স্পিকারের কাছে ইস্তফাপত্র জমা দিচ্ছেন জিতেন সরকার। সোমবার আগরতলা বিধানসভায়। — নিজস্ব চিত্র
পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম-কংগ্রেস জোটের ছায়া দীর্ঘতর হচ্ছে। ত্রিপুরা কংগ্রেসে তার প্রভাব পড়েছে আগেই। এই জোটের কারণে বিক্ষুব্ধ কংগ্রেসের ছ’জন বিধায়ক দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে কথাবার্তা যখন প্রায় পাকা করে ফেলেছেন, তখন আচমকাই উল্টো পথে হাঁটা দিলেন তাঁদের এক জন। ওই ছ’জনের অন্যতম, জিতেন সরকার আজ বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়ে জানিয়ে দিলেন তিনি তাঁর পুরনো দল সিপিএমে ফিরছেন। প্রায় নজিরবিহীন ভাবে সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীও তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছে।
জিতেনবাবু এক সময় সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য ছিলেন। হন স্পিকারও। ২০০৮ সালের ভোটে সিপিএম তাঁকে মনোনয়ন দেয়নি। দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্বও বেড়ে যায়। ২০১০-এ তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন। গত নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটেই বড়জলা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হন।
এ দিন বেলা দশটা নাগাদ জিতেনবাবু স্পিকার রমেন্দ্রচন্দ্র দেবনাথের কাছে গিয়ে বিধায়ক পদে ইস্তফার চিঠি তুলে দেন। অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তা গ্রহণও করেন স্পিকার। পরে বলেন, ‘‘ইস্তফা গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। সরকারি বিজ্ঞপ্তিও জারি হয়েছে।’’
কী বলছেন জিতেনবাবু?
সিপিএমে থাকার সময় কোন কোন পদে ছিলেন সে সব উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘‘প্রায় ৪০ বছর সিপিএম কর্মী হিসেবে অনেক সম্মান পেয়েছি। কয়েকটি প্রশ্নে পার্টির নেতাদের সঙ্গে মতানৈক্য হওয়ায় দল ছাড়ি।’’ এখন কংগ্রেস ছাড়ছেন কেন? জিতেনবাবু বলছেন, আগে বোঝেননি, এই দল রাজ্যের স্বার্থ দেখে না। শুধুই ব্যক্তিপুজো ও গোষ্ঠীবাজি। তৃণমূলে গেলেন না কেন? জিতেনবাবুর যুক্তি, যে দল পশ্চিমবঙ্গের মানুষের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে, যে দলের সাংসদ, মন্ত্রী, বিধায়কেরা প্রকাশ্যে ঘুষের টাকা নিচ্ছে, এমন দলে যাওয়ার তিনি বিরোধী। তবু চাপ আসছিল। সেই চাপ উড়িয়েই তিনি এ বার বামেদের সঙ্গে নিপীড়তদের জন্য কাজ করতে চান।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর বলেন, ‘‘অন্য দলে গিয়ে তিনি বুঝেছেন, রাজ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার কাজ একমাত্র সিপিএম ও বামফ্রন্টই করতে পারে। তাঁর এই ইতিবাচক পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।’’ গত কাল সন্ধেয় তড়িঘড়ি সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক ডেকে জিতেনবাবুকে দলে স্বাগত জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও।
তৃণমূলে যাওয়ার জন্য কংগ্রেসের যে ছয় বিধায়ক আগরতলায় মুকুল রায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন, সেই দলে ছিলেন জিতেনবাবুও। ঠিক ছিল, আগামী বুধবার ‘সাত’ বিক্ষুব্ধ কংগ্রেসি একসঙ্গে স্পিকারের কাছে গিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা জানাবেন।
কিন্তু কী এমন ঘটল, যার জন্য শেষ মুহূর্তে জিতেনবাবু পুরনো দলে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন? বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস বিধায়কদের নেতা সুদীপ রায়বর্মনের কাছেও সেটা রহস্য। তাঁর কথায়, ‘‘উনি সিপিএমেই ছিলেন, ফিরেও গেলেন। কিন্তু তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আবেদন করেও এক রাতে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলা কোন নৈতিকতার পরিচয়, সেটা জিতেনবাবুকেই ভেবে দেখতে বলব।’’ তাঁর বক্তব্য, এ জিনিস ত্রিপুরায় কখনও হয়নি। সিপিএমই এই ষড়যন্ত্র করল। তবে তাতে তাঁদের কোনও ক্ষতি হয়নি বলে সুদীপবাবুর দাবি। কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা এখন ৯। তাই ছ’জন বেরিয়ে গেলে দলত্যাগ-বিরোধী আইনে পড়বেন না। শাসক দলের মুখপাত্র গৌতম দাস ষড়যন্ত্রের অভিযোগ খারিজ করেছেন।
ত্রিপুরা কংগ্রেসের বেহাল ও পর্যুদস্ত অবস্থা জরিপ করতে এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক ভূপেন বরা মঙ্গলবার আগরতলায় পৌঁছবেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক বিশেষ করে দিলীপ সরকারের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে দল না ছাড়তে বলবেন। তাতে কাজ হলে বিধানসভায় তৃণমূলের প্রধান বিরোধী দল হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy