Advertisement
E-Paper

প্রচারে পায়নি, নয়া সরকারে গুরুত্ব পাবে কি বায়ুদূষণ

কেউ বলছেন, বায়ুদূষণের বিষয়টি ‘হেলথ‌্ ইমার্জেন্সি’ হিসেবে গুরুত্ব দিক নতুন সরকার। কারও আবার মত, বিষয়টি শুধুই নীতি নির্ধারণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না, সেই নীতি রূপায়ণের ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতার জায়গাও তৈরি করতে হবে।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৯ ০৩:২৬
বিষাক্ত: বায়ুদূষণের একটি বড় কারণ পুরনো যানবাহনের ধোঁয়া। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

বিষাক্ত: বায়ুদূষণের একটি বড় কারণ পুরনো যানবাহনের ধোঁয়া। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

প্রচারে তার দেখা পাওয়া যায়নি। নতুন সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় কি তার উল্লেখ থাকবে?—এমনটাই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে পরিবেশবিদদের একাংশের মধ্যে। কারণ, বায়ুদূষণ নিয়ে সারা বিশ্বে তুমুল আলোচনার পরেও এ দেশে যে ভাবে রাজনৈতিক প্রচারে বিষয়টি ব্রাত্যই থেকেছে, তাতে স্বাভাবিক ভাবেই নতুন সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় কতটা গুরুত্ব পাবে বায়ুদূষণ, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে।

কেউ বলছেন, বায়ুদূষণের বিষয়টি ‘হেলথ‌্ ইমার্জেন্সি’ হিসেবে গুরুত্ব দিক নতুন সরকার। কারও আবার মত, বিষয়টি শুধুই নীতি নির্ধারণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না, সেই নীতি রূপায়ণের ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতার জায়গাও তৈরি করতে হবে। কারণ, ‘স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার রিপোর্ট, ২০১৯’ অনুযায়ী, সারা দেশে বায়ুদূষণের কারণে প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছেন। যাঁদের মধ্যে ৫১.৪ শতাংশের বয়স ৭০ বছরের কম। রিপোর্ট জানাচ্ছে, বায়ুদূষণ আয়ুর গড় বয়স ২.৬ বছর কমিয়ে দিয়েছে। দূষণের বিপজ্জনক মানচিত্র থেকে ব্রাত্য নেই কলকাতাও। কারণ, বায়ুদূষণের মাত্রা ধারাবাহিক ভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে, এমন ১০২টি শহরকে যে ‘ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম’ (এনসিএপি) কর্মসূচিতে চিহ্নিত করা রয়েছে, তার মধ্যে স্থান করে নিয়েছে এ শহর!

‘সেন্টার অব সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এর ডিরেক্টর (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি) অনুমিতা রায়চৌধুরী জানাচ্ছেন, বিজেপি নিজেদের ইস্তাহারে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কথা ‘মিশন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এনসিএপি কর্মসূচির অধীনে ১০২টি শহরের বায়ুদূষণ ৩৫ শতাংশ হারে কমানোর কথা বলেছে, কিন্তু সেটাই পর্যাপ্ত নয়। অনুমিতার কথায়, ‘‘শুধু নীতি করলেই হবে না। সেই নীতি রূপায়ণের ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতাও তৈরি করতে হবে। যত ক্ষণ না আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করা যাবে, তত ক্ষণ বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। হেলথ ইমার্জেন্সি হিসেবে বায়ুদূষণকে দেখা উচিত।’’

নির্বাচনের প্রচারে বায়ুদূষণকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তা নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছিল কলকাতার একটি সংস্থা। সমীক্ষায় প্রায় ৮০ শতাংশ উত্তরদাতাই চেয়েছিলেন, বায়ুদূষণকে রাজনৈতিক প্রচারে গুরুত্ব দেওয়া হোক। কিন্তু সে প্রত্যাশা এখন অতীত! সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্ণধার অজয় মিত্তল জানাচ্ছেন, কোনও কোনও রাজনৈতিক দল নিজেদের ইস্তাহারে বায়ুদূষণের বিষয়টি উল্লেখ করলেও প্রচারে উহ্যই ছিল। এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিবৃতিই শুধু যথেষ্ট নয়। কারণ, বায়ুদূষণ যেখানে পৌঁছেছে, তাতে এ নিয়ে সার্বিক নীতি প্রয়োজন।

অজয়বাবুর কথায়, ‘‘১২ লক্ষ মানুষ যেখানে শুধু বায়ুদূষণে মারা গিয়েছেন, সেখানেই পরিষ্কার যে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ। যানবাহনের ধোঁয়া থেকে দূষণ, ফসল পোড়ানো, নির্মাণ দূষণ, সব নিয়েই নতুন সরকারকে সার্বিক নীতি তৈরি করতে হবে। আগামী পাঁচ বছরে সরকার যদি বায়ুদূষণকে গুরুত্ব না দেয়, তা হলে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হবে।’’

‘ওয়ার্ল্ড হেলথ‌্‌ অর্গানাইজেশন’-এর বায়ুদূষণ সংক্রান্ত রিপোর্ট, যা ২০১৮ সালে ‘আপডেট’ করা হয়েছিল, তাতে বাতাসে ভাসমান অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার উপস্থিতির নিরিখে বিশ্বের প্রথম সারির শহরগুলির মধ্যে ভারতের ১৪টি শহর জায়গা করে নিয়েছিল। পরিবেশকর্মী সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘বায়ুদূষণ এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে একে অগ্রাহ্য করলে আমাদেরই বিপদ। নতুন সরকারের বায়ুদূষণকে গুরুত্ব দিতেই হবে, অন্য কোনও পথ নেই। কারণ, বায়ুদূষণের ফলে রোগের মাত্রা কতটা বাড়ছে, তা দেখলেই পুরো চিত্র পরিষ্কার হয়ে যাবে!’’

Lok Sabha Election 2019 Election Results 2019 Environment Air Pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy