হিন্দুরা তাই ছাগলের মাংস ছাড়ুন। চন্দ্রকুমার বসুর টুইটে বিতর্ক। তথাগত রায়ের সঙ্গে বাগযুদ্ধ।
গোরক্ষার পর এ বার ছাগল-রক্ষা! গো-মাতার পর ছাগ-মাতা!
হিন্দুরা ছাগলের মাংস খাওয়া বন্ধ করুন। এমনই টুইট করে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করলেন নেতাজির প্রপৌত্র চন্দ্র কুমার বসু। বিতর্ক ঠেকাতে আবার আসরে নামলেন প্রাক্তন বিজেপি নেতা তথাগত রায়। তাঁর পাল্টা টুইট, ‘‘ছাগল নয়, গরুই আমাদের মাতা।’’ আর এই নিয়ে একই রাজনৈতিক ভাবধারায় বিশ্বাসী দু’জনের মধ্যে রীতিমতো নাতিদীর্ঘ টুইটযুদ্ধ। টুইটারিয়ানদের মত, হাস্যকর এক এপিসোডের জন্ম দিলেন ত্রিপুরার রাজ্যপাল আর পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সহ-সভাপতি।
অলওয়ারে রাখবর খান হত্যার পর ফের গোরক্ষা বিতর্ক সামনে চলে এসেছিল। সেই সূত্র ধরেই গত ২৬ জুলাই একটি টুইট করেন চন্দ্র কুমার বসু। চন্দ্রবাবু নিজে বিজেপি নেতা। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপরীতে বিজেপির প্রার্থী হয়েও ভোটে লড়েছেন। এমনকি আগামী বছরের লোকসভা ভোটেও তাঁকে প্রার্থী করার কথা ভাবছে বিজেপি। এ হেন চন্দ্রবাবু গো-রক্ষার নামে গণপিটুনির সমালোচনা করতে গিয়ে মহাত্মা গাঁধীর প্রসঙ্গ টেনে লেখেন, ‘‘কলকাতার ১ উডবার্ন পার্ক রোডে আমার প্রপিতামহ শরৎচন্দ্র বসুর বাড়িতে গাঁধীজি মাঝেমধ্যেই আসতেন। তিনি ছাগলের দুধ খেতে চাইতেন। সেই কারণেই দু’টি ছাগল কেনা হয়েছিল। দুধ খেতেন বলে হিন্দুদের রক্ষাকর্তা গাঁধীজি ছাগলকে মাতা রূপে দেখতেন। হিন্দুরা ছাগলের মাংস খাওয়া বন্ধ করুন।’’
কিন্তু এতদিন তো ছিল ‘গো-মাতা’। ছাগ-মাতা আবার কোথা থেকে উদয় হল? কেনই বা হবে? কয়েক মিনিটের মধ্যেই বাক্য-বাণ নিয়ে ‘যুদ্ধং দেহি’ মেজাজে ময়দানে নেমে পড়লেন প্রাক্তন বিজেপি নেতা বর্তমানে ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায়। তিনি পাল্টা লিখলেন, ‘‘না গাঁধীজি, না আপনার প্রপিতামহ, কেউই ছাগলকে ‘মাতা’ বলেননি। ওটা আপনার ব্যাখ্যা। তিনি যে হিন্দুত্বের রক্ষাকর্তা, গাঁধীজি নিজেও সেটা কখনও বলেননি। আমরা হিন্দুরা গরুকেই মাতা বিবেচনা করি, ছাগলকে নয়। দয়া করে এই ধরনের মতবাদ ছড়াবেন না।’’
আরও পড়ুন: রাহুলের টুইট বাণে থই পাচ্ছে না বিজেপি
সেই সূত্রপাত। তারপর থেকেই টুইটের রণভূমিতে বসু-রায়ের মহাকাব্যিক বাক্যযুদ্ধ। কেউ ‘পাশুপত’ ছুড়ছেন, তো কেউ আবার পরক্ষণেই ক্ষুরধার করছেন ‘ব্রহ্মাস্ত্র’। এক জনের অস্ত্রে ঘায়েল অন্যজন পরক্ষণেই শান দিচ্ছেন মগজাস্ত্রে। তার পরই শেল ধেয়ে আসছে পড়ছে প্রতিপক্ষের দিকে।
চন্দ্রবাবু বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, ‘‘এটা ব্যক্তিগত মত। বিজেপি শাসিত রাজ্যে গরুকেন্দ্রিক রাজনীতি এবং গোরক্ষায় গণপিটুনির ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। এটা উদ্বেগের এবং বিরক্তিকর।’’ বলেছেন, ‘‘গাঁধীজি আমাদের বাড়িতে থাকার সময় বারবার ছাগলের দুধ খেতে চাইছেন। সুতরাং এটা ধরেই নেওয়া যায়, তিনি ছাগলকে ‘মাতা’ হিসেবেই মনে করতেন। বলার প্রয়োজন পড়ে না।’’
‘‘তাতে কী হল? এতেই কি প্রমাণ হয়, ছাগল ‘মাতা’? প্রশ্নবাণ ছুড়ে তথাগতবাবুর পাল্টা, ‘‘গাঁধীজির প্রিয় শিষ্য জওহরলাল নেহরু নিজে এবং তাঁর সমাজ কাশ্মীরি পণ্ডিতরা মাংস খেতেন।’’
Neither Gandhiji nor your grandfather ever said goats were Mata-that's your conclusion. Nor did Gandhiji (or anyone else) ever proclaim that he was the protector of Hindus. We Hindus regard the cow as our mother,not the goat.
— Tathagata Roy (@tathagata2) July 26, 2018
Please don't peddle such rot. https://t.co/xfLb3fDSxM
আরও পড়ুন: ‘নিন্দুকদের ধন্যবাদ’, এ ভাবেই জবাব সেই মাছ বিক্রেতা ছাত্রীর
সুদীর্ঘ এই টুইট-যুদ্ধ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছেন নেটিজেনরা। সরাসরি অবশ্য ‘যুদ্ধক্ষেত্রে’ তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি খুব একটা ছিল না। আর সঞ্জয়ের চোখে কুরুক্ষেত্র দেখে ধৃতরাষ্ট্রের মতো উপলব্ধি হয়েছে নেটবিহীনদের। তবে সব পক্ষেরই প্রশ্ন, সত্যিই কি এটা কোনও সুস্থ বিতর্কের বিষয়। নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়িতেই আখেরে কি দু’জনেরই জামায় দাগ লাগল না!