প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার সোলে।
আমার আগে এবং আমার সময়ে— এ বার বিদেশ সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বার্তায় এই তুলনা উঠে এসেছে অন্তত দু’বার। প্রথমে শনিবার, সাংহাইতে। পরে সোমবার, সোলে। আর তাতেই বাঁধ ভেঙে গিয়েছে টুইটারে। এই প্রথম ‘নিন্দাবাদের’ তোড় ঝাঁপিয়ে পড়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর উপরে। যার মূল কথা: দেশে দুই জমানার তুলনা করার জায়গা কি বিদেশের মঞ্চ?
সাংহাইয়ে অনাবাসী ভারতীয়দের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী মোদী জানিয়েছিলেন কী ভাবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি এখন ভারতকেও স্বীকৃতি দিচ্ছে। কথায় কথায় তিনি বলেন, ‘‘এক বছর আগেও ‘ছোড়ো ইয়ার, ডুবে গিয়েছি, কিছু হবে না, ভগবানই ভরসা, জানি না আগের জন্মে কী পাপ করেছি ভারতে জন্ম নিয়ে’— এ ধরনের মনোভাব ছিল।’’ তার পরে তিনি দাবি করেন, ‘‘আর আজ বিশ্বে সব চেয়ে দ্রুত গতিতে যে দেশ অগ্রগতি করছে, তার নাম ভারত।’’ পরে সোলেও প্রায় একই কথা শোনা গিয়েছে তাঁর কণ্ঠে।
আজ সকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যে বিতর্কের ঝড় ওঠে। কয়েক ঘণ্টার জন্য টুইটারে সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেন্ড ছিল ‘মোদীইনসাল্টইন্ডিয়া’ হ্যাশট্যাগ। তার মোদ্দা বিষয় ছিল, প্রধানমন্ত্রী দেশকে অপমান করেছেন। কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরে টুইটারে এমন প্রতিবাদের ধাক্কায় পড়েননি মোদী।
গ্রাম দেখতে রাহুল। অমেঠীর এক কৃষক পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে আসছেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হতেই কংগ্রেস মাঠে নেমে পড়ে। কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলকে দিয়ে তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক ডাকান দলীয় নেতৃত্ব। সিব্বল বলেন, ‘‘বিশ্বের ইতিহাসে কখনও হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে বলছেন যে, আমাদের দুর্ভাগ্য যে এ দেশে জন্মেছি। রাজনীতির জন্য প্রধানমন্ত্রী এত নীচে নামতে পারেন!’’ কংগ্রেস সূত্রে খবর, মোদী সরকারের বর্ষপূর্তির সময় রাহুল গাঁধীও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে পারেন।
বেগতিক বুঝে বিজেপিকে এর মোকাবিলায় নামতে হয়। টুইটারে ‘মোদীইন্ডিয়াজপ্রাইড’ হ্যাশট্যাগটির মাধ্যমে তারা জবাব দিতে শুরু করে। মোদী সমর্থকেরা এই হ্যাশট্যাগটিকে এগিয়ে নিয়ে যান। পরে ব্লগে জবাব দিতে শুরু করেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও। তিনি কংগ্রেস আমলের দুর্বলতাগুলো তুলে ধরতে থাকেন।
ইউপিএ জমানার প্রসঙ্গ তুলে জেটলির দাবি, তখন বারবার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কিছু ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিকে সুবিধে পাইয়ে দিয়েছিল কংগ্রেস। ফলে, সার্বিক ভাবে লগ্নিকারীদের আস্থা ধাক্কা খায়। অনেক ক্ষেত্রেই আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। সিবিআইয়ের উপরে চাপ তৈরি করেছিল ইউপিএ সরকার। ফলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলি দুর্বল হয়।
এর পরেই গত এক বছরের প্রসঙ্গ টেনে জেটলির তুলনা, এক বছরে দেশের ভোল অনেকটাই বদলে দিয়েছে এনডিএ সরকার। দুর্নীতি শব্দটা মুছে দেওয়া হয়েছে। শক্তিশালী হয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। গরিবদের স্বার্থে বহু প্রকল্প আনা হয়েছে। রাতে মোদী দেশে ফেরার আগে এ ভাবেই পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেয় বিজেপি। কিন্তু তাতেও কি পুরো ক্ষত সারল? বিশেষ করে সামনে (২৫ মে) যখন মোদী সরকারের বর্ষপূর্তি রয়েছে, তখন এই তুলনা তো বারবার উঠবে। বিজেপি নেতারা অবশ্য বলছেন, তখন তো টক্কর হবে দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে। বিদেশে বসে দেশকে হেয় করার প্রশ্ন তো সেখানে উঠবে না!
ছবি: পিটিআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy