Advertisement
০৪ মে ২০২৪

অনর্থক বেফাঁস হয়ে অর্থ খোয়ালেন জয়ন্ত

মাসুল গুনেছেন দু’জনেই। আর কারণগুলোও প্রায় এক।দু’জনের আচরণেই ঔদ্ধত্য ছলকে পড়ে। দু’জনেরই বিচক্ষণতার অভাব। এবং সব চেয়ে বড় অভিযোগ, দু’জনেই অতি-সক্রিয়। সংযম হারিয়ে লক্ষ্মণরেখা কখন পার করে ফেলেন, টের পান না।

নতুন মন্ত্রকে। বিমান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নিচ্ছেন জয়ন্ত সিন্‌হা। বুধবার। —ফাইল চিত্র

নতুন মন্ত্রকে। বিমান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নিচ্ছেন জয়ন্ত সিন্‌হা। বুধবার। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৬ ০৪:১১
Share: Save:

মাসুল গুনেছেন দু’জনেই। আর কারণগুলোও প্রায় এক।

দু’জনের আচরণেই ঔদ্ধত্য ছলকে পড়ে। দু’জনেরই বিচক্ষণতার অভাব। এবং সব চেয়ে বড় অভিযোগ, দু’জনেই অতি-সক্রিয়। সংযম হারিয়ে লক্ষ্মণরেখা কখন পার করে ফেলেন, টের পান না।

মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে স্মৃতি ইরানির বিদায়ের ছায়ায় ঢাকা পড়ে গিয়েছিল আরও একটি বড় পতন। অর্থ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে জয়ন্ত সিন্হার অপসারণ। অপেক্ষাকৃত লঘু বিমান মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করে পাঠানো হয়েছে তাঁকে। আইআইটি-হার্ভার্ডের স্নাতক, ৫৩ বছরের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার যখন প্রথম বার সাংসদ হয়ে নর্থ
ব্লকে আসেন, অনেকেই ভেবেছিলেন, এই পদের জন্য তিনিই সেরা বাছাই। কিন্তু সরকারের দু’বছর পেরোতে পেরোতেই সরতে হল তাঁকে।

মন্ত্রক বদলের পর বিষণ্ণ দুই মন্ত্রীর আচরণেও অদ্ভুত মিল। গত কাল অর্থ মন্ত্রকের নতুন দুই প্রতিমন্ত্রীকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে যাননি জয়ন্ত। ঠিক যেমন আজ নতুন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর দায়িত্ব নেওয়ার সময় হাজির থাকেননি স্মৃতি। সব দেখে এক বিজেপি নেতা বলেই ফেললেন, ‘‘মন্ত্রী হওয়ার জন্য কত তাবড় নেতা মুখিয়ে রয়েছেন। এঁরা সেই সুযোগ পেয়েও নিজেদের পায়ে কুড়ুল মারলেন।’’

প্রাক্তন গরহাজির। নতুন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরকে
স্বাগত জানাচ্ছেন প্রতিমন্ত্রী উপেন্দ্র কুশওয়াহা।
বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।

জয়ন্ত-ঘনিষ্ঠরা অবশ্য এখনও অর্থ মন্ত্রক থেকে তাঁর বিদায়কে ‘অপ্রত্যাশিত’ বলছেন। কিন্তু সেই বৃত্তের বাইরে বিজেপিতে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে অজস্র ক্ষোভ-অভিযোগ। যার একটা নির্যাস আগেই তুলে দেওয়া হয়েছে। বারবার বেফাঁস হয়ে দলের পাশাপাশি নিজের মন্ত্রককেও ভুগিয়েছেন জয়ন্ত। অভিযোগ, অর্থ মন্ত্রকের বহু সিদ্ধান্ত না জেনে-বুঝেই প্রকাশ্যে বলে ফেলতেন সদ্য-প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী। কখনও সংসদ চলার সময় একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে তিনি আগ বাড়িয়ে এমন মুখ খুলেছেন যে, শেয়ার বাজারে পর্যন্ত তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। আবার কখনও বলে ফেলেছেন, আয়করদাতার সংখ্যা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দশ কোটি করা হবে। ঠেলা সামলাতে হিমশিম খেয়েছে অর্থ মন্ত্রক।

প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রের খবর, এ ভাবে আগ বাড়িয়ে কথা না বলার জন্য সতর্কও করা হয়েছিল জয়ন্তকে। কিন্তু লাভ হয়নি। গত মাসে সমস্ত ব্যাঙ্কের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন জয়ন্তের ‘বস’ অরুণ জেটলি। একই দিনে জয়ন্ত নিজের বাড়িতেও তাঁদের আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু শোনা যায়, সেই ঘরোয়া বৈঠকে জয়ন্তের স্ত্রী পুনিতা-সহ বেশ কয়েক জন ‘বহিরাগত’ ছিলেন। অনেকেই সেটা ভাল ভাবে নেননি। পুনিতা আবার স্বামীর মন্ত্রিত্বের সময়েই ইনফোসিসের ডিরেক্টর হন। ফলে স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগও ওঠে জয়ন্তের বিরুদ্ধে।

এই অবস্থায় দলের অনেকেই মনে করেন, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিন্হার ছেলে হিসেবে জয়ন্তর আরও দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত ছিল। কিন্তু তিনি ঠিক উল্টো পথে হেঁটে নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলিদের উষ্মা বাড়িয়েছেন। নানা কারণে স্মৃতি ইরানিকে মন্ত্রক থেকে সরাতে বাধ্য হলেও মোদী এখনও তাঁকে অন্য দায়িত্ব দিতে পারেন। কারণ তিনি বরাবরই প্রধানমন্ত্রীর সুনজরে। কিন্তু জয়ন্ত পারিবারিক ভাবেই মোদীর ‘কাছের লোক’ নন। তাঁর বাবা কিছু দিন আগেও লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশীদের সঙ্গে জোট বেঁধে মোদী-অমিত শাহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন।

নেতাদের মতে, এর পরে স্বাভাবিক ভাবেই জয়ন্তের ‘রিপোর্ট কার্ডে’ মোদীর প্রসন্ন দৃষ্টি থাকার কথা ছিল না। হলও তা-ই। সুষমা স্বরাজ-ঘনিষ্ঠ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার মতো নেতারা মন্ত্রিসভায় আসায় জেটলির অস্বস্তি কিছুটা বেড়েছিল। জয়ন্তকে সরিয়ে সেই অস্বস্তিই লাঘব করেছেন মোদী।

যদিও এর পরেও নর্থ ব্লক থেকে বিদায়ের সময়ে নিজের আচরণে অনেককেই অসন্তুষ্ট করে গিয়েছেন জয়ন্ত। গত কালের ঘটনা। নতুন দুই অর্থ প্রতিমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ার এবং অর্জুন মেঘওয়াল তখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে দায়িত্ব নেননি। জয়ন্ত এসেছিলেন জেটলির ঘরে। কিন্তু তার পর প্রতিমন্ত্রীরা নিজেদের ঘরে যাওয়া অবধি আর অপেক্ষা না করেই বেরিয়ে যান তিনি। খোদ জেটলিই দুই মন্ত্রীকে ঘরে নিয়ে যান। পরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘জয়ন্ত আমার ঘরে বসে কফি খেয়েছেন। তার পর বোধ হয় তাঁর অন্যত্র যাওয়ার ছিল, তাই বেরিয়ে গিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jayant Sinha divulged
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE