—ফাইল চিত্র।
নিজের দলের নেতাদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ— ব্যাঙ্কের খতিয়ান দিন।
শুনে একজোট বিরোধীরা বলছেন— প্রহসন!
গত কয়েক দিন ধরেই বিরোধীরা অভিযোগ তুলে আসছেন, নোট বাতিলের খবর বেছে বেছে ফাঁস করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তা না হলে তাঁর ঘোষণার ঠিক আগেই পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি কী করে মোটা টাকা ব্যাঙ্কে ঢোকাল? শুধু সেপ্টেম্বরে সমস্ত ব্যাঙ্কে মোট জমার পরিমাণ চোখে প়ড়ার মতো বেড়ে গেল কেন? মোদীর ঘোষণার আগে কী করে গোটা দেশে একের পর এক জমি কিনে ফেলল বিজেপি? তবে কি নিজেদের টাকা সামলে নেওয়ার পরেই মোদী নোট বাতিলের ঘোষণা করেছিলেন, প্রশ্ন বিরোধীদের।
সেই অভিযোগের মুখে পড়েই আজ মোদী নির্দেশ দিয়েছেন, ২০১৭-র পয়লা জানুয়ারি বিজেপির সব মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়ককে নিজেদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের কাছে জমা দিতে হবে। ৮ নভেম্বর (নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার দিন) থেকে শুরু করে ৩১ ডিসেম্বর (পুরনো নোট ব্যাঙ্কে জমার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরের দিন) পর্যন্ত প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কী লেনদেন হয়েছে, তার পুরো খতিয়ান ওই দিন জমা দিতে হবে বলে দলীয় বৈঠকে জানিয়েছেন মোদী। তার পর সেই হিসেব জনসমক্ষেও আনা হবে। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে আরও বলেছেন, সব কালো টাকা উদ্ধার করা হবে। গরিবের টাকা গরিবদের জন্যই খরচ হবে। সোমবারের মধ্যে সব নির্বাচনী কেন্দ্র, পঞ্চায়েত, পুরসভায় গিয়ে গরিবদের এই কথা বোঝাতে দলীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু এই দাওয়াইয়েও বিরোধীরা আদৌ মজছেন না। তাঁদের মতে, মোদীর নির্দেশের গোড়াতেই রয়েছে গলদ। কী রকম?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরীবাল থেকে শুরু করে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সূর্যেওয়ালা কার্যত একটাই প্রশ্ন তুলেছেন— নোট বাতিলের ঘোষণার পর থেকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হিসেব নিয়ে কী লাভ হবে? আসল অভিযোগ তো এই যে, মোদী বেছে বেছে নোট বাতিলের খবরটা নিজের ঘনিষ্ঠদের কাছে আগাম ফাঁস করেছিলেন। তাই ৮ তারিখের আগে কার অ্যাকাউন্টে কত জমা পড়েছে, দেখা হোক। আর বিজেপির নেতারাই বা জনে জনে কেন হিসেব দেবেন? খোদ অর্থমন্ত্রীর অধীনে থাকা আয়কর দফতরই তো চাইলে এক মিনিটে সকলের হিসেব বের করে ফেলতে পারে!
এক ধাপ এগিয়ে মমতার প্রশ্ন, গত আড়াই বছরের অ্যাকাউন্টের হিসেব (অর্থাৎ মোদী যত দিন ধরে ক্ষমতায় আছেন) কেন চাওয়া হবে না? টুইটারে তৃণমূল নেত্রীর কটাক্ষ, ‘‘প্রধানমন্ত্রীজি কি মনে করেন, তিনিই একমাত্র চালাক? আর বাকিরা? ২১ দিন নোটবন্দির পর গোটা দেশ ঘরবন্দি। তা হলে এই তামাশা কেন?’’ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের টুইট, ‘‘৮ নভেম্বরের ৬ মাস আগের হিসেব নেওয়া হোক। আদানি, অম্বানী, পেটিএম, বিগ বাজারেরও হিসেব নিন মোদীজি।’’
কংগ্রেস নেতা সূর্যেওয়ালা বলেন, ‘‘সেপ্টেম্বরে ব্যাঙ্কে বাড়তি যোগ হয়েছে ৫ লক্ষ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলছেন, সেটি সপ্তম বেতন কমিশনের বকেয়ার টাকা। অথচ সেই বকেয়ার পরিমাণ মাত্র ৩৫ হাজার কোটি টাকা। তা হলে বাকি টাকা কাদের?’’ প্রসঙ্গত, অগস্টে ব্যাঙ্কে জমা টাকার মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ৯৬ লক্ষ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে তা-ই হয়ে দাঁড়ায় প্রায় ১ কোটি ২ লক্ষ কোটি টাকা। কংগ্রেসের আরও প্রশ্ন, মোদীর জমানায় কেন বিদেশে টাকা পাঠানোর ঊর্ধসীমা বাড়িয়ে পুঁজিপতিদের সুবিধে করে দেওয়া হয়েছে? এ সবই তো যৌথ সংসদীয় কমিটি গড়ে তদন্তের বিষয়।
মোদীর অবশ্য দাবি, মানুষ তাঁর পাশেই রয়েছেন। তার প্রমাণ ভোটের ফল। গত রবিবার মোদীর রাজ্য গুজরাতে বিভিন্ন পুরসভা ও পঞ্চায়েত মিলিয়ে ১২৩ আসনে ভোট হয়েছিল। আজ তার ফল বেরোতে দেখা গিয়েছে, ১০৭টি আসনই ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। তাদের দখলে গিয়েছে দু’টি পুরসভা এবং একটি তালুক পঞ্চায়েত। মহারাষ্ট্রের ১৪৭টি পুরসভা এবং ১৭টি পঞ্চায়েতে প্রথম দফার ভোটের ফলও বেরিয়েছে গত কাল। দেখা গিয়েছে, ৩৭০৫টি আসনের মধ্যে ৮৫১টি জিতেছে বিজেপি। ৫১টি পুরসভায় পুরপ্রধানের পদ মোদীর দলেরই দখলে।
আজ টুইটারে মোদী লিখছেন, ‘‘গত ক’দিন দেখা গিয়েছে, উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাত— সর্বত্র ভোটে ভাল করেছে বিজেপি। এতে প্রমাণ হয়, মানুষ দুর্নীতি ও কুশাসন বরদাস্ত করেন না। তাঁরা চান উন্নয়ন।’’ দলীয় সূত্রের যদিও দাবি, বিরোধীদের ‘অপপ্রচার’ শহরের থেকে গ্রামে বেশি প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন অমিত। তাই তাঁর নির্দেশ, গ্রামে গিয়ে আরও বেশি প্রচার করতে হবে। ডিজিটাল লেনদেন নিয়েও মানুষকে শিক্ষিত করতে হবে। তবে মোদীর এই নতুন ফরমানে বিজেপি নেতারাও যে খুশি, এমন নয়। ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁরা অনেকে বলছেন, এমনিতেই সব সাংসদ নিজেদের সম্পত্তির খতিয়ান দেন। কাজেই শুধু রাজনীতির জন্য কয়েক দিনের লেনদেন জনসমক্ষে তুলে ধরার যৌক্তিকতা কী?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy