পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের দরজা খুলতে গিয়ে চিনের দেং জিয়াও পিঙের শরণ নিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বলেছিলেন, বিড়ালের রং সাদা না কালো, বিচার করে লাভ নেই। যত ক্ষণ সে ইঁদুর ধরতে পারছে! এক দশক পরে অর্থনৈতিক চিন্তাভাবনায় ভিন্ন ধারা আনতে হার্ভার্ডের দ্বারস্থ হয়ে সিপিএমের ঘরে ফের বিতর্কের ঝ়়ড় ঘনিয়ে তুললেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন!
এলডিএফ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে কেরলে মুখ্যমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিষয় ও অর্থনীতির অধ্যাপক গীতা গোপীনাথকে। কৃতী গবেষক গীতা নব্য উদারনীতির প্রবক্তা হিসাবেই অর্থনীতির জগতে পরিচিত। এমন এক জন ব্যক্তিত্বকে একটি বাম মোর্চার সরকার কেন অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসাবে ডেকে আনবে, তা নিয়ে গোড়াতেই প্রশ্ন তুলেছিলেন সিপিএমের একাংশ। এ বার এই নিয়ে প্রশ্ন তুলে দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে চিঠি পাঠালেন সিপিএমের প্রবীণ নেতা এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভি এস অচ্যুতানন্দন। দলের মতাদর্শগত অবস্থানের পরিপন্থী এই সিদ্ধান্ত রদ করার আর্জি জানিয়ে পলিটব্যুরোর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ভি এস।
ভি এসের যুক্তি, নরেন্দ্র মোদীর সরকার যে আর্থিক নীতি নিয়ে চলছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য ২ সেপ্টেম্বর সাধারণ ধর্মঘট ডেকেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। বামেরা সেই ধর্মঘট সফল করার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাচ্ছে। অথচ সেই একই ধারার অর্থনীতির প্রবল প্রচারক ও সমর্থক এক জনকে বিদেশ থেকে উপদেষ্টা করে নিয়ে আসতে চাইছে বামেদেরই পরিচালিত একটি রাজ্য সরকার! সিপিএম সূত্রের খবর, গীতার নিয়োগের সিদ্ধান্তকে ‘রহস্যজনক’ বলে চিঠিতে প্রশ্ন তুলেছেন দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ভি এস। সিপিএমে বিজয়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভি এস বরাবরই সংখ্যালঘু থেকেছেন। কিন্তু এই ক্ষেত্রে ভি এসের আপত্তির সমর্থকের সংখ্যা দলে বেশ ভারী! তার মধ্যে আছেন মার্ক্সবাদী অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনাইকও। যিনি সরাসরিই বলেছেন, নয়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন কৌশলের নামে যে ফাঁদ পাতা আছে, তাতে বাম সরকারের পা দেওয়া উচিত নয়!
বিতর্ক মাথা চাড়া দেওয়ার পরে সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গা বাঁচিয়েই চলতে চাইছিলেন। কিন্তু ভি এসের চিঠি তাঁদেরও রণক্ষেত্রে টেনে আনল! দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এই বিষয়ে কেরলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলবেন বলে ঠিক করেছেন। তবে দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের বক্তব্য, ‘‘এই রকম একটা স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত দলে ভাল করে আলোচনা করে নেওয়া উচিত ছিল।’’
এমনিতেই কট্টরপন্থী বলে পরিচিত কেরল সিপিএমের বড় অংশের আশঙ্কা, উদারনীতির প্রবক্তার পরামর্শে চলতে গিয়ে দক্ষিণী রাজ্যে বাম সরকারেরও সেই পরিণতি না হয়, যা পশ্চিমবঙ্গে বুদ্ধ-জমানায় সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের জেরে হয়েছিল! স্বয়ং গীতা অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন, হার্ভার্ড ছেড়ে তিরুঅনন্তপুরমে এসে রাজ্যের আর্থিক নীতির রাশ নেওয়ার ইচ্ছা তাঁর নেই। অবৈতনিক উপদেষ্টা হিসাবে কেরলের নানা সমস্যার সুরাহার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy