Advertisement
E-Paper

গ্রামীণ ওড়িশায় পদ্মের বিপুল উত্থান, নবীনের ঘাড়ে নিশ্বাস বিজেপির

নোটবন্দির পর প্রথম গ্রামীণ নির্বাচন। আর সে নির্বাচনে বিস্ময়কর সাফল্য বিজেপির। ওড়িশার পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেসকে বহু পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল বিজেপি। নিশ্বাস ফেলতে শুরু করল শাসক দল বিজেডি’র ঘাড়েও। নবীন পট্টনায়কের দল কোনও ক্রমে প্রথম স্থানটি ধরে রেখেছে ঠিকই।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১৬:০৭
নোট বাতিলের প্রভাব লাভজনকই হল বিজেপির পক্ষে, ওড়িশার পঞ্চায়েত ভোটের ফল অন্তত তাই বলছে। (প্রতীকী ছবি)

নোট বাতিলের প্রভাব লাভজনকই হল বিজেপির পক্ষে, ওড়িশার পঞ্চায়েত ভোটের ফল অন্তত তাই বলছে। (প্রতীকী ছবি)

নোটবন্দির পর প্রথম গ্রামীণ নির্বাচন। আর সে নির্বাচনে বিস্ময়কর সাফল্য বিজেপির। ওড়িশার পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেসকে বহু পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল বিজেপি। নিশ্বাস ফেলতে শুরু করল শাসক দল বিজেডি’র ঘাড়েও। নবীন পট্টনায়কের দল কোনও ক্রমে প্রথম স্থানটি ধরে রেখেছে ঠিকই। কিন্তু দীর্ঘ ১৭ বছরের শাসন কালে বিজেডি এত বড় ধাক্কা কখনও খায়নি। কংগ্রেসের দাবি, অবিশ্বাস্য টাকা ছড়িয়ে ভোট কব্জা করেছে বিজেপি। তবে সে সব অভিযোগে বিজেপি আমল দিতে নারাজ। ওড়িশায় নবীন পট্টনায়কের শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে, সব বিজেপি নেতার মুখে এখন এই একই বুলি।

৩০টি জেলা পরিষদের মোট ৮৫১টি আসনে ভোট হয়েছে। ৮৫০টির ফলই ঘোষিত। শাসক বিজেডি জয়ী হয়েছে ৪৫৯টি আসনে। বিজেপি জিতেছে ৩০৭টি। আর রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল তৃতীয় স্থানে নেমে ৬৭টি আসনে জয়ী হয়েছে। অন্যান্যরা জিতেছে ১৭টি আসনে।

এই ফল দেখলে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, বিজেডি-র সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে বিজেপির। কিন্তু পাঁচ বছর আগের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলকে পাশাপাশি রাখলে আরও স্পষ্ট হচ্ছে, নিজেদের পালে হাওয়া কতখানি ঘুরিয়ে নিয়েছে গেরুয়া শিবির। ২০১২-র নির্বাচনে বিজেডি পেয়েছিল ৬৫১টি আসন। কংগ্রেস পেয়েছিল ১২৮টি। তৃতীয় স্থানে থাকা বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৩৬টি আসন। অন্যরাও ৩৬টি। সেই অবস্থানের সঙ্গে আজকের ফলাফলের ফারাক যে আকাশ-পাতাল, তা ওড়িশার শাসক দলের নেতারাও আড়ালে মেনে নিচ্ছেন।

৩০টি জেলা পরিষদ বোর্ডের মধ্যে গত বার একটিও ছিল না বিজেপির হাতে। ২৮টি ছিল বিজেডির হাতে। ২টি বোর্ড দখল করেছিল কংগ্রেস। এ বার কংগ্রেসের দখলে ১টি বোর্ড। বিজেডি ২৮ থেকে নেমে ১৬। আর বিজেপি ০ থেকে বেড়ে ৮।

উচ্ছ্বসিত বিজেপি

বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক তথা ওড়িশার দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক অরুণ সিংহের দাবি, আরও ভাল ফল হত বিজেপি’র। কিন্তু ভোট ঠিক ভাবে হতে দেয়নি বিজেডি। ব্যাপক হিংসার আশ্রয় নিয়েছে তারা। খোদ মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের নির্বাচনী এলাকাতেই বিজেপি কর্মীকে খুন হতে হয়েছে বলে অরুণ সিংহের অভিযোগ।

কিন্তু বিজেপি’র এই বিপুল উত্থানের নেপথ্যে কী রয়েছে? ওড়িশা বিজেপি’র নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা আর নোট বাতিলের প্রভাব। নোট বাতিলের জেরে দেশ জুড়ে নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা বিপুল ভাবে কমেছে বলে কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন বিরোধী দল দাবি করছিল। কিন্তু নোট বাতিল হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পৌর নির্বাচনগুলিতে বিজেপিকে বড় সাফল্য পেতে দেখা গিয়েছে। এই ফল দেখে বিরোধী দলগুলি বলেছিল, শহরাঞ্চলের মানুষ নোট বাতিলকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু যে বিস্তীর্ণ গ্রামীণ ভারতে ব্যাঙ্কিং পরিকাঠামো অত্যন্ত অপ্রতুল, সেখানকার মানুষ নোট বাতিলের জেরে খুব সমস্যায় পড়েছেন। তাই গ্রামীণ ভারতে বিজেপি বড় ধাক্কা খেতে চলেছে। কিন্তু নোট বাতিলের পর প্রথম গ্রামীণ নির্বাচনই দেখিয়ে দিল, বিরোধীদের সে দাবিও ভুল। গ্রামীণ ওড়িশায় বিপুল উত্থান ঘটেছে বিজেপির।

আরও পড়ুন: বৃহন্মুম্বই-ঠাণেতে এগিয়ে শিবসেনা, পুণে-নাগপুর-শোলাপুরে বিজেপি

কংগ্রেস কী বলছে?

কংগ্রেসও কিন্তু ওড়িশার এই ভরাডুবিকে নোটবন্দির ফল বলেই দাবি করছে। তবে একটু অন্য ভাবে। এআইসিসি সচিব তথা ওড়িশার দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক শুভঙ্কর সরকার বললেন, ‘‘ওড়িশায় কোনও নির্বাচন হয়নি। বিপুল টাকার খেলা হয়েছে। নোট বাতিলের জেরে অন্যান্য দল নোট সঙ্কটে ছিল। আর বিজেপি নিজেদের কালো টাকা আগে থেকে গুছিয়ে রেখেছিল। আমরা যখন নগদের অভাবে ভুগছি, তখন ওরা প্রত্যেক জেলা পরিষদ আসনে অন্তত ২০ লক্ষ টাকা করে খরচ করেছে।’’ শুভঙ্করবাবুর কথায়, ‘‘কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কখনওই পঞ্চায়েত বা পুর নির্বাচনের জন্য টাকা দেয় না। ওটা রাজ্য নেতৃত্বকেই জোগাড় করতে হয়। তুমুল নোট সঙ্কটে সে টাকা জোগাড় করা আমাদের পক্ষে অসুবিধাজনক ছিল। প্রার্থীদের সাকুল্যে ২০ হাজার টাকা করেও দিতে পারিনি।’’ কিন্তু ওড়িশায় এত দিন তৃতীয় শক্তি হিসেবে পরিচিত ছিল যে বিজেপি, তারাই বা এত টাকা জোগাড় করল কী করে? শুভঙ্করের জবাব, ‘‘ধর্মেন্দ্র প্রধানই সব করেছেন। ওড়িশার বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের কাছে টাকার কোনও অভাব নেই। তিনিই বিপুল টাকা জুগিয়েছেন। বিজেপি গ্রামে-গঞ্জে গরিব মানুষের মধ্যে সেই টাকা আর মদ বিলিয়ে ভোট কব্জা করেছে।’’ এআইসিসি সচিব আরও জানিয়েছেন, সনিয়া গাঁধী এবং রাহুল গাঁধীকে অনুরোধ করা সত্ত্বেও তাঁরা ওড়িশায় প্রচারে যেতে রাজি হননি। খারাপ ফলের অন্যতম কারণ সেটিও।

ধর্মেন্দ্র প্রধান সম্পর্কে যে গুরুতর অভিযোগ কংগ্রেস তুলেছে, সে সম্পর্কে বিজেপির তরফ থেকে অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। এ বিষয়ে জানার জন্য তাঁর মন্ত্রকে এবং মিডিয়া সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু বিদেশ সফররত পেট্রোলিয়াম মন্ত্রীর কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

Odisha Panchayet Polls BJP BJD Congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy