ডিএফও-র গুয়াহাটির বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের চামড়া।
বন দফতরের ঘর থেকে হাতির দাঁত, বাঘের ছাল, হরিণের ছাল এবং কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় কেঁপে উঠেছে অসম বন দফতর। অনেকের মতেই, এই ঘটনা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। রক্ষকই যে অসমের বন্যপ্রাণের ভক্ষক হয়ে দাঁড়িয়েছে তার ইঙ্গিত গত বছর দুয়েক ধরেই মিলছিল। ডিএফও মহৎচন্দ্র তালুকদারের ‘মহত্ত্ব’ সেই ঘটনাই চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করল।
গত কাল ধেমাজি জেলার ডিএফও মহৎবাবু নিজের দফতরেই ৩০ হাজার টাকা ঘুষ নিতে গিয়ে ধরা পড়েন। তার পর তাঁর ধেমাজি ও গুয়াহাটির বাড়িতে হয় তল্লাশি। দু’টি বাড়ি মিলিয়ে ৭০ লক্ষ নগদ টাকা ও ৩০ লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট, ১৩টি ব্যাঙ্কের পাশবই ও অন্য অনেক লগ্নি সংক্রান্ত নথি মিলেছে। সেই সঙ্গে উদ্ধার হয়েছে প্রাপ্তবয়স্ক বিরাট এক বাঘের চামড়া, হগ ডিয়ারের ছাল, হাতির দাঁত। বাড়ির দেওয়ালের মধ্যে মিলেছে দু’টি গোপন বৈদ্যুতিন লকার।
আজ মহৎবাবুকে গুয়াহাটি নিয়ে আসা হয়। লকারে মিলেছে আরও দু’কোটি টাকা ও প্রায় দেড় কিলোগ্রাম সোনা। পাওয়া গিয়েছে একটি পিস্তল। অবশ্য মহৎবাবু দাবি করেছেন লাইসেন্স তাঁর রয়েছে। এত টাকার হিসেব অবশ্য তিনি দেখাতে পারেননি। আজ বিকেলে বিশেষ আদালত তাঁকে পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে। জানা গিয়েছে নলবাড়িতেও ওই ডিএফওর জমি-বাড়ি রয়েছে। রয়েছে সাতটি জমি। তাঁর পুত্র-কন্যা ও স্ত্রীর নামেও অনেক সম্পত্তি রয়েছে।
পুলিশ ও বন দফতর সূত্রে খবর, ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত কাজিরাঙায় কর্মরত থাকার সময় গন্ডার হত্যায় তাঁর নাম জড়ায়। চিড়িয়াখানার ডিএফও থাকার সময় হরিণের শিঙ বিক্রি করার দায়ে তিনি আটকও হয়েছিলেন। কিন্তু নামনি অসমের এক প্রাক্তন মন্ত্রীর আত্মীয় হওয়ায় তাঁকে কখনও ঘাঁটায়নি পুলিশ। অভিযোগ, ধেমাজিতে বনরক্ষার কাজ না করে ইট-বালি-কাঠের ব্যবসা ও ট্রাক মালিকদের থেকে তোলা আদায় করতেই বেশি ব্যস্ত থাকতেন মহৎচন্দ্র।
টাকার বান্ডিল! রাজ্য পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখা ডিএফও-র ধেমাজি ও
গুয়াহাটির বাড়ি থেকে উদ্ধার করা টাকা গুণে-গেঁথে রাখছেন।(ডান দিকে)
মহৎবাবুর কাণ্ডে বেজায় চটেছেন সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বনমন্ত্রী প্রমীলারানি ব্রহ্ম। তাঁর প্রথম কাজিরাঙা সফরের দিনেই গন্ডার হত্যা হয়। কিন্তু খবর চেপে রেখে কাজিরাঙা কর্তারা বনমন্ত্রী ব্রহ্মকে বিপথে চালিত করেন। দু’বার চেষ্টার পরেও তাঁকে ঘটনাস্থলে যেতে দেওয়া হয়নি। গন্ডার হত্যার তিন দিন পরে বন দফতর সে কথা স্বীকার করায় মন্ত্রীর মুখ পোড়ে। তিনি গোটা ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে দোষী বনকর্তাদের শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার মধ্যেই ধেমাজির ডিএফও-র এই কীর্তি। বন দফতরের ভিতরে চলতে থাকা অশুভ চক্র সম্পর্কে ক্ষুব্ধ বনমন্ত্রী বলেন, ‘‘এত বছর ধরে বন দফতরে দুষ্টচক্র যে ভাবে বাসা বেঁধেছে, তা এক-দু’দিনে উপড়ে ফেলা সম্ভব নয়। এই চক্র ভাঙতেই হবে। মহৎচন্দ্র শাস্তি পাবেন।’’ ইতিমধ্যেই তাঁকে সাসপেন্ড করেছেন ব্রহ্ম। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল দিল্লিতে বলেন, ‘‘ওই ডিএফও যাতে কোনও ভাবে আইনের ফাঁক গলে ছাড় না পান তা দেখা হবে। বন দফতরের সব দুর্নীতি বন্ধ করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’’
বন্যপ্রাণ সংক্রান্ত অপরাধের একটি মামলার শুনানিতে গৌহাটি হাইকোর্ট আজ রাজ্যকে ১৯৭১-এর বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনের ৫৫ নম্বর ধারায় সংশোধনী আনতে নির্দেশ দিয়েছে। বিচারপতি ইন্দিরা শাহ বলেন, ‘‘ওই ধারা সংশোধন করে বন্যপ্রাণ সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করে পুলিশকেও চার্জশিট দেওয়ার অধিকার দেওয়া হোক।’’ বর্তমানে পুলিশের হাতে মামলার তদন্ত করা, সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করার অধিকার থাকলেও চার্জশিট দেওয়ার ক্ষমতা নেই। আইনজীবী বিজন মহাজন বলেন, ‘‘এই সংশোধনীর ফলে বন্যপ্রাণ সংক্রান্ত অপরাধগুলির তদন্ত ও বিচারে আরও গতি আসবে। কারণ এতদিন শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পদমর্যাদার বনকর্তারাই ওই সব ঘটনায় চার্জশিট দিতে পারতেন। এতে বিচার প্রক্রিয়ায় দেরি হত। ’’
সেই মহৎচন্দ্র তালুকদার।
ছবি-উজ্জ্বল দেব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy