হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জওয়ান ঋষি কুমার।
বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ১৫ মিনিট। নিজের বাঙ্কার থেকে তখন ক্যাম্প পাহারা দিচ্ছেন জওয়ান ঋষি কুমার। হঠাৎ দেখেন এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে চালাতে তাঁরই দিকে এগিয়ে আসছে তিন জঙ্গি। ঘাবড়ে না গিয়ে ঠান্ডা মাথায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। এখনই গুলি চালাবো না। ওরা আর একটু এগোক। রেঞ্জের মধ্যে আসুক। ঘাপটি মেরে ঋষি বসে থাকেন নিজের বাঙ্কারে। কৌশলটা কাজেও লাগে। তাঁর একার গুলিতেই মারা পড়ে দুই জঙ্গি। জম্মু-কাশ্মীরের কুপওয়ারার সেনা ঘাঁটিতে জঙ্গিদের হাতে আরও ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ার পিছনে ওই জওয়ানের অবদান অনেকটাই।
জঙ্গিদের গুলিতে গুরুতর জখম ওই জওয়ান এখন হাসপাতালে চিকিৎসারত। তাঁর মুখ থেকেই শোনা গেল গোটা ঘটনাটা।
বিহারের আরার বাসিন্দা ঋষি দীর্ঘ আট বছর ধরে সেনাবাহিনীতে কাজ করছেন। ওই দিন তাঁর সেন্ট্রি ডিউটি ছিল। হঠাত্ই তিনি লক্ষ্য করেন, তিন জঙ্গি ঘাঁটির বাইরের বেড়া কেটে ভিতরে ঢুকে এসেছে। গ্রেনেড ও এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়ে সেনাদের ঘরে ঢোকার চেষ্টা করছিল তারা। পাহারারত জওয়ান ঋষি কুমারই প্রথমে তাদের আটকান। জঙ্গিরা তাঁর কাছাকাছি এলেই তিনি গুলি চালাতে শুরু করেন। জঙ্গিদের ছোড়া গুলি সোজা তাঁর মাথায় গিয়ে লাগে। কিন্তু বুলেট প্রুফ হেলমেট পরে থাকায় তিনি বেঁচে যান। তবে গুলির ধাক্কায় পড়ে যান ঋষি। একটু ধাতস্থ হয়ে উঠেই ফের জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে নেমে পড়েন। তাঁর ছোড়া গুলিতেই নিহত হয় দুই জঙ্গি। কিন্তু জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলতে চলতেই শেষ হয়ে যায় তাঁর বুলেট। এক জঙ্গি তখনও গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। তত ক্ষণে অবশ্য ঘাঁটির অন্যান্য সেনারাও উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু থেমে যাননি ঋষি। নজরে আসে তাঁর থেকে কিছু দূরে নিহত এক জঙ্গির পাশেই পড়ে রয়েছে তার আগ্নেয়াস্ত্র।
কুপওয়ারার পঞ্জগ্রামে সেনা ঘাঁটির বাইরে পাহারা চলছে। হামলার পর। ছবি: পিটিআই।
এক ছুটে নিজের বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রটি হাতে তুলে নেন। তাঁকে লক্ষ্য করে একের পর এক গুলি ছুড়তে থাকে তৃতীয় জঙ্গি। গুলি লেগে গুরুতর জখমও হন ঋষি। কিন্তু তবুও হাল ছাড়েননি। আগ্নেয়াস্ত্রটি হাতে তুলেই তৃতীয় জঙ্গির উদ্দেশে গুলি চালাতে শুরু করেন। শেষমেশ সেনা ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যায় ওই জঙ্গি, যাকে এখও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: কুপওয়ারার সেনা ঘাঁটিতে ফের জঙ্গি হানা, হত ৬
বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ কুপওয়ারার পঞ্জগ্রামে সেনা ঘাঁটিতে এই হামলা হয়। পঞ্জগ্রামের ঘাঁটি আপাতত রয়েছে ১১৫ নম্বর আর্টিলারি রেজিমেন্টের হাতে। টানা ৩৫ মিনিট লড়াইয়ের পরে খতম হয় দুই জঙ্গি। সংঘর্ষে নিহত হন ক্যাপ্টেন আয়ুষ যাদব, জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার ভূপ সিংহ গুজ্জর দুসা এবং নায়েক বেঙ্কট রমন। আহত হন আরও পাঁচ জওয়ান। নিহত জঙ্গিরা পাকিস্তানি এবং তারা জইশ-ই-মহম্মদের সদস্য বলে সেনার প্রাথমিক অনুমান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy