Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

রাত পোহাতেই ডিগবাজি মুলায়মের, শক্তি বাড়িয়ে ঘরে ফিরলেন অখিলেশ

চব্বিশ ঘণ্টাও সময় নিলেন না ‘নেতাজি’! কাল সন্ধ্যায় ঘরছাড়া করেছিলেন। রাত পোহাতেই ডিগবাজি খেয়ে দুপুরে ছেলেকে ঘরে ফিরিয়ে আনলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৫৮
Share: Save:

চব্বিশ ঘণ্টাও সময় নিলেন না ‘নেতাজি’! কাল সন্ধ্যায় ঘরছাড়া করেছিলেন। রাত পোহাতেই ডিগবাজি খেয়ে দুপুরে ছেলেকে ঘরে ফিরিয়ে আনলেন।

শনিবার সন্ধ্যায় উত্তরপ্রদেশের যাদব পরিবারে একটি মোক্ষম বোমা ফাটিয়ে মুলায়ম সিংহ যাদব দল থেকে বের করে দিয়েছিলেন ছেলে ‘টিপু’ অখিলেশকে। সঙ্গে অখিলেশ-ঘনিষ্ঠ তুতো-ভাই রামগোপাল যাদবকে। যার জেরে সপা-র অন্দরে তোলপাড় শুরু হয়। একটা বড় অংশই অখিলেশের পাশে দাঁড়িয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে আজ দুপুরে নাটকীয় ভাবে অখিলেশকে দলে ফেরালেন মুলায়ম। সঙ্গে রামগোপালকেও। মুলায়ম-অখিলেশ— দু’জনেরই ঘনিষ্ঠ ও প্রভাবশালী সংখ্যালঘু নেতা আজম খান ও লালু প্রসাদের দৌত্যে বাপ-বেটার বৈঠকে বহিষ্কার নাটকের যবনিকা পতন হয়। এবং তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ছেলেকে দলে ফেরানোর কথা নেতাজি ঘোষণা করালেন নিজের ছোট ভাই তথা অখিলেশের চূড়ান্ত বিরোধী শিবপাল যাদবকে দিয়ে।

রাজনীতির আখড়ায় ঘন ঘন পাল্টি খাওয়া উত্তরপ্রদেশের নেতাজির পুরনো অভ্যাস! কিন্তু এ বারে এই নয়া ডিগবাজির কারণটি কী? আসলে ঝুঁকলেন কে? নেতাজি না টিপু? এর পরে কী?

নতুন বছরের জন্য এমন হাজারো প্রশ্ন জিইয়ে রাখলেন নেতাজি। অখিলেশের মার্কিন রাজনৈতিক উপদেষ্টা স্টিভ জার্ডিং-এর জুলাই মাসে লেখা একটি ই-মেল কাল রাত থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে। যেখানে যাদব পরিবারের লড়াই তৈরি করে অখিলেশের হাত শক্ত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন স্টিভ। এ
ধরনের কোনও ই-মেলের কথা
অবশ্য স্টিভ অস্বীকার করেছেন। কিন্তু লখনউ থেকে দিল্লির অলিন্দে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, অখিলেশকে বের করা ও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফিরিয়ে নেওয়া— গোটাটাই কি চিত্রনাট্যের অঙ্গ?

জাতীয় রাজনীতির অনেকেই বলছেন, অখিলেশকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আসলে পুরোটাই সাজানো ঘটনা! এটা ছিল মুলায়মের মাস্টারস্ট্রোক! আর যাই হোক, অখিলেশ পরিবারের বড় ছেলে। শুধু তাই নয়, টিপুর জন্মের পরেই রাজনৈতিক উত্থান হয়েছে নেতাজির। তাই ভোটের আগে দলে টিপুর ভিত আরও মজবুত করে দিলেন নেতাজি। প্রথমে অমর সিংহ-শিবপাল ও মুলায়মের দ্বিতীয় স্ত্রী সাধনা (যাঁকে অখিলেশ-শিবির কৈকেয়ী বলে!)-র চাপে অখিলেশকে সরিয়ে মাথা নোয়ানোর ভঙ্গি করলেন। তার পরে ছেলের বিরোধী শিবিরকে দেখিয়ে দিলেন, দলে টিপুর জনপ্রিয়তা কতটা। যার জোরে তাঁকে ফেরাতে ‘বাধ্য’ হলেন তিনি!

সপা নেতারা অবশ্য বলছেন, বিষয়টি এতটা সরল নয়। আগেও যাদব বংশের বিবাদ সামনে এসেছে। আজকের পরেও যে সব মিটে গিয়েছে, তা নয়। আগামিকাল দলের বৈঠকেই বোঝা যাবে, এই আপাত সন্ধি কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে। চিত্রনাট্যের অঙ্গ হলে এত কোন্দল হত না। অখিলেশ আজও বাবার কাছে দাবি করেছেন, অমর সিংহকে দল থেকে বের করে দিতে হবে। নেতাজি এখনও তা করেননি। প্রার্থী তালিকা সংশোধনের দাবিও তুলেছেন অখিলেশ। সে ব্যাপারেও মুলায়মের তরফে স্পষ্ট ভাবে‌ কিছু জানানো হয়নি। শিবপালকে সরিয়ে অখিলেশকে ফের সভাপতি করার দাবি উঠেছে। তাতেও কোনও সাড়াশব্দ নেই।

তা হলে কী হল?

সপা নেতৃত্বের বড় অংশ বলছেন, আসলে জয় হল অখিলেশের। আজ একদিকে অখিলেশ-রামগোপাল অন্য দিকে নেতাজি-শিবপাল আলাদা আলাদা ভাবে যে বৈঠক ডাকেন, সেখানেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, যাদব-পরিবারের যুদ্ধে সপা-র সিংহ ভাগ বিধায়কের সমর্থন টিপুর দিকে।

অখিলেশ শিবিরের দাবি, তাদের বৈঠকে ১৯০ জন বিধায়ক গিয়েছেন। শিবপালের ডাকে সাড়া দিয়েছেন মাত্র ২২ জন ও ৬০ জন নতুন প্রার্থী। গত কাল অখিলেশকে বহিষ্কারের ঘোষণার পরেই সপা-র নতুন প্রজন্ম খেপে ওঠে শিবপালের বিরুদ্ধে। দক্ষিণ ভারতের ধাঁচে গো-বলয়ের সবচেয়ে বড় রাজ্যে অখিলেশের সমর্থনে আত্মহত্যার চেষ্টাও দেখা গেল। রাহুল সিংহ নামে সপা-র এক যুব নেতা গায়ে আগুন দেন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। আরও কয়েক জন একদিকে অখিলেশ-রামগোপাল অন্য দিকে নেতাজি-শিবপাল আলাদা আলাদা ভাবে যে বৈঠক ডাকেন, সেখানেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, যাদব-পরিবারের যুদ্ধে সপা-র সিংহ ভাগ বিধায়কের সমর্থন টিপুর দিকে।

অখিলেশ শিবিরের দাবি, তাদের বৈঠকে ১৯০ জন বিধায়ক গিয়েছেন। শিবপালের ডাকে সাড়া দিয়েছেন মাত্র ২২ জন ও ৬০ জন নতুন প্রার্থী। গত কাল অখিলেশকে বহিষ্কারের ঘোষণার পরেই সপা-র নতুন প্রজন্ম খেপে ওঠে শিবপালের বিরুদ্ধে। দক্ষিণ ভারতের ধাঁচে গো-বলয়ের সবচেয়ে বড় রাজ্যে অখিলেশের সমর্থনে আত্মহত্যার চেষ্টাও দেখা গেল। রাহুল সিংহ নামে সপা-র এক যুব নেতা গায়ে আগুন দেন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। আরও কয়েক জন আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতে রাহুল গাঁধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা প্রকাশ্যেই অখিলেশের পক্ষে থাকার বার্তা দেন। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিল, নিজের সমর্থকদের নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়লে আসন্ন ভোটে বাজিমাত করে ক্ষমতায় ফিরতে পারেন অখিলেশ। সে ক্ষেত্রে নিজের হাতে গড়া সপা-র পার্টির ভাঙন দেখতে হবে বৃদ্ধ নেতাজিকে।

এই অবস্থায় বাবা-ছেলের সন্ধি করাতে উদ্যোগী হন লালু প্রসাদ, আজম খানের মতো নেতারা। দু’জনের সঙ্গেই দফায় দফায় কথা বলেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত বন্ধ ঘরে অখিলেশের সঙ্গে মুলায়মের বৈঠকে শান্তি ফেরে। লালু পরে বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ দেশের ভবিষ্যৎ ঠিক করে। ওখানে সব ঠিকঠাক করা আমাদের দায়িত্ব। অখিলেশের মধ্যে দম আছে। সমাজবাদী পার্টিরই সরকার হবে। বিজেপি যাবে চতুর্থ স্থানে।’’ ঘটনাচক্রে অখিলেশকে দলে ফেরানোর ঘোষণার সময় শিবপালও ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি’র বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়ার কথা বলেছেন। আজম খানও বলেন, ‘‘সংখ্যালঘুরা জানেন, সমাজবাদী দুর্বল হলে বিজেপির হাত শক্ত
হয়।’’ ঘটনাচক্রে আজ সপা-র ওয়েবসাইট থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে শিবপালের ছবি।

সপা-য় ভাঙনের আশায় কাল বিজেপি নেতাদের মুখে যে হাসি ফুটেছিল, আজ তা উধাও। একই অবস্থা মায়াবতীর দলেরও। কংগ্রেস এখনও ঘরোয়া স্তরে সপা-র সঙ্গে সমঝোতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না। বরং দলে অখিলেশের অবস্থান আরও মজবুত হলে, নয়া প্রার্থী তালিকা হলে সমঝোতার আশাই দেখছে তারা।

কিন্তু এ সবের মধ্যে ‘আঙ্কল’ অমর সিংহ কোথায়? তাঁকে তাড়ানোর জন্য অখিলেশ নিরন্তর চাপ দিচ্ছেন মুলায়মকে। অখিলেশ দলে ফেরায় অমরের অবস্থান নড়বড়ে হল বলেই মনে করছেন অনেকে। অমর এ দিনও লন্ডনে বসে নজর রেখেছেন লখনউয়ের গৃহযুদ্ধের দিকে। সকাল থেকে দু’দফায় নিজের বক্তব্য ভিডিও করেও পাঠিয়েছেন। টিপু ঘরে ফেরার আগে ও পরে। প্রথমে ভাগবত পুরাণ উদ্ধৃত করে অখিলেশকে বিঁধে বলেছেন, ‘‘বেটা রাজ করবে, বেচারা বাপ জঙ্গলে যাবে!’’ টিপুর প্রত্যাবর্তনের পর বললেন, ‘‘মুলায়ম আবার পরিণত রাজনীতিকের পরিচয় দিয়ে দেখালেন, পরিবার ও দল ভাঙতে দেবেন না। কারও যদি আমায় নিয়ে সমস্যা থাকে, তা হলে নিজের বলিদান দিয়েও পরিবার বাঁচাব।’’

আরও পড়ুন: সপা নাটকে আবার মোড়, মুলায়মকে সরিয়ে দলের সভাপতি অখিলেশ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Akhilesh Yadav Mulayam Singh Yadav
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE