Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

জঙ্গিদের দেহ আনতে গেলেই চলছে গুলি

২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখার গা ঘেঁষেই পড়ে রয়েছে জঙ্গিদের নিথর দেহগুলো। দু’-এক জন নয়। কাল দশ জন জঙ্গিকে খতম করেছে ভারতীয় সেনা।

অভিযান চলছেই। বুধবার উরি সেক্টরের লাছিপোরায়। ছবি: পিটিআই।

অভিযান চলছেই। বুধবার উরি সেক্টরের লাছিপোরায়। ছবি: পিটিআই।

সাবির ইবন ইউসুফ
উরি শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৪
Share: Save:

২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখার গা ঘেঁষেই পড়ে রয়েছে জঙ্গিদের নিথর দেহগুলো। দু’-এক জন নয়। কাল দশ জন জঙ্গিকে খতম করেছে ভারতীয় সেনা। অথচ আজ রাত পর্যন্ত তাদের এক জনের দেহও উদ্ধার করতে পারল না তারা। কারণ? সেনার শীর্ষ কর্তারা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, জওয়ানরা ওই দেহগুলির ধারে কাছে গেলেই কাঁটা তারের ও-পার থেকে ধেয়ে আসছে গুলি। তাই ভারতীয় জওয়ানরা কয়েক পা এগিয়েও ফের পিছিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। আজ সকাল থেকে বেশ কয়েক বার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে।

গত রবিবার উরির সেনা ছাউনিতে এত বড় হামলার পর কালও পাক সীমান্ত থেকে এ দেশে ঢোকার চেষ্টা করেছিল জনা পনেরো জঙ্গি। উরি সেক্টরের লাছিপোরায়। ভারতীয় সেনার পাল্টা জবাবে নিকেশ হয় তাদেরই ১০ জন। অথচ আজ সারা দিন কেটে গেলেও তাদের এক জনেরও দেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি ভারতীয় বাহিনী। কাল সেনার তরফে বলা হয়েছিল, নিয়ন্ত্ররেখার কাছে একটি নালায় পর পর কয়েকটি দেহ দেখতে পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু ওই জঙ্গিদের দেহে বিস্ফোরক থাকতে পারে, তাই দিনের আলো না ফুটলে ওই সব দেহ উদ্ধারে হাত লাগাতে পারছে না তারা। কিন্তু আজও তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। জঙ্গিদের দেহ তল্লাশি করে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধারের আশায় ছিল ভারতীয় বাহিনী। কিন্তু সেনা কর্তাদের একাংশই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দেহগুলির কাছে গেলেই ভারতীয় জওয়ানদের উদ্দেশে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুটে আসছে ও-পার থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তাই বললেন, ‘‘ওরা যেন চায় না আমাদের হাতে দেহগুলো আসুক।’’ তবে সেই সঙ্গেই তাঁর সংযোজন, ‘‘পুলিশের একটা বড় বাহিনী ঘটনাস্থল পৌঁছেছে। আমরা খুব শীঘ্রই দেহগুলো উদ্ধার করব।’’ সেনা জানিয়েছে, আজ দ্বিতীয়
দিনেও জঙ্গি দমন অভিযান জারি রয়েছে উরি সেক্টরে।

রবিবারের হামলার পর তিন দিন কেটে গেলেও ছন্দে ফিরতে পারছে না উরি। সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় যে সব ছোট ছোট গ্রাম রয়েছে, ভয়ে কাঁটা হয়ে সেখানকার বাসিন্দারা। আব্দুল রশিদ খাটানা উরিতেই একটি মুদির দোকান চালান। বললেন, ‘‘২০০৩ থেকে সংঘর্ষ-বিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দু’দেশ। আমরা খুশি হয়েছিলাম তখন। কিন্তু সীমান্তের ও-পার থেকে মাঝেমধ্যেই গোলাগুলি চলে। পাল্টা জবাব দেয় এ–পারও। আর এদের রেষারেষির মাঝে পড়ে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জীবন কার্যত অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।’’ ৩৫ বছর ধরে উরিতে রয়েছেন আর এক আব্দুল। বছর ছাপান্নর প্রৌঢ় একটি ওষুধের দোকান চালান। ‘‘ভারত-পাকিস্তানের এই গোলা-বারুদের লড়াই সাধারণ কাশ্মীরিদের মানসিক ভাবে অসুস্থ করে তুলছে। মাঝেমধ্যেই ঠাঁই ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হচ্ছে আমাদের। আর তার প্রভাব পড়ছে পারিবারিক জীবনে। মানসিক ভাবে অসুস্থ আর আর্থিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছি,’’ বললেন আব্দুল রশিদ। সীমান্তের ধারে গারকোট গ্রামে থাকে নজির বাজাদ। ছোটখাটো ব্যবসা করেন। ‘‘আমরা তো রোজ মরে বেঁচে আছি। গোলায় কবে প্রাণ যাবে, জানি না। দু’দিন আগে ভারতীয় জওয়ানদের সঙ্গে যা হলো, আমরা চাই, পাকিস্তান উচিত শিক্ষা পাক। সেই সঙ্গে আর একটা জিনিসও চাই। শান্তি,’’ বললেন নজির। শুধু তাঁর একটাই প্রশ্ন, ‘‘দু’দেশের নেতারা সেটা শুনবেন কি?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian army Pakistan border Terrorists firing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE