Advertisement
০৪ মে ২০২৪

গোসা করে যাননি কুরেশি, সুষমার মুখে সন্ত্রাসের সঙ্কট

সে দেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত তথা ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতা গুরবচন সিংহ।

অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি)-এর সম্মেলনে সুষমা স্বরাজ। ছবি: পিটিআই।

অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি)-এর সম্মেলনে সুষমা স্বরাজ। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ০২:৪৬
Share: Save:

পঞ্চাশ বছর আগে মরক্কোর প্রথম ইসলামিক রাষ্ট্রগুলির মহাসম্মেলনে (ওআইসি) পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের আপত্তিতে যোগ দিতে পারেনি ভারত। গিয়েও ফিরে এসেছিলেন সে দেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত তথা ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতা গুরবচন সিংহ।

আজ অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি)-এর সম্মেলনে আমন্ত্রিত হিসেবে খুব জোরালো ভাবেই নিজের বার্তা তুলে ধরল ভারত। ৫৭টি মুসলিম দেশের এই মঞ্চকে ব্যবহার করে এবং পাকিস্তানের নাম না করে রাষ্ট্রের মদত পাওয়া সন্ত্রাস আর মৌলবাদের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আবু ধাবিতে ওই সম্মেলনে বললেন, ‘‘মানবসভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখতে সব রাষ্ট্রকে জানাতে হবে— জঙ্গিদের আশ্রয় ও পুঁজি কারা জোগায়। সেই দেশগুলিতে জঙ্গি ডেরাগুলি যাতে ধ্বংস করা হয় এবং পুঁজির জোগান বন্ধ হয়, তার জন্য পদক্ষেপ করতে হবে।’

ওআইসি-র সম্মেলনে ভারতকে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে এ বারও প্রবল আপত্তি জানিয়েছিল পাকিস্তান। পাক পার্লামেন্টে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, ওয়াইসি কি ইমরান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেনি? ইসলামিক দেশগুলির মধ্যে একমাত্র পরমাণু শক্তিধর হিসেবে পাকিস্তান যে প্রাধান্য দাবি করে আসছিল, এ বারই প্রথম তা ঠুঁটো হয়ে গিয়েছে। সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর হিসেবে বিশ্বে প্রায় একঘরে দশা। চিনের মতো পরম মিত্রও প্রকাশ্যে জোরালো ভাবে পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে না। এত দিন যা-ও বা মুসলিম দেশগুলির মঞ্চ ওয়াসি-তে ভারতকে অচ্ছুত রাখা গিয়েছিল, সেই স্বস্তিটুকুও মুছেছে। খোদ ওআইসি-ই গ্রাহ্য করেনি পাকিস্তানের আপত্তি।

আরও পড়ুন: দেশে ফিরে কোন কোন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে পারেন অভিনন্দন

এই অবস্থায় তাদের বিদেশমন্ত্রীকেই বয়কট করতে হল সম্মেলন। পুলওয়ামা হামলার পরে সুষমা কী বলতে চলেছেন, সেটা বুঝেই অস্বস্তি এড়াতে আবু ধাবির পথে পা বাড়াননি পাক বিদেশমন্ত্রী সাহ মেহমুদ কুরেশি। ওয়াইসি-র মঞ্চে পাকিস্তানের আসন ফাঁকা! ছবিটি কূটনৈতিক ভাবে অত্যন্ত অর্থবহ।

কম অর্থবহ নয় ভারত-পাক সংঘাতের আবহে সুষমার জোরালো বক্তব্যও। গোটা বিশ্বের নজর এখন এই উপমহাদেশের উপর। উত্তাপ কমাতে ও পাকিস্তানের জঙ্গি ডেরা ধ্বংসের দাবিতে সরব আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলি। বিশেষ ভাবে দৌত্য চালাচ্ছে আরব দুনিয়া। রাষ্ট্রের সন্ত্রাস-নীতি নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বর তোলার এমন মাহেন্দ্রক্ষণ আর পাওয়া যাবে না বলেই মনে করা হয়েছিল। কূটনীতির লোকজন মনে করছেন, সেই সুযোগের যথেষ্ট সদ্ব্যবহার করেছেন পোড় খাওয়া বিদেশমন্ত্রী সুষমা। কোরান থেকে সুরা-আল-হজরত, বিবেকানন্দের বক্তব্য থেকে ঋক-বেদের বার্তা তুলে ধরে মুসলিম বিশ্বের সামনে সুষমা ব্যাখ্যা করেছেন মৌলবাদের স্বরূপ। বুঝিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদ কতটাই নিষ্ফল।

বিদেশ মন্ত্রকের কথায়, ‘‘আল্লার ৯৯টি নামের একটিরও অর্থ হিংসা নয়। ইসলামের আক্ষরিক অর্থ হল শান্তি। বিশ্বের প্রতিটি ধর্ম শান্তি, মানবতা এবং সৌভ্রাতৃত্বের পক্ষে।’’

সুষমাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে লড়াইয়ে জিততে শুধু সামরিক ও কূটনৈতিক হাতিয়ারই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন ধর্মের প্রকৃত অর্থ ব্যাখ্যা ও তার প্রচারও। সুষমা ওআইসি-র সঙ্গে যৌথ সহযোগিতার যে ক্ষেত্রগুলি আজ চিহ্নিত করেছেন, তার মধ্যে অগ্রাধিকার পেয়েছে ঘৃণাকে সরিয়ে সম্প্রীতির বার্তা দেওয়া, যুবশক্তিকে ধ্বংসের পথ থেকে সরিয়ে আনার মতো বিষয়গুলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE