Advertisement
২১ মে ২০২৪

কংগ্রেস নিজের ঘর সামলাক, রাহুলের দল ভাঙার অভিযোগ ওড়ালেন মমতা

পশ্চিমবঙ্গে দলবদল করার জন্য কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের উপরে চাপ তৈরি  করছে তৃণমূল। অবিলম্বে এটা বন্ধ করা হোক।

রাহুল-মমতা। ফাইল চিত্র।

রাহুল-মমতা। ফাইল চিত্র।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৪৮
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গে দলবদল করার জন্য কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের উপরে চাপ তৈরি করছে তৃণমূল। অবিলম্বে এটা বন্ধ করা হোক।

রাজনৈতিক সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ কথা জানিয়েছেন খোদ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। সনিয়া গাঁধীর উপস্থিতিতে দশ জনপথে রাহুলের সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয় মমতার। রাহুল-মমতার সেই সাক্ষাৎ ‘মধুর’ হয়নি বলেই সূত্রের খবর। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, রাহুলের ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন নেত্রী। তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, কংগ্রেসের ব্যর্থতায় যদি কর্মীরা দল ছাড়তে চান, তবে সেই দায় মমতার নয়। কংগ্রেসের উচিত আগে নিজেদের ঘর সামলানো।

ওই বৈঠকের পরে দশ জনপথ থেকে বেরিয়ে মমতা অবশ্য ইতিবাচক সুরেই বিজেপি বিরোধিতার লড়াইয়ে সবাইকে শামিল হতে ডাক দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে বলেছিলেন, ‘আমরা সবাই রাজা’। নয়াদিল্লির রাজনৈতিক সূত্র বলছে, কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পর থেকেই রাহুলের সঙ্গে দূরত্ব রেখে জাতীয় রাজনীতিতে নিজস্ব অক্ষ তৈরি করতে সচেষ্ট থেকেছেন তৃণমূল নেত্রী। কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, সাম্প্রতিক দশ জনপথের বৈঠকে রাহুল মমতাকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের উপরে চাপ তৈরি করা হচ্ছে। তাদের উপরে অত্যাচার হচ্ছে এবং দল ভাঙানোর চেষ্টা করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এ ভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া মুশকিল।

রাহুলের বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন তৃণমূল নেত্রী। সূত্রের খবর, এই প্রসঙ্গে দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে রাহুলের সামনে। তা হল, কংগ্রেস যদি নিজেদের নেতা-কর্মীদের ধরে না রাখতে পারে, তার জন্য কোনও ভাবেই তৃণমূলকে দোষী করা যায় না। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস কর্মীরা যদি বিজেপির দিকে চলে যান, সে ক্ষেত্রে তৃণমূল মাঝে দাঁড়াবেই। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি, দল ভাঙানোর রাজনীতি মমতা করেন না। যদি করতেন, তা হলে রাজ্যে কংগ্রেসের বিধায়ক দল অটুট থাকত না।

সূত্রের বক্তব্য, ভবিষ্যতে বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দেওয়ার প্রশ্নেও সংঘাত রয়েছে। রাহুলের বক্তব্য, ভোটের পরে কংগ্রেসের হাতে যথেষ্ট সংখ্যা থাকলে স্বাভাবিক ভাবেই তারাই হবে নেতৃত্বের দাবিদার। কংগ্রেসের দাবি, মমতাকে এ কথা জানানোও হয়েছে। যদিও তৃণমূল সূত্রে জোরের সঙ্গে দাবি করা হচ্ছে যে, ওই বৈঠকে এই ধরনের কোনও আলোচনাই হয়নি।

যদিও বিরোধী জোট প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মমতা প্রকাশ্যে একাধিক বারই বলেছেন যে, ভোটের পরে যে দল বেশি আসন পাবে, তাকে বাকিরা সরকার গড়তে সাহায্য করবে। কিন্তু সূত্রের বক্তব্য, সাম্প্রতিক ‘কর্নাটক মডেল’কে পাখির চোখ হিসেবে দেখছেন মমতা। জাতীয় রাজনীতিতে তিনি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বা নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে চাইছেন, যাতে নেতৃত্বদানের প্রস্তাব তাঁর কাছেই আসে। রাহুলের কংগ্রেসকে গুরুত্ব না দিয়ে বেশ কিছু আঞ্চলিক দলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রেখে একটি সমান্তরাল বিরোধী রাজনীতির রাস্তায় হাঁটছেন মমতা। সুকৌশলে নিজের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তিকে অক্ষুণ্ণ রেখেই রাহুলের ব্যর্থতাকে তুলে ধরছে তার দল। তৃণমূল সূত্রের দাবি, চলতি অধিবেশনে অনাস্থা ভোট এবং ডেপুটি চেয়ারম্যান নির্বাচন— উভয় ক্ষেত্রে বিজেপির বিরোধিতাই করেছেন মমতা। কিন্তু সেই সঙ্গে এই বার্তাও দিতে ছাড়েননি যে, রাহুলের সময়োচিত উদ্যোগের অভাব এবং অপরিণামদর্শিতার জন্যই বারবার মুখ থুবড়ে পড়ছে বিরোধী ঐক্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rahul Gandhi Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE