Advertisement
E-Paper

কেরলে ওঁদের ত্রাতা হ্যাম রেডিয়ো

দুর্যোগ মাথায় নিয়েই মুর্শিদাবাদের শিবনগরের ওই ছয় যুবককে শনিবার কেরলের এর্নাকুলমের নারায়ণবেরির একটি নির্মীয়মাণ বাড়ি থেকে উদ্ধার করলেন হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের সদস্যেরা

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৮ ০৪:১৮
তৎপর: হ্যাম রেডিয়ো ক্লাব। —নিজস্ব চিত্র।

তৎপর: হ্যাম রেডিয়ো ক্লাব। —নিজস্ব চিত্র।

চার দিন ধরে একটি মাত্র ত্রিপলে মাথা গুঁজে বসেছিলেন ওঁরা ছ’জন। খেয়েছেন শুধু বৃষ্টির জল। বানভাসি কেরলে তাঁরা কোথায় আছেন, জানতেন না কেউ। মোবাইলও বন্ধ। খোঁজ দিল হ্যাম রেডিয়ো।

দুর্যোগ মাথায় নিয়েই মুর্শিদাবাদের শিবনগরের ওই ছয় যুবককে শনিবার কেরলের এর্নাকুলমের নারায়ণবেরির একটি নির্মীয়মাণ বাড়ি থেকে উদ্ধার করলেন হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের সদস্যেরা। মনিরুজ্জামান, সামিউল আলম, মহাবুল ইসলাম, সেলিম মিয়াঁ, মহম্মদ হাজিবুর মিয়াঁ এব‌ং হাসানুজ্জামান মিয়াঁ নামে ওই ছ’জন নারায়ণবেরিতে ওই বাড়ি তৈরির কাজেই গিয়েই আটকে পড়েন। রবিবার জমা জল ঠেলে ২২ কিলোমিটার হেঁটে তাঁরা এর্নাকুলম স্টেশন থেকে হাওড়াগামী বিশেষ ট্রেনে উঠলেন।

মনিরুজ্জামান জানান, প্রবল বৃষ্টির জন্য সপ্তাহখানেক আগে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। নির্মীয়মাণ বাড়িটিতেই তাঁরা থাকতেন। তার দিন দুয়েক পরে বাড়িটির একতলা জলের তলায় চলে যায়। তাঁরা দোতলায় আশ্রয় নেন। বিদ্যুৎ এমনিতেই ছিল না। ফলে, মোবাইলে ‘চার্জ’ না-থাকায় কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। সঙ্গের খাবারও ফুরিয়ে যায়। তৃতীয় দিন রাতে দোতলায় জল উঠতে শুরু করে। তাঁরা ত্রিপল নিয়ে বাড়ির ছাদে আশ্রয় নেন। এ দিকে মনিরুজ্জামানদের কোনও খোঁজ না-পেয়ে তাঁদের বাড়ির লোকেরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মাধ্যমে সেই তথ্য আসে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব’-এর কাছে। ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস জানান, কেরলে বেঙ্গালুরুর ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব হ্যাম’ এবং হায়দরাবাদের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যামেচার রেডিয়ো’ একযোগে কাজ করছে। ডোমকলের ওই যুবকদের কথা ওই দুই রেডিয়ো ক্লাবকে জানানো হয়। মনিরুজ্জামানের মোবাইল নম্বরও জানানো হয়। কিন্তু মোবাইল বন্ধ থাকায় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

তা হলে কী ভাবে মিলল খোঁজ? ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব হ্যাম’-এর কর্তা শঙ্কর সত্য পাল জানান, আটকে পড়া ওই যুবকদের উদ্ধার করতে মোবাইলের শেষ টাওয়ার লোকেশন উদ্ধার করা হয়। তার অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ ধরে উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়। শনিবার বিকেলে তাঁরাই মনিরুজ্জামানদের উদ্ধার করে স্থানীয় একটি মসজিদে এনে তোলেন। একই দিনে হ্যাম রেডিয়োর মাধ্যমে জলপাইগুড়ির তিন যুবকেরও খোঁজ মিলেছে। তাঁরা একটি ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন। তাঁদের বাড়িতে সে খবর জানানো হয়েছে।

কী ভাবে নিখোঁজদের সন্ধান চালাচ্ছে হ্যাম রেডিয়ো? বিপর্যয়ের সময়ে হ্যাম স্বেচ্ছাসেবীরা বিধ্বস্ত এলাকায় ক্যাম্প করে অ্যান্টেনার সাহায্যে ছোট্ট রেডিয়ো স্টেশন তৈরি করেন। বিশেষ ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে যোগাযোগ রাখেন। সাধারণত হায়দরাবাদে একটি কন্ট্রোল-রুম খোলা হয়। বিভিন্ন রাজ্যের রেডিয়ো ক্লাবগুলি নিখোঁজদের তথ্য কন্ট্রোল রুমে জানায়। সেই তথ্য নিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদের সঙ্গে যান হ্যাম সদস্যেরা। শঙ্করবাবু জানান, এ ক্ষেত্রেও একই ভাবে কাজ হচ্ছে।

Flood Kerala Rescue Ham Radio
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy