Advertisement
০৯ মে ২০২৪

গিরিরাজের বর্ণ-টিপ্পনী সনিয়াকে, নিন্দার ঝড়

এ বার এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের মুখে সনিয়া গাঁধী। কেন্দ্রের ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতরের প্রতিমন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য পরিচিত। লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি বলেছিলেন, ভোটের পর মোদী-বিরোধীদের ঠাঁই হবে পাকিস্তানে। তাঁর পরের বিতর্কিত মন্তব্য— সন্ত্রাসবাদীরা সব একই সম্প্রদায়ভুক্ত কেন? এ বারে আরও এক ধাপ এগিয়ে নতুন বিতর্ক বাধালেন তিনি।

সনিয়াকে নিয়ে গিরিরাজ সিংহয়ের বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের জেরে কংগ্রেেসর প্রতিবাদ। বুধবার ভোপালে। ছবি: পিটিআই।

সনিয়াকে নিয়ে গিরিরাজ সিংহয়ের বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের জেরে কংগ্রেেসর প্রতিবাদ। বুধবার ভোপালে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও পটনা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৩
Share: Save:

এ বার এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের মুখে সনিয়া গাঁধী।

কেন্দ্রের ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতরের প্রতিমন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য পরিচিত। লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি বলেছিলেন, ভোটের পর মোদী-বিরোধীদের ঠাঁই হবে পাকিস্তানে। তাঁর পরের বিতর্কিত মন্তব্য— সন্ত্রাসবাদীরা সব একই সম্প্রদায়ভুক্ত কেন? এ বারে আরও এক ধাপ এগিয়ে নতুন বিতর্ক বাধালেন তিনি। গত কাল হাজিপুরে সাংবাদিক সম্মেলনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রথমে রাহুল গাঁধীর দীর্ঘ অনুপস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, মালয়েশিয়ার সেই বিমানের মতোই বেপাত্তা রাহুল। তার পরই সনিয়াকে নিশানা করে বলেন, “রাজীব গাঁধী যদি কোনও নাইজেরীয় মহিলাকে বিয়ে করতেন, তা হলে কী তিনি কংগ্রেসের সভানেত্রী হতে পারতেন? সনিয়া গাঁধীর গায়ের রঙ সাদা বলেই তিনি কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।”

সনিয়া গাঁধীর গায়ের রঙ নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এমন মন্তব্য নিয়ে শোরগোল হওয়া স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই। সাংবাদিক সম্মেলন করে কংগ্রেস শুধু গিরিরাজের ইস্তফার দাবিতেই থেমে থাকেনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছেও সাফাই চেয়েছে। নীতীশ কুমার, লালু প্রসাদ থেকে বৃন্দা কারাটও একই ভাবে প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। কিন্তু শুধু দেশের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি এ বারের বিতর্ক। গিরিরাজের মন্তব্য নিয়ে ঘোরতর আপত্তি প্রকাশ করেছেন নাইজেরিয়ার হাই কমিশনারও। সে দেশের হাই কমিশনার ও বি ওকোনগোর বলেন, ‘‘যে ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চ পদের এক মন্ত্রী এমন মন্তব্য করেছেন, সেটি দুর্ভাগ্যজনক। ভারত ও নাইজেরিয়ার সুসম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এমন মন্তব্য অবাঞ্ছিত।”

দেশে-বিদেশে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ায় আসরে নামেন খোদ অমিত শাহ। প্রথমে গিরিরাজের কাছে সাফাই চাওয়া হয়। গিরিরাজ ব্যাখ্যা করেন— সাংবাদিক সম্মেলনে নয়, তার পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে হালকা চালে কথা বলার সময় এ ধরনের কিছু মন্তব্য করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেটি তিনি নিজের মনোভাব হিসেবে প্রকাশ করেননি। সমাজে কী ধরনের চিন্তাভাবনা হয়, সেটাই ব্যাখ্যা করছিলেন। আর সেই সময়ই সেটি ক্যামেরাবন্দি হয়ে যায়। কেটেছেঁটে তা প্রকাশ করা হয় সংবাদমাধ্যমে— যাতে মনে হচ্ছে যেন এটি তাঁরই মন্তব্য।

অমিত শাহ ভবিষ্যতে তাঁকে সতর্ক হয়ে মন্তব্য করার পরামর্শ দিয়েছেন। এমনকী হালকা আলাপচারিতার সময়েও। পরে গিরিরাজ আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, তাঁর মন্তব্যে সনিয়া ও রাহুল গাঁধী ব্যথিত হয়ে থাকলে তিনি দুঃখিত। বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, অতীতে বিপক্ষ দলের নেতা-নেত্রীরা নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে অনেক কু-কথা বলেছেন। কিন্তু তার পরে তাঁরা কেউই দুঃখপ্রকাশ করেননি। ফলে এখনই মন্ত্রীর ইস্তফা দেওয়ার সময় আসেনি। তা বলে বিজেপির কোনও নেতার এ ধরনের মন্তব্যও সমর্থন করবে না দল। বিজেপি নেতা শাহনওয়াজ হুসেন বলেন, “বিজেপি জাত-পাত-ধর্ম বা গায়ের রঙের বাছ-বিচার করে না। এটি নিছকই গিরিরাজ সিংহের ব্যক্তিগত মত। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’

গাঁধী পরিবারের জামাই রবার্ট বঢরা সচরাচর রাজনীতি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেন না। কিন্তু গিরিরাজের মন্তব্যের পরে তিনিও শাশুড়ির পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। ফেসবুকে রবার্ট বলেছেন, ‘সনিয়া গাঁধীর মতো শ্রদ্ধেয় এক মহিলার সম্পর্কে এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এই মন্তব্য করতে পারলে দেশের বাকি মহিলাদের সম্পর্কে এঁদের মনোভাব কী, সহজেই অনুমেয়! সনিয়া এমন এক মহিলা, যিনি দেশের জন্য চরম ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাঁর প্রিয়তম মানুষদের হারিয়েছেন।’

শুধু গিরিরাজ নন, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্মীকান্ত পার্সেকরের একটি মন্তব্য নিয়েও আজ বিতর্ক তৈরি হয়। আন্দোলনকারী নার্সদের সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘রোদে পুড়ে আন্দোলন করলে কালো হয়ে যাবেন। তাতে বিয়েতে সমস্যা হতে পারে।’’ দলের নেতাদের ধমকে তাঁকেও সন্ধ্যা গড়াতে গড়াতে সাফাই দিতে হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE