Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিদেশি চাঁদা, চুপিসারেই আইন বদল

তাৎপর্যপূর্ণ হল, এর ফলে শুধু যে বিজেপির সুবিধা হবে, তা নয়। কংগ্রেসও সুবিধা পাবে। কারণ দুই প্রধান দলই আইন ভেঙে বিদেশি সংস্থার থেকে চাঁদা নিয়েছে বলে অভিযোগ। দিল্লি হাইকোর্ট এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪২
Share: Save:

গত চল্লিশ বছরে কোনও রাজনৈতিক দল বেআইনি ভাবে বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে থাকলে, তার কোনও শাস্তি হবে না। এ বারের বাজেটে প্রায় নিঃশব্দে নরেন্দ্র মোদী সরকার সেই ব্যবস্থা করেছে।

তাৎপর্যপূর্ণ হল, এর ফলে শুধু যে বিজেপির সুবিধা হবে, তা নয়। কংগ্রেসও সুবিধা পাবে। কারণ দুই প্রধান দলই আইন ভেঙে বিদেশি সংস্থার থেকে চাঁদা নিয়েছে বলে অভিযোগ। দিল্লি হাইকোর্ট এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, বাজেটের অর্থ বিলে সেই তদন্ত এড়িয়ে যাওয়ারই ব্যবস্থা করেছেন অরুণ জেটলি।

কী রকম?

২০১৬-র বাজেটেই জেটলি অর্থ বিলের মাধ্যমে বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে বিদেশি সংস্থার থেকে চাঁদা নেওয়ার রাস্তা খুলে দেন। কিন্তু সে সময় ২০১০-এর পর থেকে নেওয়া চাঁদাকে আইনি বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। এ বার অর্থ বিলে ফের আইন সংশোধন করে একেবারে ১৯৭৬ সালের পর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলির জন্য বিদেশি সংস্থার চাঁদাকে আইনি বৈধতা দেওয়া হয়েছে। ১৯৭৬ সাল থেকেই বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর হয়েছিল। সেই আইনেরই ৪ নম্বর ধারায় নিষেধাজ্ঞা ছিল, এ দেশের রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি বিদেশি সংস্থার থেকে চাঁদা নিতে পারবে না।

কেন এই পদক্ষেপ? সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির অভিযোগ, ‘‘এত দিন যা আইন ছিল, তাতে বিজেপি-কংগ্রেসের মতো দলগুলি বিদেশি সংস্থার থেকে চাঁদা নিয়ে থাকলে তাদের শাস্তি হওয়ার কথা। গত ৪০ বছর ধরে বেআইনি কাজ করলেও যাতে কারও শাস্তি না হয়, সেই জন্যই আইন বদলে ফেলা হচ্ছে।’’ এত দিনের আইনে, এই অপরাধে ৫ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার ব্যবস্থা ছিল।

সরকারের অন্দরমহলে কার্যত এই অভিযোগ মেনেই নেওয়া হচ্ছে। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, দিল্লি হাইকোর্টে এডিআর (অ্যাসোসিয়েশন অব ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস) মামলা করে অভিযোগ তোলে, বিজেপি ও কংগ্রেস, দুই দলই ২০০৪ থেকে ২০১২-র মধ্যে বেদান্ত সংস্থা থেকে চাঁদা নিয়েছে। ২০১৪-য় দিল্লি হাইকোর্ট এই চাঁদাকে বেআইনি আখ্যা দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে নির্দেশ দেয়, বিজেপি-কংগ্রেসের সমস্ত অ্যাকাউন্ট নিয়ে তদন্ত করতে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এত দিন তা নিয়ে টালবাহানা করছিল। কিন্তু গত অক্টোবরে আদালত হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ছ’মাসের মধ্যেই যা করার করতে হবে। তার আগেই আইন বদলে ফেলার রাস্তা তৈরি করল মোদী সরকার।

অর্থ মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যা, এখন বহু সংস্থাতেই ৫১ শতাংশের বেশি বিদেশি লগ্নি রয়েছে। অর্থ মন্ত্রক বা বাণিজ্য মন্ত্রকের খাতায় সেগুলি ভারতীয় সংস্থা। এ দেশেই অবস্থিত। কিন্তু বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী এগুলি বিদেশি সংস্থা। এই কারণেই আইনে সংশোধন করা হয়েছে। অর্থ বিলের মাধ্যমে হচ্ছে বলে রাজ্যসভায় তা আটকাবে না। সর্বোপরি বাম দলগুলি এর বিরুদ্ধে সরব হলেও কংগ্রেস নিশ্চুপ। ইয়েচুরি প্রশ্ন তুলছেন, ‘‘কংগ্রেস-বিজেপির কি চোখে চোখে ইশারা হয়ে গিয়েছে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Donation International Delhi High Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE