Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

সব সমীক্ষায় আবার মোদী! ৩০০ পার করার ইঙ্গিত প্রবল

কিছু বুথফেরত সমীক্ষা মোদী-শাহের দাবি পুষ্ট করলেও সকলের মত এক নয়। বিজেপি একাই তিনশোটির বেশি আসন পেতে পারে, এমন অনুমান অনেকেই করেনি। তবে এনডিএ-কে নিয়ে মোদী যে ফের সরকার গড়বেন, তা নিয়ে তেমন দ্বিমত নেই সমীক্ষাকারীদের মনে।

নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ। ফাইল চিত্র।

নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৯ ০৩:২৭
Share: Save:

সাত দফার ভোট শেষে সব বুথ ফেরত সমীক্ষারই ইঙ্গিত, শরিকদের নিয়ে ফের কেন্দ্রে সরকার গড়তে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী।

দেশে, এমনকি বিদেশেও বুথফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত যে সব সময় মেলে, এমন নয়। এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়েও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়াতেও সমীক্ষা বলেছিল, সে দেশে কনজারভেটিভদের উৎখাত করে ক্ষমতায় আসবে লেবার পার্টি। কিন্তু ফল প্রকাশের পর দেখা গিয়েছে, কনজারভেটিভরাই ক্ষমতা ধরে রেখেছে। তা সত্ত্বেও এই ধরনের সমীক্ষায় মোটের উপর ভোটারের মনের একটি আভাস পাওয়া যায়। আর এ বারে সব বুথফেরত সমীক্ষাই বলছে, সরকার গড়ছে এনডিএই।

এবিপি নিউজ-নিয়েলসেনের মতে, এনডিএ ২৭৭টি আসন পেতে পারে। ইউপিএ ১৩০, আর অন্যরা ১৩৫টি। আবার ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিস পোলের সমীক্ষা এনডিএ-কে ৩৩৯-৩৬৫টি আসন দিচ্ছে, ইউপিএ-কে ৭৭-১০৮টি। মোট ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে ভোট হয়েছে ৫৪২টিতে। মোট আসন ধরলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭২টি আসন। দু’দিন আগেই দিল্লিতে বিজেপি দফতরে নরেন্দ্র মোদীকে পাশে নিয়ে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, বিজেপি একাই তিনশোটি আসন পার করবে। খোদ প্রধানমন্ত্রীও বলেন, বিজেপি এ বারেও পরপর দু’বার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে চলেছে। ভারতের ইতিহাসে অনেক বছর পরে যা ঘটতে চলেছে।

কিছু বুথফেরত সমীক্ষা মোদী-শাহের দাবি পুষ্ট করলেও সকলের মত এক নয়। বিজেপি একাই তিনশোটির বেশি আসন পেতে পারে, এমন অনুমান অনেকেই করেনি। তবে এনডিএ-কে নিয়ে মোদী যে ফের সরকার গড়বেন, তা নিয়ে তেমন দ্বিমত নেই সমীক্ষাকারীদের মনে। আর বিভিন্ন সমীক্ষার এই ফারাক আসলে ফুটে উঠেছে গোবলয়ের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশের মন বুঝতে।

নিয়েলসেনের প্রাথমিক অনুমান, এসপি-বিএসপি জোট রাজ্যের ৮০টির মধ্যে ৫৬টি আসন পাবে। বিজেপি ২২টি। পরে অবশ্য তারাও সংশোধন করে এস-বিএসপির আসন কমিয়ে ৪৫-এ নিয়ে আসে। আর বিজেপির আসন বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫। ইন্ডিয়া টুডের মতে, উত্তরপ্রদেশে আগের থেকে একটু আসন কমলেও ৬২-৬৮টি আসন ধরে রাখতে পারবে বিজেপি জোট। অখিলেশ-মায়াবতীরা পাবেন ১০-১৬টি আসন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সব সমীক্ষাতেই অবশ্য একটি বিষয় সামনে এসেছে। সেটি হল, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় ও রাজস্থানের মতো যে তিন রাজ্যে সম্প্রতি ক্ষমতায় এসেছিল কংগ্রেস, সেখানে বিজেপির আসন সংখ্যা কমার কথা বলা হচ্ছে না। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানে বেশিরভাগ আসনই ধরে রাখতে পারছে বিজেপি। আর কর্নাটক ছাড়া দক্ষিণের অন্য কোনও রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের আসন সংখ্যা বাড়ছে না। উত্তরপ্রদেশে যে ক্ষতির কথা বলা হচ্ছে, তা পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশার মতো পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি থেকে মেরামতের সম্ভাবনা থাকছে।

সব সমীক্ষাই এনডিএকে এগিয়ে রাখার পরে স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধী শিবিরের নেতারা ২৩ মে আসল ফল প্রকাশ পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা বলেছেন। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘এই বুথ ফেরত সমীক্ষা আমি মানি না। কংগ্রেস আরও ভাল ফল করবে।’’ একই মত রাজীব শুক্লরও। তিনি বলেন, ‘‘অতীতে এমন বুথ ফেরত সমীক্ষা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ২৩ তারিখের ফলেই আসল ছবি ফুটে উঠবে।’’ ওমর আবদুল্লার মন্তব্য, ‘‘টেলিভিশন বন্ধ রাখুন।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেও এই সমীক্ষা ‘গসিপ’। এ প্রসঙ্গেই উঠে আসছে ২০০৪ সালের ভোটে অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকার গড়তে না পারার উদাহরণ। সে বার ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’-এর প্রচারের হাওয়ায় বাজপেয়ীর ফিরে আসা নিশ্চিত বলেই ভেবেছিলেন সমীক্ষাকারীরা। ফল হয়েছিল উল্টো। তবে আজকের বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলি প্রকাশের পরে বিজেপির মুখপাত্ররা বলছেন, ‘‘দু’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি যে আসন সংখ্যা অনুমান করেছেন, সেটিই মিলবে অক্ষরে অক্ষরে। কারণ, দেশের সব প্রান্ত থেকে বুথের ফিডব্যাকের ভিত্তিতেই সংখ্যাটি বলা হয়েছে। অর্থাৎ, বিজেপি একাই তিনশো পার করবে।’’

তবে ঘরোয়া আলোচনায় বোঝা যাচ্ছে, বিজেপি এখনও যে এই সংখ্যা নিয়ে পুরোপুরি আশ্বস্ত, এমন নয়। তাঁদের মতে, ২০১৪ সালে প্রবল মোদী-ঝড়ে যে পরিমাণ ভোট পড়েছিল, এ বারেও প্রায় একই হারে পড়েছে। এ বারে অবশ্য মহিলা ও প্রথম বারের ভোটারদের সিংহভাগ সমর্থন বিজেপির দিকে যাবে। তবে বিজেপির ফল খুব খারাপ হলেও ২২০টির নীচে যাবে না। যদি এনডিএর শরিকদের নিয়েও সরকার না হয়, তা হলেও অ-কংগ্রেসি ও অ-বিজেপি দলের নেতাদের নিয়ে অনায়াসে সরকার গড়ে নেবে এনডিএ। আর তার পরেই আক্রমণাত্মক হবে দল। তখনই বিশ্লেষণ হবে, নরেন্দ্র মোদীকে মাত দিতে রাহুল গাঁধী-প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার জুটি আর ‘মহাভেজাল’-এর জোট কী কতটা দাগ কাটল?

আর ২৩ তারিখই বোঝা যাবে, গত বারের মতো এ বারও মোদী ঝড়ে ভেসে যাবে দেশ, নাকি উঠে আসবে বিকল্প সম্ভাবনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE