ছবি: সংগৃহীত।
আগুনের মতো খবরটা ছড়িয়ে পড়ল শহর জুড়ে। যিনিই শুনছেন, তিনিই বিস্মিত, (কালিকা) প্রসাদ নেই! অসম্ভব!
সময় যত গড়াচ্ছিল, ভিড় বাড়ছিল শিলচর সেন্ট্রাল রোডের ‘ন্যায় পঞ্চানন বাড়ি’-তে। একটাই জিজ্ঞাসা, কখন আসবে প্রসাদ? খবর শুনেই অসুস্থ হয়ে পড়েন দুই পিসি, আনন্দময়ী ও মৃণালিনী। কেঁদে চলেছেন খুড়তুতো দিদি নন্দিনী চক্রবর্তী। তাঁর ছেলে সুদীপ্তও দুর্ঘটনার সময় প্রসাদের সঙ্গে ছিলেন। জখম সে-ও। নন্দিনীদেবীর পাশে নিথর, নীরব শহরের অনেকে।
প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে শহরের বিশিষ্টজনেরা বসে বারান্দায়। সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের কে নেই সেখানে! কিন্তু কারও মুখে কথা নেই। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের সভ্যরা শুরু থেকেই মৃতদেহ শিলচরে আনার চেষ্টা করছিলেন। অসম সরকারও প্রসাদকে শিলচরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কথা বলেছেন। মঞ্চের কর্তারা লোপামুদ্রা, শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার-সহ অনেকের সঙ্গেই মোবাইলে কথা বললেন। অনিশ্চয়তা কাটছিল না। শেষে নন্দিনীদেবীই প্রসাদের স্ত্রীর কথা ভেবে বললেন, ‘‘আবেগের পাশাপাশি তাঁর কথাটাও তো আমাদের ভাবতে হবে। মৃতদেহ আনা হলে এই অবস্থায় তাঁকেও শিলচরে আসতে হবে।’’ ঠিক হয়ে গেল, আর শিলচরে ‘ঘরে’ ফিরবেন না প্রসাদ!
সেখানে দাঁড়িয়ে সাংস্কৃতিক মঞ্চের কর্তারা জানালেন, আগামী কাল সকাল ন’টায় প্রসাদ-স্মরণে শোক মিছিল বের করা হবে। নরসিংটোলা ময়দান থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করবে সেই মিছিল। শেষ হবে সঙ্গীত বিদ্যালয়ে। শিলচর পুরসভা আজই বেলা আড়াইটায় কালিকাপ্রসাদের মৃত্যুতে ছুটি ঘোষণা করেছে। আগামী কাল বেলা ১২টা পর্যন্ত নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধেরও ঘোষণা হয়েছে। শোকাহত বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন, মাতৃভাষা ঐক্যমঞ্চ-সহ অসংখ্য সংগঠন।
বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার তথা শিলচরের বিধায়ক দিলীপকুমার পাল বলেন, কালিকাপ্রসাদের মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হল। বাড়ি গিয়ে সমবেদনা প্রকাশ করেন বিজেপি নেতা রাজদীপ রায়, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব বাবুল হোড়, বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের জেলা সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী প্রমুখ। নাট্যকার, সঙ্গীত ও নৃত্যশিল্পী, আইপিটিএ-র কর্মীরা তো ছিলেনই।
কেউ বলছিলেন, প্রসাদ লোকসঙ্গীতের জন্য খ্যাতি অর্জন করলেও আসলে ছিলেন তবলচি। দু’-একজন স্মরণ করিয়ে দিলেন তাঁর অভিনয়ের কথা। শান্তনুস্বরূপ রায় শোনালেন, আইপিটিএ-র হয়ে ইম্ফলে
সফদর হাসমির ‘রাজা কা বাজা’ নাটকে ভাল অভিনয় করেছিলেন প্রসাদ। উধারবন্দের নীহাররঞ্জন রায় জানালেন, ‘‘গুরুচরণ কলেজে একসঙ্গে কত বিতর্ক সভায় অংশ নিয়েছি।’’
ভিড়ের মধ্যে প্রসাদের লেখা কবিতার কথাও বলছিলেন দু-চারজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy