Advertisement
১০ মে ২০২৪

কাছাড়ে ‘নেতা-হীন’ বিজেপি অফিস

কাছাড় জেলায় বিজেপি-র অস্তিত্ব সরকারি কর্মসূচিতে সীমিত হয়ে পড়েছে— এমন জল্পনা ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:০৫
Share: Save:

কাছাড় জেলায় বিজেপি-র অস্তিত্ব সরকারি কর্মসূচিতে সীমিত হয়ে পড়েছে— এমন জল্পনা ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যেই।

জেলার বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, গত ৬ মাসে শাসক দলের সাংগঠনিক কাজকর্ম নেই বললেই চলে। ইটখলায় জেলা কার্যালয়েও নেতাদের দেখা মেলে না। যেমন বিজেপি, তেমন অবস্থা শাখা সংগঠনগুলির। কিছু দিন আগেও কথায় কথায় কুশপুতুল নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়া যুবকর্মীরা এখন আর পার্টি অফিস-মুখো হন না।

দলের জেলা সভাপতি থেকে শিলচরের বিধায়ক, যুব মোর্চার সভাপতিও সংগঠনের এই সঙ্কটের কথা। স্বীকার করছেন। কেন্দ্রে বিজেপির সরকার দায়িত্ব নিয়েছে আড়াই বছর পেরিয়েছে। রাজ্যেও দল ৬ মাস আগে ক্ষমতাসীন হয়। পুরসভাতেও বিজেপিরই বোর্ড। এর পরও কেন এই পরিস্থিতি? না কি বেশি ক্ষমতার জন্যই সংগঠনে মনোযোগী নন কেউ? কারণ অনুসন্ধানেও আগ্রহ নেই নেতা-কর্মীদের।

জেলা সভাপতি কৌশিক রাই দু’দিন আগে উত্তরপ্রদেশ গিয়েছেন। সেখান থেকেই মোবাইলে বলেন, ‘‘ঠিক কথা, কেমন একটা ঝিমুনি ভাব দলের মধ্যে।’’ যুব মোর্চার সভাপতি রাজেশ দাস বললেন, ‘‘সরকারে এলে সংগঠন মজবুত হয়। আমাদের ক্ষেত্রে উল্টোটা ঘটছে।’’ আক্ষেপ ব্যক্ত করেন শিলচরের বিজেপি বিধায়ক দিলীপকুমার পালও। তবে বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার হওয়ায় তাঁর একটা সুবিধার জায়গাও রয়েছে। সংগঠন নিয়ে তাঁর আর কৈফিয়তের ব্যাপার নেই। কারণ প্রোটোকলের জেরে তিনি ইচ্ছা করলেও দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে পারেন না।

কৌশিক রাই, দিলীপকুমার পাল, রাজেশ দাস— দলের ভিতরে এক গোষ্ঠীভুক্ত না হলেও সবার বক্তব্যে মিল রয়েছে। তিন জনই মনে করছেন, জেলা সভাপতির নাম ঘোষণার পরই দল উজ্জীবিত হয়ে উঠবে। কে সভাপতি হন, সবাই এখন সেই অপেক্ষায়। বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যে সাংগঠনিক নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ব্লক সভাপতি পর্যন্ত বেশ উত্তেজনার মধ্যে ভোটগ্রহণ হয়। কিন্তু জেলা সভাপতি-পর্ব আসতেই বিধানসভা ভোটের জন্য সাংগঠনিক নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। পরে নির্দেশ আসে প্যানেল তৈরির জন্য। গুয়াহাটিতে বসেই ৩৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ২৮টিতে সভাপতি বাছাই হয়। শুধু জেলাসদরে সভা ডেকে মুখবন্ধ খাম খুলে তাঁর নাম ঘোষণা করেন রাজ্য কমিটির কোনও প্রতিনিধি। পার্শ্ববর্তী করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দিতে এই প্রক্রিয়ায় সভাপতি নির্বাচন হয়েছে। কাছাড়ে তাও আটকে রয়েছে। সাংগঠনিক নির্বাচনের রাজ্য রিটার্নিং অফিসার রাজদীপ রায় অবশ্য এগুলিকে সমস্যা বলে মানতে নারাজ। তিনি নিজে প্রদেশ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক। কোর কমিটিরও অন্যতম। রাজদীপবাবুর কথায়, ‘‘এখন আগে প্রদেশ সভাপতির নাম চূড়ান্ত হবে। লখিমপুর লোকসভা ও বৈঠালাংশু বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনের জন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এখন আর কোনও সমস্যা নেই। প্রদেশ সভাপতি নির্বাচনের পর বাকি ১০ জেলায় সভাপতি স্থির করা হবে।’’ তাতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলেই আশাবাদী রাজদীপ রায়।

রাজদীপবাবু বেশি সময় লাগবে না বললেও বিষয়টি অধৈর্য করে তুলছে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, উদয়শঙ্কর গোস্বামীদেরও। তাঁদের প্রতিক্রিয়া— ‘ওইগুলি দলই জানে, কবে যে আর ঘোষণা হবে।’

জেলা বিজেপির সভাপতি পদে আরেকবার দায়িত্ব পেতে আগ্রহী কৌশিক রাই। পরিমল শুক্লবৈদ্য, কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, দিলীপকুমার পালদের পছন্দ উদয়শঙ্কর গোস্বামী। জটিলতা কাটাতে দল দু!জনকেই বাদ দিয়ে তৃতীয় কাউকে সভাপতি করতে পারে বলেও কানাঘুষো চলছে। সে ক্ষেত্রে সামনে আসছে বিমলেন্দু রায়, পার্থ চন্দ, বাসুদেব শর্মা, শান্তনু নায়েকের নাম। সাধারণ কর্মীদের বিস্ময়, এত নাম! কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুদ্রা বদলের পর সাধারণ মানুষের সঙ্গে একটি লোককে কথা বলতে দেখা যায়নি! রাজ্য সরকারের কর্মসূচি নিয়েই বা সাংগঠনিক স্তরে প্রচার কোথায়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cachar district BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE