চারটে টায়ারের টিউবকে চার দিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে কাঠের পাটাতন দিয়ে বানানো হয়েছিল ভেলা। এমনই কয়েকটা ভেলা আর দড়ি নিয়ে প্রবল বৃষ্টিতে মলপ্পুরম জেলার মুদ্রামারি গ্রামের দিকে উদ্ধারকাজে যান জয়সল এবং তাঁর জনা চোদ্দো সঙ্গী। জয়সল জানতেন, কাজটা কঠিন। এতটাই যে, জীবন বিপন্নও হতে পারে।
আরও পড়ুন: শ্রমিকদের ফেরাতে আরও এগোক বাংলা, চাইছে কেরল
বছর বত্রিশের জয়সলের বাড়ি মলপ্পুরমের চাপ্পাডিতে। পেশায় মৎস্য ব্যবসায়ী। ক্যারাটে, তায়কোন্ডো-য় পারদর্শী জয়সল ২০০২ সাল থেকেই কোঝিকডি ট্রমা সেন্টারে উদ্ধারকাজের সঙ্গে যুক্ত। ‘‘আমাদের গ্রামে ১৫ জন যুবকের একটা দল আছে। শুক্রবার ওই ট্রমা সেন্টারের টিম লিডার আমাদের ফোন করে মুদ্রামারির কাছে ডেকে নেন,’’ বলেন জয়সল। তাঁরা ১৫ জন টায়ার-কাঠের টুকরো দিয়ে বানানো ভেলায় ভেসে পড়েন ফুঁসতে থাকা বন্যার জলে। কোনও লাইফ জ্যাকেট ছিল না। জয়সল বলেন, ‘‘প্রায় ছয় কিলোমিটার ভেলায় ভেসে মুদ্রামারি গ্রামে পৌঁছই। প্রায় ডুবে যাওয়া গ্রাম থেকে কোনও রকমে বাসিন্দাদের উদ্ধার করলাম।’’ জয়সল জানান, তাঁদের কয়েক জনকে বিছের কামড় খেতে হয়েছে। তখন ওষুধ মেলেনি। পরে ক্ষতস্থানে হলুদ লাগানো হয়।
দেখুন ভিডিয়ো
জয়সল জানান, প্রায় ২৫০ জনকে উদ্ধার করেন তাঁরা। ভেলায় চেপে নৌকার সামনে পৌঁছে দেখেন, উঠতে গেলেই দুলে উঠছে নৌকা। অনেকেই, বিশেষ করে মহিলারা নৌকায় উঠতে পারছিলেন না। নৌকাটি সরে যাচ্ছিল। ‘‘মনে হল, সিঁড়ির মতো একটা ধাপ থাকলে তাতে পা দিয়ে ওঠা যাবে, নৌকা দুলবে না। ওই দলে এক অন্তঃসত্ত্বাও ছিলেন। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি কী ভাবে নৌকায় উঠবেন— এই সব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই নৌকার সামনে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লাম,’’ বললেন জয়সল।
ওই যুবকের পিঠে পা দিয়ে সকলেই একে একে ওঠেন নৌকায়। জয়সলের এক বন্ধু মহিলাদের উদ্দেশে বলেন, ‘জুতোটা খুলে ওঁর পিঠে পা দিন। ওটা পাথর বা সিমেন্টের সিঁড়ি নয়। উনি এক জন মানুষ।’
জয়সলের এক বন্ধু বলেন, ‘‘জয়সলই মেয়েদের জুতো খুলতে বারণ করে। ও বলল, ‘বন্যায় যাঁরা সব খুইয়েছেন, তাঁদের আর জুতো খুলতে বলা শোভা পায় না’।’’