প্রতীকী ছবি।
সকাল থেকে দ্বিধায় ছিলেন ত্রিনাথ সাবারা। কোথায় ভোট দিতে যাবেন। ওড়িশা, না অন্ধ্রপ্রদেশ। দুই রাজ্যের ভোটার তালিকাতেই নাম রয়েছে তাঁর। রয়েছে দু’টো আলাদা ভোটার কার্ডও। শুধু তাঁর নয়, গ্রামের অনেকেরই। কোরাপুট-বিশাখাপত্তনম লাগোয়া এই এলাকা ওড়িশার না অন্ধ্রের, সেটাই পুরোপুরি স্পষ্ট নয় যে!
ওড়িশায় এ বার ভোট চার দফায়। আজ প্রথম দফায় ভোট নেওয়া হল কোরাপুট, নবরঙপুর, কালাহান্ডি এবং ব্রহ্মপুর লোকসভা কেন্দ্র ও তার আওতায় থাকা ২৮টি বিধানসভা আসনে। তার মধ্যে কোটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৮টি গ্রামের মধ্যে ২১টি ঘিরেই সমস্যা। ওড়িশা ও অন্ধ্র দুই রাজ্যেরই দাবি, এই এলাকা তাদের। তাই এলাকার বাসিন্দাদের জোড়া ভোটার কার্ড, জোড়া রেশন কার্ড, নাম রয়েছে দুই রাজ্যেরই সামাজিক প্রকল্পের তালিকায়। কোথাও কোথাও পঞ্চায়েত প্রধানও দু’রাজ্যের দু’জন। তবে গোলমাল বেধেছিল আধার কার্ড তৈরির সময়। বায়োমেট্রিকের কারণে দু’টো আলাদা আধার কার্ড তৈরি অসম্ভব। ফলে সেই কার্ড অনুসারে গ্রামের কেউ কেউ ওড়িশার বাসিন্দা, কেউ কেউ অন্ধ্রের।
১৯৫৩ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের জন্মলগ্ন থেকেই কোটিয়া নিয়ে দুই রাজ্যের বিবাদ। ওড়িশার বক্তব্য, ১৯৩৬ সালে তারা যখন পৃথক রাজ্য হয়, তখন থেকেই এই এলাকা তাদের এক্তিয়ারে। এ নিয়ে তৎকালীন মাদ্রাজ প্রদেশের সঙ্গে বিবাদও ছিল না। ১৯৪৫ সাল থেকে কোটিয়া রয়েছে ওড়িশার মানচিত্রেই। অন্ধ্রের পাল্টা বক্তব্য, স্বাধীনতার আগের এবং পরের পরিস্থিতি এক নয়। দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের নীতি গৃহীত হয়েছিল। সেই সূত্র ধরেই কোটিয়া এলাকায় তাদের দাবিই সবচেয়ে বেশি। প্রশাসনিক আধিকারিকেরা বলছেন, রাজস্ব সমীক্ষার সময় কোনও ভাবে বাদ পড়ে যাওয়ার ফলেই এই ২১টা গ্রাম না ঘরকা না ঘাটকা।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
১৯৬৮ সালে বিবাদ গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। দীর্ঘ সওয়াল, পাল্টা সওয়ালের পরে ২০০৬ সালে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, দুই রাজ্যের মধ্যে সীমানা সংক্রান্ত বিবাদের নিষ্পত্তি তাদের এক্তিয়ারে পড়ে না। এ ব্যাপারে যা করার সংসদকেই করতে হবে। বিবাদভুক্ত এলাকায় স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশও দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
কিন্তু কোটিয়াকে ঘিরে টানাপড়েন কমেনি। আর তার জেরে জীবন জেরবার বাসিন্দাদের। তাঁদের অভিযোগ, এলাকা নিয়ে দাবিদাওয়া যা-ই থাক, তাঁদের দিকে তেমন নজর নেই কোনও রাজ্যের প্রশাসনেরই। গ্রামের পর গ্রাম জুড়ে অনটনের ছবি। পাহাড়ি জমিতে কোনওমতে একটা দু’টো ফসল বুনে, ঝাঁটা তৈরি করে দিন গুজরান হয় আদিবাসী পরিবারগুলির।
তবে ভোট এলেই নজর পড়ে তাঁদের দিকে। রাজনৈতিক দলগুলি তো বটেই, দুই রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরাও এসে হাজির হন বুঝিয়ে সুজিয়ে নিজেদের রাজ্যে ভোট দিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ২০১৪ সালে অবশ্য সে নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি। দু’রাজ্যকেই ‘খুশি’ করতে পেরেছিলেন গ্রামবাসীরা। কারণ, সে বার ভোট হয়েছিল আলাদা আলাদা দিনে। ওড়িশার কোরাপুট আসনে ১০ এপ্রিল। অন্ধ্রের আরাকু আসনে ৭ মে।
এ বার একই দিন ভোট হওয়ায় সব গোলমাল। গত রাত থেকে ঝেঁপে বৃষ্টি নেমেছে কোরাপুটে। ভোট কেন্দ্রও কিছু ঘরের কাছে নয়। ওড়িশা না অন্ধ্র, এই দোনামোনায় শেষ পর্যন্ত আর ভোট দিতে যাওয়া হয়নি ত্রিনাথের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy