Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Job loss

Impact of pandemic: অতিমারির ধাক্কায় রাজ্যে কাজ খোঁজাই ছেড়েছেন বহু মহিলা, দাবি কেন্দ্রের সমীক্ষায়

সরকারি পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, কাজের সন্ধানে থাকা মহিলাদের হার কম হওয়াই এর প্রধান কারণ। পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, কেরল, তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানায় অনেক বেশি সংখ্যক মহিলা হয় রোজগার করেছেন বা রোজগারের সুযোগ খুঁজছেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২২ ০৬:০৯
Share: Save:

মেদিনীপুরের সুশীলা দাস দিঘার হোটেলে রান্নাবান্নায় সহকারীর কাজ করতেন। কোভিডের সময়ে হোটেল বন্ধ হল। কাজ হারালেন সুশীলা। প্রায় এক বছর ঘরে বসে থাকতে হল। আগে কাজে বার হলে শাশুড়ি তাঁর ছেলেমেয়ের দেখাশোনা করতেন। কোভিডে শাশুড়ির মৃত্যু হল। অতিমারির ঢেউয়ের পরে হোটেল-রেস্তরাঁ নতুন করে খুললেও সুশীলা চাকরি ফিরে পেলেন না। তার উপরে ছেলেমেয়ের পুরো দায়িত্ব একা তাঁর উপরেই এসে পড়ায় সুশীলা আবার কাজ খোঁজাই বন্ধ করে দিলেন।

পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত মহিলাদের জীবনযাত্রার এই ছবিই এ বার কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যানে উঠে এল।

কোভিডের প্রথম ঢেউয়ে লকডাউনের জেরে পুরুষদের সঙ্গে মহিলারাও কাজ হারিয়েছিলেন। লকডাউন উঠতে পুরুষেরা যে ভাবে আবার কাজ ফিরে পেয়েছেন, মহিলাদের ক্ষেত্রে তা হয়নি। অনেকেই আর কাজ ফিরে পাননি। বহু মহিলা কাজের সন্ধান করাই ছেড়ে দিয়েছেন। কাজের সন্ধানে বেরোনো মহিলাদের হার বিশেষ বাড়েনি। যার অর্থ, অতিমারির ধাক্কায় এক বার কাজ চলে যাওয়ার পরে রাজ্যের মহিলারা আর কাজ খুঁজতে বার হননি।

কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের শ্রম সমীক্ষা বলছে, পশ্চিমবঙ্গে কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময়ে, ২০২০ সালের এপ্রিল-জুনে ১০০ জন মহিলার মধ্যে মাত্র ২১ জন হয় চাকরি করছিলেন বা কাজের সন্ধানে ছিলেন। সেই তুলনায় পুরুষদের হার ছিল ১০০ জনের মধ্যে ৭৩ জন। লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে কর্মরত বা কাজের খোঁজে বেরোনো মহিলাদের সংখ্যা বাড়ার কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তা বিশেষ বাড়েনি। বিধিনিষেধ শিথিল হয়ে যাওয়ার পরে ২০২০-র জুলাই থেকে ২০২১-এর মার্চ পর্যন্ত সব সমীক্ষাতেই দেখা গিয়েছে, রাজ্যের ১০০ জন মহিলার মধ্যে কর্মরত বা চাকরিসন্ধানী মহিলাদের সংখ্যা ২৩ জনেই আটকে থেকেছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে ২০২১-এর এপ্রিল-জুনে তা ফের ২১ জনে নেমে এসেছে। অথচ ওই সময় পুরুষদের ৭৫ শতাংশই কাজ করছিলেন বা কাজের সন্ধানে ছিলেন।

এটা হল শহরাঞ্চলের ছবি। পরিসংখ্যান মন্ত্রকের সমীক্ষায় গ্রামের ছবি উঠে আসেনি। কিন্তু কোভিডের আগেই গ্রামে মহিলাদের কাজের ছবিটা চিন্তাজনক ছিল বলে অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন। দিল্লির ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অব অ্যাপ্লায়েড ইকনমিক রিসার্চ’-এর গবেষক পলাশ বড়ুয়া বলেন, ‘‘কোভিডের আগে দেখা গিয়েছিল, গ্রামে কর্মরত মহিলাদের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি হারে। আপাত ভাবে খুবই সন্তোষজনক ছবি। কিন্তু খতিয়ে দেখে বুঝতে পারি, তাঁদের বড় অংশই চাষের কাজে বা পরিবারের ব্যবসা বা অন্য কোনও কাজে হাত লাগাচ্ছেন। তবে তার জন্য কোনও পারিশ্রমিক মিলছে না। খাতায়-কলমে কর্মরত হলেও মহিলাদের আয় হচ্ছে না।’’ কোভিডের আগে এই ছবি হলে অতিমারির পরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে বলেই বিশেষজ্ঞদের মত। কারণ অতিমারির ধাক্কায় শহর থেকে কাজ হারিয়ে বহু মানুষ গ্রামে ফিরেছেন।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, গোটা বিশ্বেই মহিলাদের এই সমস্যা। শিল্পায়নে পিছিয়ে থাকা দেশ বা রাজ্যে মহিলাদের সমস্যাও বেশি। প্রথমত, কোভিডের ধাক্কায় অর্থনীতিতে মন্দার ফলে সার্বিক ভাবেই কাজের সুযোগ কমেছে। দ্বিতীয়ত, মহিলারা আতিথেয়তা, পরিষেবা ক্ষেত্রে বেশি কাজ করেন। সেখানে কোভিডের ধাক্কা বেশি লেগেছে। তৃতীয়ত, স্কুল-কলেজ বন্ধ, অতিমারির অসুস্থতার ফলে মহিলাদের বাড়িতে পারিবারিক দায়িত্বের বোঝা বেড়েছে। সব মিলিয়ে কর্মরত বা কাজের সন্ধানে বেরোনো মহিলার হার কমেছে।

কাজের সন্ধানে ১০০ জন বার হলে তাঁদের মধ্যে কত জন কাজ পাননি, সরকারি পরিসংখ্যানে সেটাই বেকারত্বের হার। কাজের সন্ধানেই মহিলারা কম বার হচ্ছেন। ফলে সেই হিসাবে রাজ্যের বেকারত্বের হারও কম দেখাচ্ছে। কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের পরেই, ২০২০-র এপ্রিল-জুনে রাজ্যে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সি মহিলাদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২৫ শতাংশ ছাপিয়ে গিয়েছিল। চার জনের মধ্যে এক জনের হাতেই কোনও কাজ ছিল না। লকডাউন উঠে গিয়ে কাজকর্ম নতুন করে শুরু হয়। এক বছর পরে ২০২১-এর এপ্রিল-জুনে বেকারত্বের হার ১০.৫ শতাংশে নেমে এসেছিল। এই হিসাবে গোটা দেশের রাজ্যগুলির মধ্যে ওই তিন মাসে পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের
বেকারত্বের হার সব থেকে কম। সব বয়সের মহিলাদের মধ্যে বেকারত্বের হারও পশ্চিমবঙ্গে সর্বনিম্ন। মাত্র ৫ শতাংশ। লকডাউনের সময়ে যা ১১.৮ শতাংশে পৌঁছেছিল।

কোন জাদুতে অন্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের মধ্যে বেকারত্বের হার সব থেকে কম?

সরকারি পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, কাজের সন্ধানে থাকা মহিলাদের হার কম হওয়াই এর প্রধান কারণ। পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, কেরল, তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানায় অনেক বেশি সংখ্যক মহিলা হয় রোজগার করেছেন বা রোজগারের সুযোগ খুঁজছেন। পশ্চিমবঙ্গে লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে কাজের সন্ধানে বার হওয়া মহিলাদের হার বিশেষ বাড়েনি। এমনকি যাঁরা নতুন কাজ খুঁজতে বেরিয়েছেন, সেই ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সি মহিলাদের ১০০ জনের মধ্যে কর্মরত বা চাকরিসন্ধানী মহিলার সংখ্যা ২০ থেকে ২২ জনেই আটকে থেকেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, গোটা বিশ্বেই এই ছবি। পশ্চিমবঙ্গ তার ব্যতিক্রম নয়। শিল্পায়নের নিরিখে পিছিয়ে থাকার ফলে রাজ্যে মহিলাদের সমস্যাও বেশি। তা ছাড়া, এটি সামগ্রিক ভাবেও বড় সমস্যা। অতিমারির ধাক্কায় মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে গোটা দেশেই কাজের সন্ধানে বেরোনো মানুষের সংখ্যা কমেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Job loss
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE