ভোটের ঢাকে কাঠি পড়তেই আর কোনও রাখঢাক নেই! কুকথার বাঁধ ভাঙছে!
লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে নেতানেত্রীরা প্রতিপক্ষকে নিশানা করতে অনেক সময়েই শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। কুরুচিকর-অশালীন মন্তব্য রুখতে শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু কমিশনের আধিকারিকেরা ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করে নিয়েছেন, ক্ষমতা থাকলেও তেমন কার্যকর পদক্ষেপ করার সুযোগ তাঁদের নেই।
গত নির্বাচনগুলি থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বারে ভোটপ্রচারে কুকথা রুখতে তৎপর কমিশন। বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তৈরি হয়েছে নতুন নিয়ম। কিন্তু নেতাদের কু-বাক্য আটকায় কে! কুরুচিকর আক্রমণের সাম্প্রতিকতম শিকার হরিয়ানার গায়িকা তথা নৃত্যশিল্পী স্বপ্না চৌধরি। তাঁর কংগ্রেসে যোগদানের জল্পনা শুরু হতেই কটূক্তি করেন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি বিধায়ক সুরেন্দ্র সিংহ। স্বপ্নাকে সামনে রেখে তিনি সনিয়া-রাহুল গাঁধীকে আক্রমণ করে বসেন। স্বপ্নার সঙ্গে সনিয়ার তুলনা টেনে ওই বিজেপি বিধায়ক বলেছিলেন, সনিয়া গাঁধীও আগে ইটালিতে ওই পেশাতেই ছিলেন। তাই রাহুলের উচিত স্বপ্নাকে বিয়ে করা।
কংগ্রেসের মণিশঙ্কর আইয়ারের ‘নিচ কিসম কা আদমি’ মন্তব্যের নিশানা ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আবার এই মোদীই নাম না করে রাহুলকে ‘ডিসলেক্সিক’ বলে হেয় করতে পিছপা হননি। মনোচিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম বলছেন, ‘‘আসলে রাজনৈতিক প্রচার এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। মানুষ সে সম্পর্কে অবহিত।’’ কুকথায় অনেককে পিছনে ফেলতে পারেন বিহারের বিজেপি সাংসদ গিরিরাজ সিংহ। গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান দেখলে দেখা যাবে, কুকথার প্রশ্নে একাই বাকি সব দলের নেতাদের পিছনে ফেলে দিয়েছেন তিনি।
কুকথা নিয়ে বিতর্ক সম্পর্কে কংগ্রেসের অভিযোগ, ভোটপ্রচার যত তীব্র হচ্ছে, ততই বিজেপিতে একের পর এক গিরিরাজের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘রাহুল-প্রিয়ঙ্কা জুটি দেখে বিজেপি রীতিমতো আতঙ্কিত। তাই কখনও রাহুলকে ‘নপুংসক’ বলা হচ্ছে। প্রিয়ঙ্কার তুলনা হচ্ছে সাইবেরিয়ান পরিযায়ী পাখির সঙ্গে।’’
বিজেপির পাল্টা বক্তব্য, রাহুল বা দিগ্বিজয় সিংহ যখন বালাকোট নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন, প্রশ্ন তোলেন জওয়ানদের আত্মত্যাগ নিয়ে, তখন সেগুলি কি কুকথা নয়!
কমিশন অবশ্য জানিয়েছে, এ বার ভোট প্রচারে কুকথা রুখতে তারা বদ্ধপরিকর। প্রচারের ময়দানে কেউ কটূবাক্য বলছেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন পর্যবেক্ষকেরা। নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াও বহু ক্ষেত্রে কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পদক্ষেপ করেছে। প্রয়োজন পড়লে প্রার্থীদের কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়। উত্তর সন্তোষজনক না হলে সতর্কও করা হয় প্রার্থীকে। ব্যস, এই টুকুই! এ প্রশ্নে কমিশন কিন্তু নীরব।
বাধা কোথায়?
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি কোনও ব্যক্তি তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে ভেদাভেদ ছড়ায়, তা হলে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩বি ধারায় তাঁর তিন বছরের জেল হতে পারে। কিন্তু অভিযোগ দায়েরের প্রশ্নে পুলিশের উপর নির্ভর করতে হয় কমিশনকে। দীর্ঘ দিন ধরে মামলা ঝুলে থাকা এবং দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার খুব কম হওয়া কমিশনের ভূমিকাকে কার্যত দুর্বল করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy