Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
JEE

মা-বাবার উচ্চাশাতেই হাজতে মেধাবী নীল

কিন্তু ছেলের সঙ্গে বন্ধুর কল রেকর্ডিং ফাঁস হয়, যেখানে ছেলেকে বলতে শোনা যায়, বাবা ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে অন্য পরীক্ষার্থী বসিয়ে তাঁকে পাশ করিয়েছেন।

 ‘নক্ষত্রপতন’: ডাক্তার বাবা জ্যোতির্ময় দাস ও ছেলে নীলনক্ষত্র।

 ‘নক্ষত্রপতন’: ডাক্তার বাবা জ্যোতির্ময় দাস ও ছেলে নীলনক্ষত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২০ ০৪:০৩
Share: Save:

উচ্চাশার চাপেই শেষ পর্যন্ত নক্ষত্র পতন! ছেলের ইচ্ছে ছিল কলা বিভাগে পড়বে। বিজ্ঞান নয়, সাহিত্য তাকে টানত বেশি। কিন্তু বাবা ডাক্তার, মা অ্যানাস্থেটিস্ট। তাই ছেলে ডাক্তার বা ইঞ্জনিয়ার না-হলে বাবা-মায়ের মুখ থাকবে না— এমন চিন্তা থেকেই অবাধ্য ছেলেকে প্রথমে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান পড়তে বাধ্য করা হয়। তার পর জোর করে বসানো হয় জয়েন্ট এন্ট্রান্সে। কিন্তু ছেলে নীলনক্ষত্র দাসের মতিগতি ভাল ঠেকেনি বাবার। তাই ভাড়াটে পরীক্ষার্থী বসিয়ে ছেলেকে অসমের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করান বাবা জ্যোতির্ময় দাস।

কিন্তু ছেলের সঙ্গে বন্ধুর কল রেকর্ডিং ফাঁস হয়, যেখানে ছেলেকে বলতে শোনা যায়, বাবা ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে অন্য পরীক্ষার্থী বসিয়ে তাঁকে পাশ করিয়েছেন। সেই ভুতুড়ে পরীক্ষার্থী নীলনক্ষত্রের নামে এনে দিয়েছে ৯৯.৮ শতাংশ নম্বর। যার জোরে সে রাজ্যে প্রথম। এত অভিনন্দনের বন্যা, উজ্জ্বল কেরিয়ারের হাতছানি।

শেষরক্ষা হয়নি। আপাতত বাবা ও ছেলে হাজতে। পুলিশের জেরায় ভেঙে পড়েছে নীল। জানিয়েছে, ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক ও ৮৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা নীলনক্ষত্র জানায়, সে বরাবর কলা বিভাগে পড়তে চেয়েছিল। কিন্তু বাবা-মায়ের তীব্র চাপের ফলেই তাঁকে বিজ্ঞান পড়তে ও জয়েন্টে বসার জন্য রাজি হতে হয়েছিল।

জয়েন্ট কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে গিয়েছে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসের নামও। কারণ, জেরায় জানা গিয়েছে এ বছর কোভিড-পর্বে অনলাইন পরীক্ষায় ভুতুড়ে পরীক্ষার্থীকে দিয়ে পরীক্ষায় ‘প্রক্সি’ দেওয়ানোর ক্ষেত্রে টিসিএস-এর দুই কর্মী হেমেন্দ্রনাথ শর্মা ও প্রাঞ্জল কলিতা জড়িত। তাঁদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে। ধরা হয়েছে পরিদর্শককেও। ধৃত পাঁচ জনকে ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।

পুলিশ জানাচ্ছে, জ্যোতির্ময়বাবু ছেলের জয়েন্ট পাশ নিশ্চিত করতে প্রথমে ‘গ্লোবান এডুলাইট’ সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারাই ভরসা দেয়, ১৫ লক্ষ খরচ করতে হবে। অনলাইন পরীক্ষা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক টিসিএস থেকে শুরু করে পরীক্ষাকেন্দ্রের পরিদর্শক— সবাইকে ‘ম্যানেজ’ করে ফেলবে তারা। এর পর নীলের বদলে পোক্ত কোনও পেশাদার পরীক্ষা দেবে। সেই পেশাদার পরীক্ষার্থী এতই ভাল পরীক্ষা দেয় যে নীল নক্ষত্র রাজ্যে প্রথম হয়।

জয়েন্ট পরীক্ষার ব্যবস্থা করে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি। পরিকাঠামো ও প্রযুক্তিগত সাহায্য দিয়েছিল টিসিএস। জয়েন্টের মতো সর্বভারতীয় পরীক্ষায় এত কড়াকড়ির পরেও টিসিএসের মতো সংস্থার কর্মীদের দুর্নীতি ও পরীক্ষা পাশের দালাল সংস্থা ‘গ্লোবাল এডুলাইট’-এর কলকাঠিতে আরও কত জন এই ভাবে পাশ করেছে এবং কত দিন ধরে এই কাণ্ড চলছে, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। কামরূপ মেট্রোর অতিরিক্ত ডিসিপি সুপ্রতিভলাল বরুয়ার নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তদল গোটা চক্রটি নিয়ে তদন্তে নেমেছে। এখন পর্যন্ত গ্লোবালের মালিক ভার্গব ডেকা ও ভুয়ো পরীক্ষার্থীকে ধরা যায়নি।

অসমে লোকসেবা আয়োগে টাকার বিনিময়ে চাকরি কেলেঙ্কারির জেরে লোকসেবা আয়োগের চেয়ারম্যান ও আরও অনেক কর্তা এখন জেলে। চাকরি খুইয়েছেন অর্ধশতাধিক আমলা ও পুলিশ-কর্তা। এর পর এসআই নিয়োগ কেলেঙ্কারির দায়ে জেলে গিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি, কর্মরত এসপি ও এক বিজেপি নেতা। তার পরেই জয়েন্ট এন্ট্রান্সের মতো সর্বভারতীয় পরীক্ষায় কেলেঙ্কারি ধরা পড়ল। কংগ্রেস মুখপাত্র অভিজিৎ মজুমদার বলেন, “রাজ্যের নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী ক্ষমতার লড়াইয়ে ব্যস্ত। এ দিকে দুর্নীতিমুক্ত অসম গড়ার বদলে গোটা পরীক্ষাব্যবস্থাই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

JEE Crime Proxy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE