রাহুল গাঁধীর সঙ্গে কথা বলে তাঁর বাস ভবন থেকে বেরিয়ে আসছেন কানহাইয়া কুমার ও ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।
এই প্রথম। মুখোমুখি রাহুল গাঁধী ও কানহাইয়া কুমার।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান’ নিয়ে বিতর্ক ও ধরপাকড়ের পরে কানহাইয়া কুমারকে সমর্থনের জন্য বিজেপি যখন উদয়াস্ত রাহুলকে গাল পাড়ছে, ঠিক সেই সময় নিজের বাড়িতে দেখা করলেন এই ছাত্রনেতার সঙ্গে। রাহুল বুঝিয়ে দিলেন, বিজেপি যা-ই বলুক, তিনি কানহাইয়ার সঙ্গেই রয়েছেন। কংগ্রেস অবশ্য বলছে, রাহুল নন, কানহাইয়াই কংগ্রেস নেতার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। তাঁকে সময় দিয়ে রাহুল পাল্টা বার্তা দিলেন বিজেপিকে।
কংগ্রেস নেতা শশী তারুর সম্প্রতি কানহাইয়ার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠাতেই জল্পনা শুরু হয়েছিল জেএনইউয়ের এই ছাত্রনেতা কি তবে কংগ্রেসের কাছাকাছি আসছেন! এই জল্পনার মধ্যে আজ কী কথা হল রাহুল ও কানহাইয়ার মধ্যে?
কংগ্রেসের বক্তব্য, এটা প্রথম বৈঠক। এখনই কোনও রাজনৈতিক সম্পর্ক তৈরি নিয়ে সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়নি। তা ছাড়া কানহাইয়া একা নন, এসেছিলেন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদলকে নিয়ে। কংগ্রেস ও বাম দলের আদর্শগত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে এ দিন। হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মঘাতী দলিত ছাত্র রোহিত ভেমুলার প্রসঙ্গও ওঠে সেখানে। কাল সেখানে যাচ্ছেন কানহাইয়া। দেখা হবে রোহিতের মায়ের সঙ্গেও।
রাহুলের বাসভবন থেকে বেরিয়ে কানহাইয়া সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেননি। রাহুল পরে টুইট করে এআইএসএফ এবং জেএনইউ ছাত্র সংগঠনের সভাপতির সঙ্গে দেখা করার কথা জানান। কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের সভাপতি রোজি জনের বক্তব্য, শুধু জেএনইউ প্রশ্নে নয়, রাহুল গাঁধী এফটিআইআইয়ে এবং আইআইটি মাদ্রাজে ছাত্র-আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। জেএনইউয়ের ছাত্র সংগঠনের তরফে আজ তাঁকে ধন্যবাদ জানানো হল। কেন্দ্রীয় সরকার এবং আরএসএস যে ভাবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর আক্রমণ করছে, স্বাধীনতা খর্ব করতে চাইছে, তার প্রতিবাদে আমরা লড়ছি। ছাত্রদের আন্দোলনকে আর যাঁরা সমর্থন করেছেন, সে সব নেতাদের সঙ্গেও দেখা করবেন এই ছাত্ররা।
কংগ্রেস সূত্রের মতে, কানহাইয়া বর্তমানে জামিনে মুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের কোনও প্রমাণও পাওয়া যায়নি। তা সত্ত্বেও বিজেপি নিরন্তর রাহুলকে আক্রমণ করে যাচ্ছে। কানহাইয়ার সঙ্গে দেখা করে তারই জবাব দিলেন রাহুল। পশ্চিমবঙ্গে কানহাইয়াকে নিয়ে প্রচারের কথা আগেই জানিয়েছিলেন সীতারাম ইয়েচুরিরা। বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোটও হয়েছে রাজ্যে। রোহিত ভেমুলা প্রসঙ্গেও তারা এক মঞ্চে এসেছে। দলিতদের নিয়েও নরেন্দ্র মোদী ও আরএসএসের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন রাহুল। আর কানহাইয়াও বিজেপি-আরএসএসকে যে ভাবে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে ফেলেছেন তাতে আদর্শগত ভাবেও তিনি এখন কংগ্রেসের অনেকটা কাছাকাছি। গত কালই দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে কানহাইয়া বলেছেন, শত্রু ঠিক হয়ে গিয়েছে। এখন বন্ধু বাড়ানোর পালা। ফলে তার সঙ্গে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে বিজেপি-সঙ্ঘের বিরুদ্ধে লড়াইটাই উস্কে দিতে চাইলেন রাহুল।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব যতই কট্টর জাতীয়তবাদের পথ এড়ানোর চেষ্টা করুক, তাদের সেই পথেই ফিরতে হচ্ছে। যে কারণে মোদী সরকারের মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরকে দিয়ে আজ ঘোষণা করাতে হয়েছে, আগামী তিন দিন ভগৎ সিংহের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হবে। কাল শহিদ দিবস, পরশু হোলির দিন সব বিজেপি নেতা-কর্মী গাইবেন ‘মেরা রং দে বসন্তী চোলা’, আর পরশু হবে আক্রোশ দিবস। পোড়ানো হবে ‘রাষ্ট্রবিরোধী মননের কুশপুতুল’। জাভড়েকর বলেন, ‘‘কংগ্রেসের নেতারাই রাহুল গাঁধীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান না। কিন্তু কানহাইয়া পান। কংগ্রেস কানহাইয়ার সঙ্গে ভগৎ সিংহের তুলনা টানায় রাহুল গাঁধীর ক্ষমা চাওয়া উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy