের একাধিক নেতা জানাচ্ছেন, কনৌজ, ফিরোজাবাদ, বালিয়া, বাগপত, ইটাওয়া, বদায়ূঁর মতো কেন্দ্রে এসপি প্রার্থীর বাক্সে যে বিএসপি-র দলিত ভোট যায়নি, সে ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত। ভোট শতাংশ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ভোট গিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিজেপি প্রার্থীদের কাছে। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘এটা কী ভাবে সম্ভব, যদি না মায়াবতীর গোপন নির্দেশ থাকে?’’
এসপি-র আরও অভিযোগ, তুলনামূলক ভাবে সহজ আসনগুলি মায়াবতী নিয়েছিলেন। কানপুর, লখনউ, বারাণসীর মতো কঠিন আসন পেয়েছিলেন অখিলেশ। বিজেপি-কে হটাতে মরিয়া অখিলেশ তখন বলেছিলেন, জোট সফল করতে তিনি দু’পা পিছোতেও প্রস্তুত। আর গত কাল ঘনিষ্ঠ মহলে তিনিই স্বীকার করেছেন, ‘‘ভুল হয়েছিল।’’
২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোট। সাম্প্রতিক প্রবণতা থেকে স্পষ্ট, বিধানসভা এবং লোকসভায় মানুষ ভোট দেয় দু’রকম ভাবে। এসপি-র বক্তব্য, ২০১২ সালে একলা লড়ে তারা ২২৪টি আসন পেয়েছিল বিধানসভায়। কিন্তু ২০১৭-য় কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করে তাদের ভুগতে হয়েছিল। এই লোকসভাতেও কংগ্রেস যে ভাবে বিজেপি-বিরোধিতার নামে এসপি-বিএসপি-র ভোট কেটেছে, তাতে ক্ষুব্ধ অখিলেশ। রাহুল গাঁধীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল হওয়া সত্ত্বেও তৃণমূল স্তরে কী ভাবে এটা হল, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আপাতত তাই কোনও জোটসঙ্গী বা পরোক্ষ সমঝোতা ছাড়াই নতুন উদ্যমে দলকে প্রস্তুত হতে বলেছেন অখিলেশ। অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে রাজ্য স্তরে যে ক্ষোভ জমা হয়েছে, বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব তা জানেন। কিন্তু এখনই যোগীকে সরিয়ে নতুন করে রাজ্য নির্বাচনের ঘুঁটি সাজানো সম্ভব নয়। লোকসভায় সদ্য জয়ের পরে কিছুটা ধীরেসুস্থে উত্তরপ্রদেশ নিয়ে পরবর্তী ভাবনা ভাবতে চায় দিল্লি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy