সরকারি পরিসংখ্যানও বলছে, কোভিডের আগের বছরে এপ্রিল-জুনে জিডিপি ছিল ৩৫.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা। লকডাউনের ধাক্কায় ২০২০-২১ অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে তা ২৬.৯৫ লক্ষ কোটিতে নেমে যায়। এ বছরের এপ্রিল-জুনে তা বেড়ে ৩২.৩৮ লক্ষ কোটি টাকা হলেও, এখনও কোভিডের আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা কম। সহজ ভাষায়, কোভিডের আগে জিডিপি ১০০ টাকা থেকে থাকলে, লকডাউনের সময়ে তা কমে ৭৫.৬ টাকা হয়েছিল। এ বার তা ফের বেড়ে ৯০.৭ টাকা হল। কিন্তু এখনও ১০০ টাকায় পৌঁছতে পারল না।
তাতে অবশ্য সরকারি মহল ও বিজেপির তরফ থেকে প্রচারের ঢাক-ঢোল পেটানো বন্ধ হয়নি। ২০% বৃদ্ধি আঁচ করে আগেভাগেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। এ বার বৃদ্ধির হার সামনে আসতেই সরকারের ‘মাই-গভ-ইন্ডিয়া’ মঞ্চ থেকে ঘোষণা, ‘ইন্ডিয়া বাউন্সেস ব্যাক’। বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয় টুইট করে একে ‘ম্যাসিভ’ আখ্যা দিয়ে জানান, ভারত বৃদ্ধির হারে রেকর্ড করল। বিজেপি নেতারা এ জন্য নরেন্দ্র মোদীর আর্থিক নীতিকেই কৃতিত্ব দিয়েছেন।
মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যনও বলেন, দেশের অর্থনীতির ভিত যথেষ্ট মজবুত। সরকারের পরিকাঠামোয় বিপুল খরচ ও কাঠামোগত সংস্কারের দৌলতে ভারত আগামী দিনে আরও মজবুত আর্থিক প্রগতির দিকে এগোবে। তাঁর যুক্তি, গত বছরই তিনি বলেছিলেন, যে গতিতে অর্থনীতি তলানিতে নেমেছে, সেই গতিতেই আবার উঠে আসবে। কারণ, লকডাউনে আর্থিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় জিডিপি ধাক্কা খেয়েছিল। অর্থনীতির কোনও সমস্যা ছিল না। তাঁর দাবি, আগামী বছরের মধ্যেই জিডিপি কোভিডের আগের স্তরে ফিরে যাবে। নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষ রাজীব কুমার এবং সিইও অমিতাভ কান্তেরও ভবিষ্যদ্বাণী, আগামী দিনে বৃদ্ধির হারে আরও গতি আসবে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের আবার দাবি, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়ে আস্থা জোগাবে।
অর্থনীতিবিদেরা সকলে অবশ্য এত খানি আশাবাদী নন। প্রাক্তন মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ প্রণব সেনের মতে, সরকার পরিকাঠামোয় বিপুল খরচের কথা বললেও, খাতায়-কলমে তা দেখা যাচ্ছে না। এ দিন সরকারি আয়-ব্যয়ের যে হিসেব প্রকাশ করা হয়েছে, তা অনুযায়ী, এপ্রিল-জুনে রাজকোষ ঘাটতি কোভিডের আগের বছরগুলির তুলনায় বরং অনেক কম। সরকারি আয় বেড়েছে। কিন্তু খরচ সেই তুলনায় খুবই কম হয়েছে। জিডিপি-র তুলনায় পরিকাঠামোয় সরকারি খরচ, সরকারি লগ্নি গত বছরের তুলনায় তা-ও সামান্য বেড়েছে। কিন্তু সরকারি কেনাকাটায় খরচ কমেছে।
পরিসংখ্যান মন্ত্রকের তথ্য বলছে, একমাত্র কৃষি বাদে বাকি সব ক্ষেত্রে কোভিডের আগের বছরের তুলনায় এ বছরের এপ্রিল-জুনের বৃদ্ধি কম। কল-কারখানা বা উৎপাদন শিল্প, হোটেল, পরিবহণ, আবাসন সবখানেই গত বছরের লকডাউনের সময়ের তুলনায় ছবি অনেক ভাল। কিন্তু কোভিডের আগের বছরের তুলনায় ছবি এখনও আশাব্যঞ্জক নয়। একই ভাবে, লগ্নির ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে, তা কোভিডের আগের স্তরে পৌঁছয়নি। বাজারে কেনাকাটা বা বেসরকারি খরচও লকডাউনের সময়ের তুলনায় প্রায় ১৯% বেড়েছে। কিন্তু মনে রাখা ভাল, লকডাউনের সময়ে তা ২৬% কমে গিয়েছিল। সব মিলিয়ে, ওই খরচের মাত্রা এখনও কোভিডের আগের বছরের তুলনায় ১২% কম।
সরকারের যুক্তি, গত বছরের মতো এ বারও এপ্রিল-মে মাসে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ ধাক্কা দিয়েছিল। কিন্তু বিরোধীরা বলছেন, দ্বিতীয় ঢেউ ধাক্কা দিলেও দেশ জুড়ে লকডাউন হয়নি। প্রায় সবই চালু ছিল। তা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে কোভিডের আগের জায়গায় নিয়ে যেতে না পারাকে মোদী সরকারের ব্যর্থতা বলে দাবি করছেন তাঁরা।