Advertisement
০৫ মে ২০২৪

শরিফকে ফোন মোদীর, ক্রিকেট টিমকে শুভেচ্ছা

ক্রিকেটের মোড়কে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘ ছ’মাস বন্ধ থাকা দ্বিপাক্ষিক আলোচনা আবার শুরু হল। ফোন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ক্রিকেট বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী সার্কভুক্ত দেশগুলির (বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান) নেতাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এই সূত্রে মিনিট সাতেক তিনি কথা বলেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন শীঘ্রই ‘সার্ক-যাত্রা’য় পাঠাবেন নতুন বিদেশসচিব জয়শঙ্করকে। সূত্রের খবর, মার্চ মাসে আফগানিস্তান দিয়ে বিদেশসচিবের যাত্রা শুরু হবে। দ্বিতীয় গন্তব্যটিই হতে চলেছে ইসলামাবাদ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪৬
Share: Save:

ক্রিকেটের মোড়কে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘ ছ’মাস বন্ধ থাকা দ্বিপাক্ষিক আলোচনা আবার শুরু হল। ফোন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ক্রিকেট বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী সার্কভুক্ত দেশগুলির (বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান) নেতাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এই সূত্রে মিনিট সাতেক তিনি কথা বলেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন শীঘ্রই ‘সার্ক-যাত্রা’য় পাঠাবেন নতুন বিদেশসচিব জয়শঙ্করকে। সূত্রের খবর, মার্চ মাসে আফগানিস্তান দিয়ে বিদেশসচিবের যাত্রা শুরু হবে। দ্বিতীয় গন্তব্যটিই হতে চলেছে ইসলামাবাদ।

অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিকেট বিশ্বকাপের আসরে রবিবারই প্রথম মুখোমুখি হতে চলেছে ভারত ও পাকিস্তান। বিশ্বের আর সব দেশের কাছে হারজিতের ব্যাপারটা অন্য রকম, কিন্তু প্রতিবেশী এই দু’দেশ যখনই বাইশ গজে মুখোমুখি হয়, প্রতি বারই সেটা মরণ-বাঁচন লড়াই। আর সেই যুদ্ধের মুখেই ক্রিকেট-কূটনীতির সুযোগকে পুরোদমে কাজে লাগাতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই ক্রিকেট কূটনীতি নতুন নয়। আশির দশকে পাকিস্তানের তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট জিয়া উল হক দু’দেশের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ দেখার উপলক্ষে এসেছিলেন জয়পুর। ২০০৫-এ এসেছিলেন পারভেজ মুশারফ এবং ২০১১ সালে তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি। মুশারফ ও গিলানির সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বৈঠক হয়েছিল ক্রিকেট ম্যাচ উপলক্ষ করেই।

বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিন জানিয়েছেন, “ক্রিকেট হল দু’দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগের প্রতীক। প্রধানমন্ত্রীর বিদেশনীতিতে অনেকগুলি স্তর রয়েছে। একটি হল প্রকাশ্য কূটনীতি, অন্যটি দু’দেশের নেতাদের মধ্যে শীর্ষ স্তরের কূটনৈতিক আদানপ্রদান। তা ছাড়াও রয়েছে দু’দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো। ক্রিকেটের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান সব চেয়ে কাছে আসতে হতে পারে।”

পাক বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রিফাত মাসুদ স্থানীয় সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদীর এই ফোন করাকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এ থেকে ইতিবাচক ফল মিলতে পারে বলে তিনি আশা করেন। পাক রেডিওর খবর, শরিফ ফোনে মোদীকে বলেছেন, দু’দেশের মধ্যে বকেয়া সব বিরোধই আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নিতে চান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার দিন থেকেই প্রতিবেশী কূটনীতির উপর জোর দিয়েছিলেন মোদী। পাকিস্তনের সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমিত করে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানো ও দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃত্বভার গ্রহণ করার নীতি নিয়ে এগিয়েছেন তিনি। কিন্তু মোদীর দিক থেকে প্রবল প্রয়াস থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা বন্ধ করে দিতে হয়েছিল তাঁকে। গত মে মাসের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে নওয়াজের সঙ্গে বৈঠকে স্থির হয়েছিল, যে দু’দেশের বিদেশসচিব পর্যায়ে ফের আলোচনা শুরু হবে। কিন্তু অগস্ট মাসে নয়াদিল্লিতে বসে পাক রাষ্ট্রদূত কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার প্রতিবাদে বিদেশসচিব পর্যায়ের সেই বৈঠক বাতিল করে দেয় ভারত। নওয়াজের সঙ্গে শেষ বার মোদী কথা বলেছিলেন গত ১৬ ডিসেম্বর পেশোয়ারের সেনা স্কুলে জঙ্গি হামলার পরে, মানবিকতার প্রশ্নে। তাতে অবশ্য দু’দেশের মধ্যে আলোচনার বন্ধ দরজা খোলেনি। বাইশ গজে বিশ্বযুদ্ধ শুরুর মুখে এ বার সেই রুদ্ধদ্বার খোলার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন মোদী।

কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, মাঝের এই ছ’মাসে সীমান্তে হিংসা, রক্তপাত এবং অনুপ্রবেশের মতো ঘটনা ঘটেছে লাগাতার। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়ার চেষ্টায় যথাসাধ্য বাগড়াও দিয়ে যাচ্ছে ইসলামাবাদ। গত কাল রাতেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ফোনে নওয়াজ জানিয়েছেন, কাশ্মীর নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাব ভারত মানেনি। নিরাপত্তা পরিষদে ভারতকে স্থায়ী সদস্য করাটা তাঁরা মেনে নেবেন না। এই নেতিবাচক পরিস্থিতিকে বদলে কিছুটা শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য একাগ্র চেষ্টা এবং ইচ্ছা রয়েছে মোদীর। নিজেই টুইট করে বিষয়টি খোলসা করেছেন। তিনি বলেছেন, “৫টি সার্কভুক্ত রাষ্ট্র বিশ্বকাপ খেলছে এবং ব্যাপারটি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। আমি নিশ্চিত বিশ্বকাপের মাধ্যমে খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতারই উদ্যাপন হবে। ক্রীড়ামোদীদের কাছে তা উপভোগ্য হয়ে উঠবে।” তিনি আজ শরিফকে বলেছেন যে ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে একটি গা-গরম করা ম্যাচে নওয়াজ যে খেলেছিলেন, সে কথা জানেন তিনি! সেই ম্যাচে নওয়াজের সতীর্থ ছিলেন ইমরান খান, যিনি আজ নওয়াজের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, মোদীর মুখে এই কাহিনির উল্লেখ শুনে চমৎকৃত নওয়াজ। বলেছেন, “কাশ উয়ো দিন দুবারা আতে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nawaz sharif cricket modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE