দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক জালিয়াতির তদন্তে যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গড়ার পক্ষে বাকি বিরোধীরা। একা তৃণমূলের উল্টো সুর! তারা চায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও সরকারের উপরে আন্দোলনের চাপ। বিরোধী শিবিরে প্রশ্ন উঠেছে, লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল কী তবে দু’নৌকায় পা দিতে চলতে চাইছে? তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন আজ এই অভিযোগ উড়িয়ে ব্যাখ্যা দিলেন, কেন তাঁরা জেপিসি চাইছেন না।
রাহুল গাঁধীর সভাপতিত্বে দলের বৈঠকে জেপিসি নিয়ে চাপ তৈরির প্রস্তাব উঠেছিল গত সপ্তাহে। এনসিপি বা শরদ যাদবেরাও এর পরে জানান, সরকারকে চেপে ধরার এটাই সুযোগ। বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় দফা পর্যন্ত অপেক্ষা না করে এখনই আন্দোলনে নামা উচিত। আজ জেপিসির পক্ষে সওয়াল করে সিপিএম-ও। বিরোধী শিবিরকে একজোট হতে দেখেই তড়িঘড়ি আজ জেপিসি নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করল তৃণমূল। এর আগে নোট বাতিল নিয়েও বিরোধীরা একজোটে জেপিসির দাবি তুলেছিল। কিন্তু জেপিসি-তে কাজের কাজ কিছু হয় না— এই যু্ক্তিতে শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে আসে তৃণমূল। ফাটল ধরে বিরোধী ঐক্যে। এ বারে যাতে বিরোধী জোট ভাঙার দায় ঘাড়ে না আসে, তাই আগেভাগেই অবস্থান জানিয়ে রাখল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
কংগ্রেসের অধিকাংশ নেতা মনে করেন, মোদীর কাছে নিরপেক্ষ তদন্ত প্রত্যাশা করাটা বাড়াবাড়ি। নীরব-কাণ্ডে তদন্ত ভাল করে শুরু হওয়ার আগেই সরকার, বিশেষ করে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি যে ভাবে দায় এড়াতে শুরু করেছেন, তাতে তদন্তের ফলও যে কী দাঁড়াবে সেটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। তাই জেপিসি দরকার। যাতে বিরোধীরা একজোটে সরকারকে আরও চেপে ধরতে পারে।
তৃণমূল কেন জেপিসি চাইছে না?
ডেরেক সামনে রেখেছেন বেশ ক’টি যু্ক্তি। এক, জেপিসি হলে বিজেপি সাংসদই বেশি থাকবে। থাকবে তাঁদেরই দাপট। অহেতুক শাসক দলকে সেই ফায়দা দেওয়া অর্থহীন। দুই, জেপিসি হলে সাংসদেরা আমলাদের ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে তলব করে জবাবদিহি চাইতে পারেন। তার বেশি এক্তিয়ার নেই কমিটির। তিন, জেপিসি হওয়া মানে বিষয়টিকে ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া। তাতে সরকারেরই সুবিধা। তারা বলতে পারবে, সংসদীয় কমিটি তদন্ত করছে, তাই আন্দোলন করা অর্থহীন। চার, এখন জেপিসি গড়া হলে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে তার রিপোর্ট আসার সম্ভাবনা নেই। পাঁচ, জেপিসি নিয়ে অভিজ্ঞতা। ডেরেকের কথায়, ‘‘বফর্স, শেয়ার মার্কেট দুর্নীতি জেপিসি-র রিপোর্ট এখনও পড়ে রয়েছে। টুজি দুর্নীতির রিপোর্ট মেনে নেননি ৩০ জন সাংসদের মধ্যে ১২ জন। ২০১৩ সালের ভিভিআইপি চপার বা ২০১৫ সালের জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে জেপিসি-র রিপোর্ট জমাই পড়েনি। অতীত অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা জেপিসি চাইছি না।’’ তৃণমূল নেতৃত্ব তাই মনে করছেন, বিষয়টিকে নিয়ে সংসদের ভিতরে-বাইরে সরব হয়ে সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলাটা ঢের বেশি কার্যকর হবে। কারণ, তাতে রাজনৈতিক ভাবে চাপে থাকবে শাসক শিবির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy