Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রসায়নে ফেল অঙ্কের পণ্ডিতি, কাশীতে মোদী

ভোটের আগে বারাণসীতে মোদী-বিরোধী জনমতের ইঙ্গিত পাওয়ার কথা বলেছিলেন কোনও কোনও সমীক্ষক। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির থেকে গঙ্গা যাওয়ার রাস্তা প্রশস্ত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন মোদী।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
বারাণসী শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৯ ০২:২৭
Share: Save:

বারাণসীর ভোটারদের ধন্যবাদ দিতে এসে সারা দেশে তাঁর বিপুল জয়ের ‘সম্ভাব্য কারণ’ ব্যাখ্যা করলেন নরেন্দ্র মোদী। জানালেন, পণ্ডিতদের অঙ্ককে হারিয়ে দিয়েছে মতাদর্শের রসায়ন। আর সেই মতাদর্শকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে বিজেপিকে সারা দেশের পার্টিতে পরিণত করেছেন দলের কর্মীরা। বুথ ফেরত সমীক্ষাকে হারিয়ে দেওয়া এই জয়ের কৃতিত্ব মোদী দিলেন দলের কর্মীদেরই।

ভোটের আগে বারাণসীতে মোদী-বিরোধী জনমতের ইঙ্গিত পাওয়ার কথা বলেছিলেন কোনও কোনও সমীক্ষক। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির থেকে গঙ্গা যাওয়ার রাস্তা প্রশস্ত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন মোদী। আর সেই কথা রাখতে বাছ-বিচার না করে দু’পাশের সমস্ত বাড়িঘর, এমনকি মন্দিরও ভেঙে ফেলে প্রশাসন। তা নিয়ে ক্ষোভ ছিল মানুষের। তার আঁচ থেকে বাঁচতে বারাণসীর বদলে পুরীতে প্রার্থী হবেন নরেন্দ্র মোদী— এমন খবরও ছড়িয়েছিল। কিন্তু শুধু প্রার্থীই হলেন না, বারাণসী আসন থেকে ৪ লক্ষ ৭৯ হাজার ভোটের বিরাট জয় অর্জন করে সমালোচকদের জবাব দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। আর সে জন্য বৃহস্পতিবার শপথ নেওয়ার আগে বারাণসীর নির্বাচকদের কাছে এসেছিলেন তিনি কৃতজ্ঞতা জানাতে। কাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরে পুজো দিয়ে বেরিয়ে ‘রেঞ্জ রোভার ভোগ’ গাড়িতে যখন চড়ে বসলেন, বারাণসীর জনসমুদ্র তখন আছড়ে পড়ছে ‘মোদী-মোদী’ শব্দে। দেশের অন্যতম ব্যয়বহুল সেই এসইউভি-র কালচে নীল রং ঢাকা পড়ে গেল গোলাপের পাপড়িতে। জনসভার মঞ্চে উঠে নরেন্দ্র মোদী বললেন, ‘‘গোটা দেশের কাছে আমি পিএম। আর বারাণসীর মানুষের আমি এমপি!’’

এ দিন দীর্ঘ বক্তৃতা যেন সমালোচকদের তুলোধোনা করার জন্যই তৈরি করে এনেছিলেন মোদী। সাফ জানালেন, এ দেশের ভোট-পণ্ডিতেরা অঙ্কে দড় হলেও রসায়নে কাঁচা। তাই তাঁরা বিজেপির বিপুল জয় নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কারণ এই ভোটে অঙ্কের হিসেবকে হারিয়ে দিয়েছে রসায়ন। দাবি করলেন, সমালোচকরা তাঁর দলের বিরুদ্ধে যে সব ‘ভুল ও ভয়ানক ধারণা’ তৈরি করেছিলেন, মানুষ পাশে দাঁড়াতে দ্বিধায় পড়তেন। কিন্তু ‘স্বচ্ছতা আর কঠিন পরিশ্রমে’ সেই ভুল ধারণাকে হারিয়ে দেওয়া গিয়েছে। মোদীর দাবি— এটাই ছিল তাঁদের নির্বাচনী কৌশল, যা গোটা দেশের মানুষের কাছে আজ বিজেপিকে পৌঁছে দিয়েছে।

শপথ নিতে যাওয়ার আগে মোদী জানান, ‘গোবলয়ের পার্টি’-র তকমা ঘোচানোটাও ছিল এ বার তাঁদের পরীক্ষা। অসম-ত্রিপুরায় তাঁর দল সরকারে রয়েছে, দক্ষিণের কর্নাটকেও অনায়াসে আসন জিতছে, এমনকি লাদাখেও জয় ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি প্রার্থী, তার পরেও এক দল লোক প্রচার করে বিজেপি আদতে হিন্দিভাষী অঞ্চলের পার্টি। তিনি আশা করেন, এই নির্বাচনের পরে আর কেউ সে কথা বলার আগে চিন্তা করবে।

জাতীয়তাবাদের মতাদর্শকে মানুষের কাছে নিয়ে পৌঁছে দিয়ে দলের কর্মীরাই এই অসাধ্য সাধন করেছেন দাবি করে মোদী যখন তাঁদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান, নেতা-কর্মীদের উল্লাসে বক্তৃতায় লম্বা বিরতি দিতে হয় প্রধানমন্ত্রীকে। বলেন, ‘‘প্রাণ বাজি রেখে কাজ করতে হয়েছে কর্মীদের। সম্ভবত আর কোনও দলের এত কর্মীকে মতাদর্শ প্রচারের জন্য খুন হতে হয়নি। গাঁধী ও অম্বেডকর সমাজ থেকে অস্পৃশ্যতা দূর করেছিলেন, কিন্তু রাজনৈতিক অস্পৃশ্যতা বেড়েই চলেছে দেশে। তার শিকার হতে হয়েছে বিজেপি কর্মীদের। কেরল থেকে কাশ্মীর, বাংলা থেকে ত্রিপুরায় দলের জন্য প্রাণ বলিদান দিতে হচ্ছে কর্মীদের।’’ এই জয় তাই কর্মীদের প্রতিই উৎসর্গ করেন মোদী।

সভায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দাবি করেন, ভয়ানক বিরুদ্ধ-প্রচার এবং জাতপাতের নগ্ন সমীকরণকে পরাজিত করে নরেন্দ্র মোদীকে জয় ছিনিয়ে নিতে হয়েছে। আর মানুষই তা করে দেখিয়েছেন। মোদীর ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ স্লোগানে ভরসা রেখেছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE