১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের সময় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘হট পারস্যুট’-এর নীতি নিতে চেয়েছিলেন। অর্থাৎ, পাকিস্তান থেকে আসা সন্ত্রাসবাদীদের ধাওয়া করে, প্রয়োজনে সীমান্ত বা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে জঙ্গি ঘাঁটিতে প্রত্যাঘাতের সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলেন তাঁরা। মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি তখন এ নিয়ে আলোচনাও করেছিল।
সতেরো বছর পর নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকে আজ আবার ‘হট পারস্যুট’-এর প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হল। এ নিয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ভিডিও প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে মন্ত্রিসভাকে বুঝিয়েছেন, ভারত-পাক সীমান্ত বা নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে এখন যেটা চলছে তা সীমিত যুদ্ধেরই ক্ষুদ্র সংস্করণ। গোটা দেশ জুড়ে যা ছিল ছায়াযুদ্ধ, এখন তা এক সম্মুখসমরে পরিণত হওয়ার পথে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে ডোভাল দেখিয়েছেন, কাশ্মীরে এ বার বরফ গলার পর থেকে পাক সেনা অন্তত ৪৫ বার সীমান্ত দিয়ে ঢুকে পড়ে আক্রমণ হেনেছে। সেটা কখনও ঘটেছে পুঞ্চে, কখনও বা উরি সেক্টরে। আর দক্ষিণ কাশ্মীরে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা বহু এলাকার দখল নিয়েছে।
সঙ্ঘ ও বিজেপির একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাক সন্ত্রাস দমনে কঠোর প্রত্যাঘাতের নীতি অনুসরণ করতে চাইছে। উরির ঘটনায় তাঁদের গলার জোর আরও বেড়েছে। সঙ্ঘ থেকে বিজেপিতে আসা নেতা রাম মাধব আজ মন্তব্য করেছেন, ‘একটা দাঁতের জবাবে গোটা চোয়ালটাই নিয়ে নিতে হবে।’ কিন্তু সন্ত্রাস মোকাবিলার ক্ষেত্রে অন্য মতও রয়েছে, বিশেষ করে মন্ত্রিসভায়। রাজনাথ সিংহ নিজে আরএসএসের ঘনিষ্ঠ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি বলার চেষ্টা করেছেন, পাকিস্তান বিরোধিতাকে স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করলেও শান্তি প্রক্রিয়া থমকে দেওয়া ঠিক নয়। রাজনাথ এখনও পাকিস্তানের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যেতে চান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নিজে পাকিস্তানের সঙ্গে একটা জোরদার মোকাবিলার পক্ষে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেই ইঙ্গিত মিলেছে। হট পারস্যুট নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে মোদী সেনাকে আরও বেশি করে পাক সীমান্তে প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। সেনার প্রস্তুতিও বাড়ানো হচ্ছে।