বাড়ির কাছেই দীপক দেবনাথের ঝুলন্ত দেহ। —নিজস্ব চিত্র
ডি-ভোটারের নোটিস পেয়ে এক আইনজীবী যদি আত্মহত্যা করেন, তবে সামান্য সাইকেল মেকানিকের লড়াই চালানোর ক্ষমতা কোথায়! তার উপরে রয়েছে আলফার হুমকি। এমনই মানসিক টানাপড়েনে বেশ কয়েক দিন ধরে ভুগছিলেন ওদালগুড়ির বাসিন্দা দীপক দেবনাথ। এনআরসির খসড়া তালিকায় তাঁর ও পরিবারের নাম থাকলেও ফরেনার্স ট্রাইবুনাল তাঁর নথিপত্র ফিরিয়ে দিয়েছে। গত কাল টিভিতে ডি-ভোটার ও নাগরিকত্ব নিয়ে আলোচনা দেখে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে আরও ভেঙে পড়েন দীপকবাবু। আজ সকালে বাড়ির অদূরে এক গাছে তাঁর ঝুলন্ত দেহ মিলল।
ডি-ভোটারের নোটিস পাওয়া ও নাগরিকত্ব চলে যাওয়ার আশঙ্কায় আত্মহত্যা ঘটেই চলেছে অসমে। জুলাইয়ে এই ওদালগুড়িতেই আত্মঘাতী হন গোপাল দাস। ২১ অক্টোবর আত্মহত্যা করেন খারুপেটিয়ায় আইনজীবী ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নিরোদবরণ দাস। আজ ঘটনাস্থল ওদালগুড়ির ঘাগরা গ্রাম।
মৃতের ভাইপো উত্তম দেবনাথ জানান, এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশের আগের দিন দীপকবাবুর নামে ডি-ভোটারের নোটিস আসে। চূড়ান্ত খসড়ায় দীপকবাবু ও তাঁর স্ত্রী, দুই কন্যার নামই ছিল। কিন্তু ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল ক’দিন আগে তাঁর নথিপত্র পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়ে নতুন নথি জোগাড় করতে বলে। পরবর্তী শুনানি ছিল ৩১ অক্টোবর।
আরও পড়ুন: মোদীকে ‘কাঁকড়াবিছে’ বলে বিতর্কে শশী
সারা অসম বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাপি সরকার জানান, মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন দীপকবাবু। সকলে বুঝিয়েছিলেন এনআরসিতে যখন নাম রয়েছে চিন্তার কিছু নেই। কেন্দ্র নাগরিকত্ব আইন সংশোধনীর প্রস্তাবও আনছে। কেউ ওঁদের ভিটেছাড়া করতে পারবে না। কিন্তু মামলা চালাতে হলে ওঁকে যে পরিমাণ টাকা খরচ করতে হত, সাইকেল সারিয়ে তা জোগাড় করা সম্ভব ছিল না। যে প্রমাণপত্রগুলি ছিল তার ভিত্তিতেই এনআরসিতে নাম এসেছে তাঁর পরিবারের সকলের। তার বাইরে অন্য নথি জোগাড় করাও দীপকবাবুর পক্ষে সম্ভব ছিল না। নিরোদবরণবাবুর আত্মহত্যার ঘটনাও নাড়িয়ে দিয়েছিল তাঁর বিশ্বাসের ভিত। এর উপর আলফা নেতা মৃণাল হাজরিকা ১৯৮৩ সালের সন্ত্রাস ফিরিয়ে আনার হুমকি দেওয়ায় তিনি আরও ভয় পেয়ে যান। কারণ ওই সময়ে ওদালগুড়ি, খারুপেটিয়ায় অনেক বাঙালিকে মারা হয়েছিল, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ঘরবাড়ি। মাথায় গেঁথে ছিল সেই দিনগুলির কথা। উদ্বেগ নিয়েই গত কাল বিকেলে চোখ রেখেছিলেন টিভির পর্দায়। আলোচনা হচ্ছিল নাগরিকত্বের সঙ্কট নিয়ে। তা দেখার পরে আরও ভেঙে পড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান দীপকবাবু। রাতে ফেরেননি। খুঁজতে খুজতে আজ সকালে উদ্ধার হয় দেহ।
আরও পড়ুন: জনপথে ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ মনে করাচ্ছে ২৭ বছর আগের সরকার পতনের সেই ঘটনাকে
অসমের বিজেপি সরকার সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এনআরসি প্রক্রিয়া চলাকালীন আপাতত ডি-ভোটারের নোটিস পাঠানো হবে না। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ সরকারের গাফিলতিতেই এই মৃত্যু। ডি-ভোটার সাজিয়ে বাঙালিদের যে হেনস্থা শুরু হয়েছে তার প্রতিবাদে ও মৃত দীপকবাবুর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে আজ মৃতদেহ নিয়ে এলাকায় বিক্ষোভ দেখানো হয়। ফেডারেশনের দাবি, কয়েক মাস আগে ওদালগুড়ির গোপাল দাস একই কারণে আত্মঘাতী হয়েছিলেন। আরও অন্তত ১০টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের সীমান্ত শাখার তুঘলকি কাণ্ডের পাশাপাশি আলফার হুমকিও বাঙালিদের আতঙ্কিত করে তুলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy