সুপ্রিম কোর্টে নিজেদের অবস্থান জানাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। —ফাইল চিত্র।
বিহারের ভোটার তালিকার বিশেষ ও নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) নির্দেশ জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে এই সংশোধনের কাজ সেরে ফেলতে চায় কমিশন। বিহারের ভোটারদের মধ্যে নির্দিষ্ট ফর্ম বিলি করা হয়েছে। তা পূরণ করে নথি-সহ জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট দফতরে। নথি হিসাবে দেখাতে হবে নিজের এবং বাবা-মায়ের জন্মের শংসাপত্র। আধার কার্ড বা রেশন কার্ডের মতো নথি এ ক্ষেত্রে বিবেচিত হবে না। এতেই আপত্তি তুলেছে বিরোধীরা। অভিযোগ, এর ফলে তিন কোটি মানুষ ভোটাধিকার হারাতে পারেন। যাঁরা এত দিন ধরে ভোট দিয়ে আসছেন, কেন আবার তাঁদের নথি দিয়ে ভোটাধিকার প্রমাণ করতে হবে, প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন জানায়, ২০০৩-এর ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম ছিল, তাঁদের সমস্যা নেই। কিন্তু বাকিদের মধ্যে যাঁদের জন্ম ১৯৮৭ সালের আগে, তাঁদের জন্মের প্রমাণপত্র দিতে হবে। তাঁদের ক্ষেত্রে গ্রাহ্য মোট ১১টি নথির কথা জানিয়েছে কমিশন। তাঁরা গত লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়ে থাকলেও এই নথি দিতে হবে। এ ছাড়া, ১৯৮৭ থেকে ২০০৪-এর মধ্যে যাঁরা জন্মেছেন, তাঁদের নিজেদের এবং বাবা-মায়ের মধ্যে যে কোনও এক জনের জন্মের প্রমাণপত্র দিতে হবে। ২০০৪-এর পরে জন্ম হলে নিজের ও বাবা-মায়ের দু’জনেরই জন্মের প্রমাণপত্র দিতে হবে।
কমিশনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা রুজু হয়। মামলা করেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও। মহুয়া ছাড়াও কমিশনের এসআইআরের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে অসরকারি সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্ম্স, পিইউসিএল। মামলা করেছেন আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা, সমাজকর্মী যোগেন্দ্র যাদবও।
মহুয়া-সহ মামলাকারীদের অভিযোগ, এই নির্দেশ সংবিধান, জনপ্রতিনিধি আইনের বিরোধী। মহুয়া আবেদনে লেখেন, ‘‘ভারতীয় সংবিধানের ১৪, ১৯ (১), ২১, ৩২৫, ৩২৬ ধারা, জনপ্রতিনিধি আইন এবং ভোটার নিবন্ধনের নিয়ম লঙ্ঘন করছে কমিশনের নির্দেশ। তা যদি বাতিল না-করা হয়, এর ফলে বহু মানুষ ভোটাধিকার হারাবেন। এটা গণতন্ত্রের অসম্মান এবং দেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কাঁটা।’’ বাংলা-সহ অন্যান্য রাজ্যে যাতে এই পদক্ষেপ না করা হয়, তার জন্য সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশও চান মহুয়া।
আগামী ২৮ জুলাই পরবর্তী শুনানি। এক সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দেবে কমিশন। পাল্টা হলফনামা দেবেন মামলাকারীরা।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, আধার কার্ড, এপিক (ভোটার কার্ড) এবং রেশন কার্ড প্রয়োজনীয় নথি কি না, তা বিবেচনা করে দেখতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।
সুপ্রিম কোর্ট: আমাদের মতে, ন্যায়বিচারের স্বার্থে আধার কার্ড, ভোটার পরিচয়পত্র (এপিক) এবং রেশন কার্ড অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। একই সঙ্গে স্পষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে যে, ওই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের উপর নির্ভর করবে। তবে যদি কমিশন ওই নথিগুলি গ্রহণ না-করে, তবে তার উপযুক্ত কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। তাতে ভোটাররা সন্তুষ্ট হবেন।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এখনই কমিশনের কাজে স্থগিতাদেশ দেওয়া হচ্ছে না। যদি ১ অগস্ট খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়, তবে ২৮ জুলাইয়ের আগে শুনানির জন্য আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে।
কমিশনের আইনজীবী: কমিশনের উপর বিশ্বাস রাখা হোক। অগস্টের প্রথম সপ্তাহে মামলাটি রাখা হোক। তত দিনে বিহারে ফর্ম পূরণ শেষ হয়ে যাবে। তাতে বিষয়টি সবার কাছে আরও স্পষ্ট হবে।
বিচারপতি ধুলিয়া: নির্দেশ দিচ্ছি না, কিন্তু আধার কার্ড বিবেচনার মধ্যে রাখুন।
বিচারপতি ধুলিয়া: কমিশনের উপর বিশ্বাস রাখছি। এখনই কোনও হস্তক্ষেপ করছি না। কিন্তু খসরা ভোটার তালিকা প্রকাশ করা যাবে না।
কমিশন: তালিকা প্রকাশ করতে দিন। প্রয়োজনে পরে আদালত হস্তক্ষেপ করুক। আপাতত তালিকা প্রকাশ করতে দিন।
বিচারপতি: আধার আইনত স্বীকৃত। সেটা কী ভাবে উপেক্ষা করা যায়?
কমিশন: ভোটার তালিকা নিয়ে অনেক কিছু করা হচ্ছে। দয়া করে আপাতত আধারের বিষয়টি নিয়ে নির্দেশ দেবেন না।
বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে আদালতের কাছে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি চাইলেন কমিশনের আইনজীবী। বিচারপতি ধুলিয়ার মন্তব্য, “আমরা বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু সময় নিয়ে আমরা চিন্তিত।” বিচারপতি আরও বলেন, “কমিশনকে সহজ এবং সঠিক পদ্ধতি মেনে কাজ করা উচিত। প্রাথমিক ভাবে দেখে মনে হচ্ছে বিষয়টি বেশ জটিল।”
বিচারপতির তাড়াহুড়ো সংক্রান্ত প্রশ্নের প্রেক্ষিতে কমিশনের আইনজীবী বলেন, “অনেকগুলো বিষয় বিবেচনা করতে হবে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই অনেক কিছু করা যাবে।”
কমিশনের উদ্দেশে বিচারপতি বাগচীর প্রশ্ন, “এক মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করতে চাইছেন কেন? জনগণনা সারা বছর ধরে হয়। আপনারা এত তাড়াহুড়ো করছেন কেন?”
কমিশন: ভোটার তালিকায় কাউকে আমরা বাদ দিচ্ছি না। কারও বাবা-মায়ের নাম থাকলে ১১টি নথি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ২০০৩ সালে মাত্র তিনটি নথির কথা বলা হয়েছিল। এখন ১১টি নথির কথার বলা হয়েছে।
কমিশন: আধার নাগরিকত্ব বা বাসস্থানের প্রমাণ নয়। সব আবেদনপত্র জমা হওয়ার পরে যাচাই পর্ব শুরু হবে। সেখানে বিষয়টি বিবেচনা করে আধার যাচাই করা যেতে পারে।
বিচারপতি বাগচী: কিন্তু তখন তো খসড়া ভোটার তালিকা তৈরি হয়ে যাবে। ফলে সম্ভাবনা থাকে যে খসড়া তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার?
কমিশন: ধরুন বিহারের নির্বাচন নভেম্বর মাসে। তার আগে প্রয়োজনে পরে আমরা পদ্ধতি সাময়িক স্থগিত করব। পরে আবার শুরু হবে। আমাদের উদ্দেশ্য, আমরা এই পদ্ধতিতে ভোটার তালিকায় কোনও খামতি রাখছি না। প্রতিটি বৈধ ভোটার তালিকায় থাকবেন। শুধুমাত্র মৃত ও অন্যত্র চলে গিয়েছেন এমন ভোটাররা বাদ পড়বেন।
সুপ্রিম কোর্টে কমিশনের আইনজীবী বলেন, “আধার কার্ড ভারতে বসবাসকারী নাগরিকদের দেওয়া যেতে পারে। আধার আইনের অধীনে প্রতিটি বাসিন্দার অধিকার আছে আধার কার্ড পাওয়ার। কিন্তু আধার নম্বর নাগরিকত্ব প্রমাণ করে না। তবে কেউ যদি আমার পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলে, আমি আধার দেখিয়ে তা প্রমাণ করতে পারি।”
বিচারপতি ধুলিয়া বলেন, “জাতি শংসাপত্র আধারের ভিত্তিতে দেওয়া হয়। আপনাদের প্রয়োজনীয় তালিকায় জাতি শংসাপত্র রয়েছে। অথচ আধার নেই।”
কমিশনের আইনজীবী বলেন, “জাতি শংসাপত্র শুধুমাত্র আধারের উপর ভিত্তি করে দেওয়া হয় না।”
বিচারপতি ধুলিয়া বলেন, “কিন্তু এখন আধার অনেক গুরুত্তপূর্ণ নথি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আপনারা সেই নথিকেই বাদ দিতে চাইছেন।”
বিচারপতির প্রশ্নের প্রেক্ষিতে কমিশনের আইনজীবী বলেন, “আধার কার্ড পরিচয় প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু অন্য বিষয়ের জন্য তার ব্যবহার সীমিত। প্রতিটি নথির নিজস্ব সীমিত উদ্দেশ্য রয়েছে, শুধুমাত্র সেই উদ্দেশ্যেই সেটা বৈধ।”
নথি হিসাবে আধার কার্ড দেওয়া যাবে কি না, কমিশনের কাছে জানতে চাইলেন বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy