দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শেষ পর্যন্ত আশ্বাস মিলল!
মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় সড়কের জট খোলার আশায় আপাতত আশাবাদী বরাকের কংগ্রেস বিধায়করা। আর সংশয়ে বরাকেরই বিজেপি বিধায়করা। তবে এই সড়ক-জটে শিলচরের কংগ্রেস সাংসদ সুস্মিতা দেবের তোপের মুখে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ।
সড়ক সম্প্রসারণে সংশ্লিষ্ট কিছু বনভূমির ব্যাপারে রাজ্য সরকারের অনুমোদন বিষয়ক ফাইলটি মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় দীর্ঘদিন পড়ে আছে। দিসপুরের খবর, ফাইলটি আটকে আছে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়েই। দীর্ঘদিন ধরে মুখ্যমন্ত্রীর টেবিলে পড়ে থাকা ফাইলটি দ্রুত ছাড়ার দাবি নিয়ে সুস্মিতা কয়েকবার মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন। গগৈ তাঁকে আশ্বস্ত করলেও সেই ফাইল পড়েই রয়েছে। কয়েকদিন আগে বরাক বঙ্গ সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্মেলন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা চক্রে বরাকের উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সাংসদ বলেন, “কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরের কাজ দ্রুত শেষ করার ব্যাপারে আগ্রহী। কিন্তু বার বার বলা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী ফাইলটি ছাড়তে অযথা দেরি করায় কাজ থমকে রয়েছে। আমি আবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলব।” গত কালই দিল্লিতে কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র হিসেবে সুস্মিতার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ হাইকম্যান্ড শিলচরের সাংসদকে জাতীয় রাজনীতিতে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে বরাকের স্বার্থে সুস্মিতার এই ‘গগৈ-বিরোধিতা’ মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈকে যথেষ্ট চাপের মধ্যে রাখবে বলে সংশ্লিষ্ট রাজনীতিকরা মনে করছেন। আগামী বছরের মাঝামাঝি রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন। সে কারণে গগৈ ইতিমধ্যেই যথেষ্ট চাপে রয়েছেন।
যে ফাইলটি নিয়ে এত টানাপড়েন, তাতে কী আছে? শিলচর গুয়াহাটি জাতীয় সড়কের সংষ্কার ও সম্প্রসারণের কাজ হাতে নিয়েছে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এনএইচএআই)। ২০০৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বালাছড়া থেকে শিলচর অবধি রাস্তা নির্মাণ ও সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়। এর ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ। এপ্রিলের মধ্যেই বাকি কাজও শেষ হয়ে যাবে বলে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দাবি। কিন্তু মূল সমস্যা কাছাড়ের বালাছড়া থেকে ডিমা হাসাও জেলার হারাংগাজাও-এর মধ্যেকার মোট ৩১ কিলোমিটার রাস্তা নিয়েই। সংরক্ষিত অরণ্যের মধ্যে দিয়ে যাওয়া এই সড়কের সম্প্রসারণের জন্য বড়াইল পাহাড়ের মোট ৯৫ হেক্টর বনভূমির গাছ কাটতে হবে। রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য ৫৪ নম্বর জাতীয় সড়কের (বর্তমানে ১৪ নম্বর অসম সড়ক) লাগোয়া বড়াইল অভয়ারণ্যের ৩৬ হেক্টরের বেশি বনভূমির গাছ কাটার প্রস্তাব আগেই কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়েছিল। গত বছর অগস্টে বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের অধীনস্থ ন্যাশনাল বোর্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ-এর স্ট্যান্ডিং কমিটির ৩১ তম বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপিত হয়। কমিটি অসম সরকারের প্রধান বনপালকে পরামর্শ দেয়, বিষয়টি নিয়ে এনএইচএআই ও ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে আলোচনা করা হোক। মন্ত্রকের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়, যাতে বড় বা ছোট প্রাণী, এমনকী সরীসৃপেরও যাতায়াতে করিডর ব্যাহত না হয়। তার জন্য বনভূমির ভিতর দিয়ে যাওয়া পথে পর্যাপ্ত আন্ডারপাস ও উড়ালপুল তৈরি করতে হবে। এ নিয়ে ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়াকে ৪-৫টি বিকল্প নক্শাও দিতে বলা হয়।
এ বছর ২১ জানুয়ারি স্ট্যান্ডিং কমিটির ৩২ তম বৈঠকে রাজ্য সরকার জানায়, ডব্লুআইআই-এর বিশেষজ্ঞরা এখনও আসেইনি। ফলে বিকল্প নক্শার কাজও এগোয়নি। বিশদ আলোচনার পরে ঠিক হয়, যেহেতু ওই অংশে ছাড়পত্র পাওয়া বরাকের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত জরুরি, তাই বন্যপ্রাণে কোনও ব্যাঘাত না ঘটানোর শর্তে প্রকল্পে ছাড়পত্র দেওয়া যেতে পারে। এত দিনে রাজ্য সরকারের ৩৬ হেক্টরের প্রস্তাব স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে উঠলেও, দেখা যায় ওই রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য আরও ৫৯ হেক্টর বনভূমি পরিষ্কার করা দরকার। বড়াইল অরণ্যের ১০ কিলোমিটার-সহ মোট ৩১ কিলোমিটার রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য ওই ৫৯ হেক্টর বনভূমির গাছ কাটার ব্যাপারে গত বছর ২১ অক্টোবর রাজ্য বন্যপ্রাণ বোর্ড সম্মতিও দেয়। কিন্তু ফাইলে রাজ্য বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের স্বাক্ষর প্রয়োজন। সেই ফাইলটিই সচিবালয়ে পড়ে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সই করেননি। সময় মতো ফাইলটি বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের কাছে না পাঠানোয় ২১ জানুয়ারির বৈঠকে এই দ্বিতীয় প্রস্তাবটি উত্থাপনই করা যায়নি। শিলচরের সাংসদ সুস্মিতা দেব এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেন। তাঁকে এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিলেও ফাইলে শেষ পর্যন্ত সই হয়নি।
কাল বরাকের কংগ্রেস ও বিজেপি বিধায়করা আলাদা আলাদা ভাবে এই দাবি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সকাশে। বিজেপি বিধায়করা মুখ্যমন্ত্রীকে আজ একটি স্মারকলিপিও দেন। কংগ্রেস বিধায়কদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী এই সপ্তাহের মধ্যেই ফাইলটি দিল্লি পাঠানোর ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। আর বিজেপি বিধায়কদের দাবি, ফাইলের ব্যাপারে তিনি খোঁজ নেবেন বলে গগৈ তাঁদের জানান। বিজেপি বিধায়ক দিলীপ পাল বলেন, “এত গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নিয়ে এত কথা হওয়ার পরেও মুখ্যমন্ত্রী এ নিয়ে আমাদের নির্দিষ্ট জবাব না দিয়ে জানান, বিষয়টি দেখবেন।” ছাড়পত্র নিয়ে বিজেপি বিধায়কদের সক্রিয়তা দেখে বরাকের কংগ্রেস বিধায়করা ফের আসরে নামেন। তাঁরা আজ দু’দফায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ভরসা দিয়েছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর হাতে থাকা ছাড়পত্র সংক্রান্ত সব ফাইল তিনি সই করে দিল্লি পাঠাবেন।”
দিল্লিতে স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক অন্তত ছ’মাসের ব্যবধানে বসে। তাই মুখ্যমন্ত্রী এখন ফাইল দিল্লি পাঠালেও কমপক্ষে আগামী জুলাই মাসের আগে প্রস্তাবটি কমিটির বৈঠকে উঠবে না। এ দিকে, ওই অংশে জঙ্গল পরিষ্কার করা ও রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য ঠিকাদারকে ‘প্যাকেজ ভিত্তিক’ ঠিকা দেওয়া হচ্ছে বলে এনএইচএআই সূত্রের খবর। অর্থাৎ যত ক্ষণ না পুরো অংশের চূড়ান্ত ছাড়পত্র মিলছে, ততক্ষণ কাজ শুরু হবে না বলেই সব মহলের আশঙ্কা।
আর এই আশঙ্কা দূর করতে উঠেপড়ে লেগেছে বিজেপিও। আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বরাকের বিজেপি নেতৃত্ব। আজ শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ কবীন্দ্র পুরকায়স্থের নেতৃত্বে বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর সঙ্গে দেখা করে এই সড়ক-জট ছাড়াতে তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগী হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী অর্থ বর্ষেই যাতে ওই ৩১ কিলোমিটার রাস্তার জটিলতা কাটিয়ে কাজ শুরু করা যায় তার জন্য গডকড়ী তাঁর মন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy