প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। ফাইল চিত্র।
যৌন হেনস্থার অভিযোগের তদন্তের পরে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে ক্লিনচিট দিল সুপ্রিম কোর্টের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি।
বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবদে ও দুই মহিলা বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত কমিটির রিপোর্ট বলছে, সুপ্রিম কোর্টেরই প্রাক্তন মহিলা কর্মী প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন, তার কোনও সারবত্তা নেই।
কিন্তু কেন কমিটি কোনও সারবত্তা নেই বলে মনে করছে, তদন্তে কী মিলেছে, তার কিছুই জানানো হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেল আজ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, কমিটির রিপোর্ট জমা পড়েছে। তা প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেই রিপোর্ট প্রকাশ করার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।
বছর পঁয়ত্রিশের অভিযোগকারিণী জানিয়েছিলেন, ২০১৮-তে প্রধান বিচারপতি গগৈ তাঁকে যৌন হেনস্থা করেছিলেন। সে সময় তিনি জুনিয়র কোর্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু তিনি প্রধান বিচারপতির বাড়িতে নিযুক্ত ছিলেন। এই অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই তিন বিচারপতির কমিটি তৈরি হয়েছিল। তাতে দ্বিতীয় প্রবীণতম বিচারপতি বোবদে ছাড়াও ছিলেন বিচারপতি ইন্দু মলহোত্র ও বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিচারপতিদের কমিটি প্রধান বিচারপতির বয়ানও শুনেছিল। ১ মে প্রধান বিচারপতি এই কমিটির সামনে হাজির হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে গোটা অভিযোগ অস্বীকার করেন। কিন্তু তার ঠিক আগের দিন, ৩০ এপ্রিল ওই মহিলা তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। তিন দিন তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হওয়ার পরে ওই মহিলা জানান, তাঁকে বিচারপতিরা জানিয়েছেন যে ঘরোয়া ভাবে এই তদন্ত চলছে। শুনানির কোনও রেকর্ডিং হয়নি। কোনও আইনজীবীকেও তাঁর সঙ্গে থাকতে দেওয়া হয়নি। তাই প্রক্রিয়া নিয়ে তাঁর আপত্তি রয়েছে।
আজ কমিটির রিপোর্টের পরে তরুণীর বক্তব্য, ‘‘আমার সঙ্গে বিরাট অন্যায় হল।...আজ আমি ন্যায়ের প্রতি আস্থা হারানোর মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছি।’’ আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবেন। কিন্তু কমিটির সিদ্ধান্তে তিনি শুধু ‘উদ্বিগ্ন’ নন, ‘সন্ত্রস্ত’ ও ‘আতঙ্কিত’ বলেও জানান ওই তরুণী। কারণ তাঁর কোনও সুরক্ষার বন্দোবস্ত হয়নি। তাঁর ও পরিবারের উপরে হামলা চলছে।
ওই মহিলা আগেই অভিযোগ করেছিলেন, প্রধান বিচারপতিকে বাধা দেওয়ার পরেই তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। দিল্লি পুলিশের কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত তাঁর স্বামী ও দেওরকেও সাসপেন্ড করা হয়।
বিচারপতিদের কমিটির এত দ্রুত সিদ্ধান্তগ্রহণ নিয়ে আইনজীবী মহলে প্রশ্ন উঠেছে। প্রবীণ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ একে ‘কেলেঙ্কারি’ আখ্যা দিয়েছেন। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘প্রধান বিচারপতির সহকর্মীরা অভিযোগকারিণীর সঙ্গে তাঁর আইনজীবীকে থাকার অনুমতি দেননি। রেকর্ডিং ছাড়াই ঘরোয়া স্তরে প্রক্রিয়া চালিয়েছেন। তারপর দ্রুত মুখ বন্ধ খামে প্রধান বিচারপতিকে ক্লিন চিট দিয়েছেন। এতে অবাক হওয়ার কী রয়েছে?’’ প্রায় একই সুরে আইনজীবী করুণা নন্দীর বক্তব্য, ‘‘তদন্তে অভিযোগকারিণী সব সময়ে হাজির থাকেননি। কোনও অবসরপ্রাপ্ত মহিলা বিচারপতিকেও সদস্য করা হয়নি। অভিযোগকারিণীর কৌঁসুলিও হাজির ছিলেন না। ফলে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।’’
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল জানিয়েছেন, ২০০৩-এ ইন্দিরা জয়সিংহ বনাম সুপ্রিম কোর্ট মামলাতেই বলা হয়েছিল যে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু ইন্দিরা জয়সিংহের বক্তব্য, ‘‘২০০৩-এর ওই মামলাও কর্নাটক হাইকোর্টের এক কর্মরত বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ নিয়ে। কিন্তু সেটা তথ্যের অধিকার আইনের আগের যুগ।’’ এখন জনস্বার্থে কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের দাবি তুলেছেন ইন্দিরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy