নগদহীন লেনদেনে উৎসাহ দিতে কেন্দ্রের পথে এগোল অসম সরকার।
পেট্রোল, ডিজেলে ছাড়-সহ ১৮ দফা সুযোগ-সুবিধার কথা ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তাঁর দাবি— সম্ভবত অসমই ভারতের প্রথম রাজ্য, যারা ডিজিটাল লেনদেনকে উৎসাহ দিতে ক্ষতির আশঙ্কা নিয়ে এই পদক্ষেপ করল।
সোমবার অর্থমন্ত্রী জানান, পেট্রোল পাম্পে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে টাকা দিলে ০.৭৫ শতাংশ ছাড়ের কথা জানিয়েছে কেন্দ্র। রাজ্যও সমপরিমাণ ছাড় দেবে। ১ জানুয়ারি থেকে অসমে পেট্রোল-ডিজেল নিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে দাম মেটালে মিলবে মোট দেড় শতাংশ ছাড়।
রাজ্যের যে কোনও হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজে পাঁচশো টাকার বেশি ডিজিটাল মাধ্যমে দিলে মিলবে ১০ শতাংশ ছাড়। সম্পত্তি বা ব্যবসার লাইসেন্সের কর ওই পদ্ধতিতে দেওয়া হলেও ১০ শতাংশ ছাড় মিলবে। যে মৌজাদাররা ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ৭৫ শতাংশ ভূমি রাজস্ব অনলাইনে সংগ্রহ করবেন, তাঁদের মধ্যে লটারি করে ১০ জনকে ২৫ হাজার টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হবে। কমিশনারয়েট অফ ট্যাক্সেস-এর অধীনে ১০ হাজার টাকার বেশি সব কর শুধু অনলাইনে নেওয়া হবে।
অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, যে সব গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ৭৫ শতাংশ গ্রাহক ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চের মধ্যে অনলাইনে অন্তত দু’বার লেনদেন করবেন— সেই সব শাখা মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে শংসাপত্র ও ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার পাবে। যে সব গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০০ শতাংশ লেনদেন ৩১ মার্চের মধ্যে অনলাইন হয়ে যাবে, তাদের মধ্যেও লটারি করে ১০টি পঞ্চায়েতকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হবে। যে সব কৃষক জানুয়ারি থেকে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে সব বীজ ও সার অনলাইনে কিনবেন, তাঁদের পাঁচ হাজার টাকা ও শংসাপত্র দেবে সরকার। ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুনের মধ্যে যে সব গ্রাম পঞ্চায়েত, সমবায় সমিতি ১০০ শতাংশ লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যমে করবে, তাদের মধ্যে দশটি গ্রামসভাকে ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। একই প্রস্তাব রয়েছে সঠিক মূল্যের দোকানগুলির জন্যও।
হিমন্ত ঘোষণা করেন, চা বাগানের যে সব শ্রমিকের বেতন ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চের মধ্যে অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করা হবে, তাঁদের রাজ্য সরকার ১০০ টাকা করে উৎসাহভাতা দেবে। হিমন্ত জানান, রাজ্যে নথিভুক্ত সাত লক্ষ ৮০ হাজার চা শ্রমিকের মধ্যে ৬ লক্ষ শ্রমিকের অ্যাকাউন্ট ইতিমধ্যেই খোলা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, যে সব প্রেক্ষাগৃহের মালিক অনলাইনে টিকিট বেচবেন, তাঁরা টিকিটপ্রতি ৫ টাকা পাবেন। কলেজে ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে সব লেনদেন অনলাইনে করা হলে, ১০টি কলেজকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে।
জেলাশাসকরা উদ্যোগ নিয়ে যত জনকে ডিজিটাল লেনদেনের আওতায় নিয়ে আসবেন, নীতি আয়োগের নির্দেশ অনুযায়ী, সে সব জেলাশাসককে জনপ্রতি ৫ টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হবে। হিমন্ত ঘোষণা করেন, রাজ্যও ওই সব জেলাশাসকদের জনপ্রতি ১০ টাকা করে দেবে। মন্ত্রী জানান, এই প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেওয়া জেলাশাসকদের মুখ্যমন্ত্রী ‘এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হবে। মিলবে ৫০ হাজার টাকার পুরস্কার।
হিমন্ত জানান, রাজ্যে পিওএস, এটিএম বা ডিজিটাল লেনদেনের জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনও যন্ত্রের জন্য প্রবেশকর লাগবে না। যে সব এলাকায় ইন্টারনেট সমস্যা রয়েছে— তা ঠিক করতে সংশ্লিষ্ট মোবাইল পরিষেবা সংস্থাকে জানানো হবে। বিদ্যুৎ বা অন্য রাজ্য সরকারি পরিষেবায় অনলাইনে টাকা মেটানোর ক্ষেত্রে সার্ভিস-চার্জ নেওয়া হয়। হিমন্ত জানান, তা তুলে দিয়ে উল্টে ছাড় দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। অনলাইন সার্ভিস চার্জ ও নিরক্ষরদের এটিএম কার্ড ও চেক দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিয়মনীতি শিথিল করার জন্যও ব্যাঙ্কগুলিকে আবেদন জানানো হবে।
নোট-বাতিলের জেরে রাজ্য সরকারের ক্ষতি হবে বলে বিভিন্ন মহল আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। কিন্তু হিমন্ত দাবি করেন, এ মাসে কেন্দ্রের থেকে বেশি টাকা পেয়েছে অসম। প্রতি মাসের ১ তারিখ রাজ্যের করের অংশ বাবদ ১ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা করে দিত কেন্দ্র। ১ ডিসেম্বর তা বেড়ে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা হয়েছে। তিনি জানান, ৮ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে কর আদায়ের পরিমাণও বেড়েছে ১০ শতাংশ।
কিন্তু নগদ টাকার লেনদেন কমাতে যে ১৮ দফা পদক্ষেপ করেছে রাজ্য, তার ফলে কয়েকশো কোটির লোকসানও হতে পারে। তা নিয়ে হিমন্ত বলেন, ‘‘সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে পেট্রোল-ডিজেলে অতিরিক্ত ভর্তুকি দেওয়ার ক্ষেত্রে। আদতে নতুন প্রস্তাবগুলিতে উৎসাহিত হয়ে মানুষ যত অনলাইন লেনদেন করবেন, ততই সরকারের ক্ষতি হবে। কিন্তু ভবিষ্যৎ লাভের দিকে তাকিয়ে এই প্রাথমিক ক্ষতি মেনে নিতে আমরা তৈরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy