ছবি এএফপি।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভোট প্রচার শেষ করে পাঁচ বছরের প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। একটিও প্রশ্ন নেননি। কিন্তু দাবি করেছিলেন অনেক বছর পর এ বার কোনও দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে।
মোদীর দাবি কতটা সত্যি, রাত পোহালেই প্রমাণ হবে। কিন্তু কথাটা যদি সত্যি হয়, তা হলে স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটতে চলেছে ৪৮ বছর পর। শেষ বার এমন হয়েছিল ১৯৭১ সালে। ১৯৬৭ সালের পর ইন্দিরা গাঁধী ফের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। যদিও সেই সময় ইন্দিরা নতুন দল গড়েছিলেন কংগ্রেস (আর)। কামরাজের কংগ্রেস (ও)-কে পুরনো কংগ্রেস বলা হত। ইন্দিরা ১৯৮০ সালেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু তার আগে মাঝে মোরারজি দেশাই ও চরণ সিংহ প্রধানমন্ত্রী হয়ে গিয়েছেন।
কংগ্রেসের এক নেতার মতে, ‘‘সেই হিসেবে দেখতে গেলে কংগ্রেস ১৯৮০ সালের পর ১৯৮৪ সালেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু ইন্দিরার মৃত্যুর পর সেই সময় প্রধানমন্ত্রী হন রাজীব গাঁধী। কিন্তু কাল ভোটের ফল বেরোলে স্পষ্ট হবে, নরেন্দ্র মোদী কোনও অবস্থাতেই ইন্দিরা গাঁধীর রেকর্ড ছুঁতে পারবেন না। আমাদের হিসেব অনুযায়ী বিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গড়বে কংগ্রেসই। এনডিএকে সঙ্গে নিয়েও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না বিজেপি।’’
যদি এনডিএ-কে সঙ্গে নিয়েও সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায় বিজেপি, তা হলে রাষ্ট্রপতি সরকার গড়ার জন্য কাকে আমন্ত্রণ জানাবেন?
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ভারতের ইতিহাসে এই নিয়েও বিস্তর দ্বিমত আছে। বিজেপি বলছে, রাষ্ট্রপতি নিজের বিবেক অনুযায়ীই কাজ করবেন। কিন্তু কংগ্রেসের মতে, রাষ্ট্রপতির কাছে দাবি জানানো হবে, যাতে সবথেকে বড় দলকে না ডেকে সবথেকে বড় জোটকে তিনি সরকার গড়ার আমন্ত্রণ জানান। অতীতে সবথেকে বড় দলকে সরকার গড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে কেন্দ্রে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। কংগ্রেসের নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘গত কালই নির্বাচন কমিশনের কাছে বিরোধী শিবিরের ২২ টি দল গিয়েছে। ফলে এটিই ইউপিএ-র চেহারা। প্রাক-নির্বাচনী জোট। এনডিএ-র শরিক কারা, সেটাও স্পষ্ট।’’
কিন্তু ফল যদি ত্রিশঙ্কু হয়, তা হলে রাষ্ট্রপতি কী করতে পারেন? ১৯৮৯ সালে রাষ্ট্রপতি আর বেঙ্কটরমন সবথেকে বড় একক দল হিসাবে রাজীব গাঁধীকে সরকার গড়ার আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু কংগ্রেসের ১৯৪টি আসন থাকলেও রাজীব রাজি হননি। তার পরেই বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার গড়ে। ১৯৯১ সালেও বেঙ্কটরমন একই ভাবে নরসিংহ রাওকে আমন্ত্রণ জানান।
কিন্তু পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, সবথেকে বড় দলকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রথম খেসারত দিতে হয়েছে ১৯৯৬ সালে। যখন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি শঙ্করদয়াল শর্মা বিজেপির নেতা হিসেবে অটলবিহারী বাজপেয়ীকে সরকার গড়তে বলেন। কিন্তু তেরো দিনের মাথায় সরকার পড়ে যায়।
১৯৯৮ সালে ফের ত্রিশঙ্কু সরকার হয়। রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণন তখন অনেক সতর্ক পদক্ষেপ করেন। একক বড় দল হিসেবে শুধু বিজেপিকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে তিনি শরিক ও সমর্থনকারীদের চিঠি দিতে বলেন। বাজপেয়ীকে তখন জয়ললিতার সমর্থনের জন্য বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয়। অবশেষে জয়ললিতা ‘নিঃশর্ত’ সমর্থনের চিঠি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেন। এক বছরের মাথায় অবশ্য সমর্থন তুলে নেন তিনি। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে না পেরে এক ভোটে সরকার পড়ে যায় বাজপেয়ীর।
২০০৪ সালে ঠিক এমন পরিস্থিতি তৈরি হলেও বামেদের সমর্থন হাতে আসার পরেই সনিয়া গাঁধীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম। নিজে প্রধানমন্ত্রী না হয়ে মনমোহন সিংহকে গদিতে বসান সনিয়া। বিরোধীরা এখন ওৎ পেতে আছেন। এনডিএ শরিকদের নিয়ে মোদী যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতার অঙ্ক ছুঁতে না পারেন, তা হলে এই সব নজির দেখিয়েই ইউপিএ-কে সরকার গড়ার সুযোগ দেওয়ার আবেদন জানানো হবে রাষ্ট্রপতির কাছে।
কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে, ভোটবাক্স বলবে কাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy