Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অসহিষ্ণু শুধু কয়েক জন, দাবি তসলিমার

আগে বলেছিলেন, ভারত সহিষ্ণুই। গত বছর অসহিষ্ণুতা বিতর্কে যখন গোটা দেশ উত্তপ্ত, বিষয়টি নিয়ে সরব হয়ে বিপাকে শাহরুখ খান-আমির খান, তখনও কিন্তু সমালোচনায় সুর শোনা যায়নি তসলিমা নাসরিনের গলায়। উল্টে টুইটারে লিখেছিলেন, ‘ভারত সহিষ্ণু দেশ’।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৩
Share: Save:

আগে বলেছিলেন, ভারত সহিষ্ণুই। গত বছর অসহিষ্ণুতা বিতর্কে যখন গোটা দেশ উত্তপ্ত, বিষয়টি নিয়ে সরব হয়ে বিপাকে শাহরুখ খান-আমির খান, তখনও কিন্তু সমালোচনায় সুর শোনা যায়নি তসলিমা নাসরিনের গলায়। উল্টে টুইটারে লিখেছিলেন, ‘ভারত সহিষ্ণু দেশ’। দিল্লি সাহিত্য উৎসবে গত কাল হঠাৎই কিছুটা অন্য স্বর বিতর্কিত এই লেখিকার গলায়। এ বার বললেন, ‘‘ভারত সহিষ্ণুই। তবে সহিষ্ণু নন শুধু দেশের কয়েক জন।’’ তাঁর আরও সংযোজন, এ দেশে হিন্দুদের ধর্মীয় গোঁড়ামি নিয়েই যত আলোচনা। তসলিমার দাবি, অসহিষ্ণুতা বির্তকে একই ভাবে নিশানা করা উচিত মুসলিম ধর্মান্ধতাকেও।

সাহিত্য উৎসবে যোগ দিতে রাজধানীতে এসেছেন বাংলাদেশের নির্বাসিত এই লেখিকা। শনিবার সেখানেই ‘অসহিষ্ণুতা’ নিয়ে এক বিতর্কসভায় তসলিমা বলেন, ‘‘ভারতে অসহিষ্ণু শুধু কিছু মানুষ। সব দেশে, সব সমাজেই এ রকম কয়েক জন থাকে।’’ তবে হিন্দু নয়, তাঁর আক্রমণের নিশানায় ছিল মুসলিম ধর্মীয় গোঁড়ামি। তসলিমার মতে, এখানে মুসলিম মৌলবাদের বিরুদ্ধে যতটা সুর চড়ানো দরকার, আদৌ তা হয় না।

চিকিৎসক-লেখিকার দাওয়াই, বিরুদ্ধ স্বর শুনলেই কণ্ঠরোধ করার এই রোগ সারবে শুধু বাক্‌স্বাধীনতা দিলে। ইতিহাস ঘেঁটে উদাহরণও দিতে ভোলেননি তসলিমা নাসরিন। তাঁর কথায়, ‘‘রামমোহন রায় যখন সতীদাহ প্রথা রদ করেন, অনেকেই আঘাত পেয়েছিলেন। নারী শিক্ষায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যখন নতুন আলো দেখালেন, আপত্তি কম ওঠেনি। ধর্মান্ধদের গোঁড়ামি নিয়ে প্রশ্ন তুললে তারা আঘাত পাবে, এই ভেবে কি সকলে মুখ বন্ধ করে রাখবে নাকি?’’

বাক্‌স্বাধীনতার জন্য তাঁর লড়াইটা অবশ্য শুরু হয়েছিল বহু বছর আগেই। তসলিমার উপন্যাস ‘লজ্জা’ ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছে, এই অভিযোগে ১৯৯৪ সালে নিজের দেশ থেকে বিতাড়িত হন তিনি। প্রাণনাশ নিয়ে ধর্মীয় মৌলবাদীদের ফতোয়াও সঙ্গী তার পর থেকেই। তাঁর বই ‘দ্বিখণ্ডিত’ নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি পড়শি দেশ ভারতেও। আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারে, এই যুক্তি দেখিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ২০০৩-এ বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তৎকালীন বাম সরকার। বাংলাদেশের পর কলকাতা তাঁর প্রিয় শহর— বহু বারই নিজের মুখে সে কথা জানিয়েছিলেন লেখিকা। কিন্তু ২০০৭ সালে কিছু ঘটনার পর কলকাতার পাটও চোকাতে হয় তাঁকে। তার পর থেকে কখনও আমেরিকা, কখনও নরওয়ে, জার্মানি, সুইডেন— একের পর এক দেশে স্বেচ্ছা নির্বাসনে কেটেছে তাঁর দিন।

ভারতে পাকাপাকি ভাবে থাকতে চান, বহু বারই সেই সাধের কথা জানিয়েছিলেন তসলিমা। যদিও সেই অনুমতি মেলেনি। তবে গত বছর অগস্টেই ভারতে তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আরও এক বছরের জন্য তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। নরেন্দ্র মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তে যে তিনি খুশি, তা কখনওই গোপন করেননি লেখিকা। তবে কি সে কারণেই খোলা গলায় সহিষ্ণু তকমা দেওয়া ভারতকে? সন্দেহটা উড়িয়ে দিতে পারছেন না অনেকে। তা-ও আবার এমন একটা পরিস্থিতিতে, যখন অসহিষ্ণুতা বিতর্কে নাম জড়িয়েছে দেশের বিশিষ্ট লেখক, পরিচালক থেকে শাহরুখ-আমিরের মতো চিত্রতারকার। উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে বাড়িতে গোমাংস রাখার গুজবে প্রৌঢ়কে পিটিয়ে খুন বা এম এম কালবুর্গী, গোবিন্দ পানসারে, নরেন্দ্র দাভোলকরের মতো যুক্তিবাদীদের খুন— সাম্প্রতিক অতীতে এমন নানা ঘটনায় উত্তাল হয়েছে দেশ। বিজ্ঞানী ভার্গব থেকে ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব, কেউ সরব হয়েছেন শাসকের সমালোচনায়। কেউ বা আবার প্রতিবাদ জানিয়েছেন নিজের সরকারি পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়ে।

এই আবহেও তসলিমার মতো লেখিকা কিন্তু সরে থেকেছেন বিতর্ক থেকে। আগে টুইট, আর এ বার সাহিত্য উৎসবের মঞ্চ— বারে বারেই তাঁর মুখে সহিষ্ণুতার কথা। ভারতের সবাই নন, অসহিষ্ণু শুধু কয়েক জন— গত কাল তাঁর অবস্থান সামান্য বদলানোর পরও শাসক বিজেপি কিন্তু স্বস্তিতেই। বিতর্কসভার মঞ্চে অবশ্য তসলিমাকে কিছুটা বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়েছে বিজেপি-ঘনিষ্ঠ লেখক সুধীন্দ্র কুলকার্নির থেকে। সুধীন্দ্রর যুক্তি, তসলিমা যতই মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য সওয়াল করুন, এর সঙ্গে কিছু দায়িত্বও জড়িয়ে থাকে। নিজের কথা জানানোর জন্য অন্যের ভাবাবেগে আঘাত করা উচিত নয়, মনে করেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

national news taslima taslima on intolerence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE