জোশীমঠের ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭৮। ছবি: পিটিআই ।
প্রাণ গেলে যাবে, তবুও বাড়ি ছেড়ে এক পা-ও নড়বেন না! এমনই দাবি জোশীমঠের বাসিন্দাদের একাংশের। তাঁদের দাবি, মরতে হলে মরবেন তা-ও ভাল। কিন্তু বাপ-ঠাকুরদাদের ভিটেমাটি ছেড়ে তাঁরা কোথাও যাবেন না।
গাড়োয়াল হিমালয়ের ‘ডুবন্ত’ জনপদ জোশীমঠের ২০০টিরও বেশি বাড়িতে ইতিমধ্যেই ‘রেড ক্রস’ করে দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ এই বাড়িগুলি বসবাসের জন্য নিরাপদ নয়। বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সোমবার প্রশাসনের তরফে জোশীমঠের ওই পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলা হয়। কিন্তু জোশীমঠ ছাড়তে নারাজ সেই পরিবারগুলির একাংশ। সে রকমই এক পরিবারের গৃহকর্তা লক্ষ্মীপ্রসাদ সতী। ৭৮ বছরের এই বৃদ্ধের বাড়ি নিয়েও লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ‘মালারি ইন’ এবং ‘মাউন্ট ভিউ’ নামে হেলে পড়া যে দু’টি হোটেল ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা একেবারে তাঁর বাড়ির সামনে। আর সেই জন্যই প্রশাসনের তরফে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারের সদস্য আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু রাজি হননি বৃদ্ধ লক্ষ্মীপ্রসাদ। তাঁর সাফ কথা, ‘‘আমরা বাইরে থেকে আসিনি। এখানেই আমার জন্ম। আমার পূর্বপুরুষরা এই বাড়িতেই থেকেছে। প্রশাসন কী করছে? আমি এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাব না।’’ তাঁকে যদি বাড়িতে থেকে মরতে হয়, তিনি তাতেও রাজি আছেন বলে মন্তব্য করেছেন। একই দাবি করেছেন লক্ষ্মীপ্রসাদের মতো আরও কয়েক জন বাসিন্দা। রাজ্য সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, বাড়ি ছেড়ে অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে থাকার জন্য প্রতিটি পরিবারকে পরবর্তী ছ’মাসের জন্য প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ ৪০০০ টাকা করে দেওয়া হবে। তবে তাতেও ওই পরিবারগুলি রাজি হননি বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। মঙ্গলবার আবারও ওই পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
সোমবার জোশীমঠে নতুন করে আরও ৬৮টি বাড়িতে ফাটল দেখা যায়। এর পর জোশীমঠের বিস্তীর্ণ এলাকা পরিদর্শন করে দেখেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্য সচিব এসএস সান্ধু। নির্দেশ দেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ এবং অবিলম্বে যেন এলাকার বাকি বাসিন্দাদেরও অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পর থেকেই জোশীমঠের বাসিন্দাদের আশ্রয় শিবিরে পৌঁছে দিতে আরও তৎপর হয়েছে প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, গত ২ জানুয়ারি থেকেই গাড়োয়াল হিমালয়ের ছোট জনপদ জোশীমঠে জায়গায় জায়গায় ধস নামে। ফাটল ধরছে একের পর এক বাড়িতে। রাস্তাতেও যেখানে সেখানে ফাটল ধরতে দেখা যাচ্ছে। মাটির তলা থেকে আসছে অদ্ভুত শব্দ। এর পরই জোশীমঠের আতঙ্কিত স্থানীয়রা তাঁদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবিতে পথে নামেন। আপাতত ওখানকার বাসিন্দাদের অন্যত্র পুনর্বাসন দেওয়ার কাজ চলছে। গত রবিবারই জোশীমঠকে ‘বসবাসের অনুপযোগী’ বলেও ঘোষণা করে দিয়েছে উত্তরাখণ্ড সরকার। বর্তমানে ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭৮। প্রশাসনের তরফে এখন পর্যন্ত মোট ৮২টি পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy