প্রতীকী ছবি।
কোনও নিয়ম বা আচরণের মাধ্যমে সরকার যদি কাউকে মাতৃত্বকালীন ছুটি দিতে অগ্রাহ্য করে তা হলে তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং মহিলার মৌলিক অধিকার তথা মানবাধিকার-বিরোধী বলে গণ্য হবে। এক মহিলা চিকিৎসকের দায়ের করা মাতৃত্বকালীন ছুটি সংক্রান্ত মামলার প্রেক্ষিতে মাদ্রাজ হাইকোর্ট বুধবার এই কথা জানিয়েছে।
বিচারপতি এন কিরুবাকরণ জানিয়েছেন, একটি শিশুর জন্ম মানে তার মায়েরও নতুন জীবন পাওয়া। তখন মায়েরও শিশুর মতো যত্ন, ভালবাসা ও বিশ্রাম দরকার। সেই সময় মায়ের সঙ্গে কোনও রকম বৈষম্যমূলক আচরণের সমালোচনা করে কোর্ট এ দিন কেন্দ্র ও তামিলনাড়ু সরকারকে ১৫টি প্রশ্নের উত্তর দিতে বলেছে। কেন মায়ের দুধের উপর শিশুর অধিকারকে মৌলিক অধিকারের পর্যায়ে ফেলা হবে না—এই রকম নানা প্রশ্ন রয়েছে সেই তালিকায়।
মাদ্রাজ হাইকোর্টে মাতৃত্বকালীন ছুটি সংক্রান্ত মামলাটি দায়ের করেছিলেন ইউ ঐশ্বর্যা নামে এক মহিলা চিকিৎসক। তিনি ২০১৫ সালের ৪ জুলাই সন্তানের জন্ম দেন এবং ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ছিলেন। সরকারি চাকরিতে তাঁর দু’বছর পূর্ণ হয় ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ। ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট (নিট) পাশ করার পর তিনি স্ত্রীরোগ বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা করার সুযোগ পান। ২০১৭ সালের ১০ মে তাঁর ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রমে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অভিযোগ, শিবকাশি অঞ্চলের সহ স্বাস্থ্য অধিকর্তা তাঁকে রিলিজ দিতে রাজি হন না। তাঁর যুক্তি ছিল, যে হেতু ওই চিকিৎসক মাঝে ১৮০ দিনের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েছেন, তাই তিনি টানা দু’বছর সরকারি চাকরি করেছেন বলে ধরা যাবে না। এবং ন্যূনতম টানা দু’বছর নিরবচ্ছিন্ন ভাবে সরকারি চাকরি না-করলে উচ্চতর পঠনপাঠনের সুযোগ মেলে না। এর বিরুদ্ধেই কোর্টে যান ওই মহিলা চিকিৎসক। অন্তর্বর্তী নির্দেশে কোর্ট এ দিন ইউ ঐশ্বর্যাকে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রমে যোগ দিতে বলেছে।
আরও পড়ুন: যোগী-রাজ্যে মাদ্রাসায় ছুটি দশেরা, বড়দিনেও
বিষয়টি শুনে নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী অঞ্চিতা ঘটক বলেন, ‘‘কোর্ট একেবারে ঠিক করেছে। মহিলা যখন দফতর থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি পাচ্ছেন তখন তো সেখানকার কর্মী রয়েছেন বলেই পাচ্ছেন। তা হলে কেন ধরা হবে যে সেই ছ’ মাস তিনি চাকরি চালিয়ে যাননি?’’ পশ্চিমবঙ্গের মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের কথাতেও, ‘‘মাতৃত্বকালীন ছুটি নারীর সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। তাই এর জন্য কখনও চাকরিতে ছেদ পড়তে পারে না।’’
নারী অধিকার আন্দোলনের আর এক কর্মী শাশ্বতী ঘোষও বলেন, ‘‘এক জন মহিলা মা হওয়ার পরেও নিজের কেরিয়ার এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, সেই প্রশংসনীয় চেষ্টাকে কোর্ট স্বীকৃতি দিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy