ফতিমাকে এ ভাবেই তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। রাতে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ছবি টুইটারের সৌজন্যে।
জহওরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বিক্ষোভে ফের তেতে উঠল দিল্লি। যার দৌলতে অবরোধ-আন্দোলনের চেনা ছবি ফিরল রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র ইন্ডিয়া গেট চত্বরে। কিছুক্ষণের জন্য হলেও।
গত ২৩ দিন ধরে জেএনইউয়ের নিখোঁজ ছাত্র নজীব অহমদকে নিয়ে আন্দোলন ক্যাম্পাসের ঘেরাটোপ থেকে রবিবার পৌঁছে গেল ইন্ডিয়া গেটে। সেখানে জেএনইউয়ের পড়ুয়ারা বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করার আগেই অবশ্য শ’দুয়েক ছাত্রের সঙ্গে নজীবের মা এবং বোন-কেও আটক করে টেনে-হিঁচড়ে থানায় নিয়ে গেল পুলিশ। যার নিট ফল, ইন্ডিয়া গেট চত্বর ফাঁকা হয়ে গেলেও রাত পর্যন্ত কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে রইল গোটা দিল্লি।
১৪ অক্টোবর রাতের পর থেকে জেএনইউয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র নজীবের খোঁজ মিলছে না। অভিযোগ, ওই দিন আরএসএসের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র সদস্যদের হাতে মার খান নজীব। তার পর থেকেই তাঁর খোঁজ মিলছে না। নজীবের সহপাঠী ও বন্ধুদের অভিযোগ, বিজেপির নির্দেশেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না নরেন্দ্র মোদী সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা দিল্লি পুলিশ। এ দিন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েও একই অভিযোগ করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। পরে তিনি টুইটারে বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও জেএনইউ-এর কাছে নজীবের নিখোঁজ হওয়া রিপোর্ট তলব করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।’’
নজীব নিয়ে ক’দিন ধরে ক্ষোভ বাড়ছে জেএনইউয়ের ছাত্রদের। উত্তরপ্রদেশ ভোটের আগে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে মোদী-বিরোধিতার সুর আরও চড়া করতে মরিয়া বিরোধীরা। নজীবকে উদ্ধারের দাবিতে ক’দিন আগেই জেএনইউ-র মঞ্চে উপস্থিত হন সিপিএমের প্রকাশ কারাট, কংগ্রেসের শশী তারুর, কেজরীবাল। সেখানে কেজরীবাল বলেন, এই আন্দোলনকে ক্যাম্পাসের চৌহদ্দি থেকে বার করে ইন্ডিয়া গেটে আনা হোক। সেই পথে হেঁটেই আজ ইন্ডিয়া গেট চত্বরে বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা করেছিল জেএনইউয়ের ছাত্ররা। যদিও ছাত্রদের আটকাতে এবং কেজরীবালের আম আদমি পার্টির সমর্থকেরা যাতে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে না পারে, সে জন্য অনেক আগে থেকেই ইন্ডিয়া গেটমুখী সব রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। দিল্লি পুলিশ সূত্রের দাবি, অণ্ণা হজারের আন্দোলনের সময়ে কয়েক দিন ইন্ডিয়া গেট চত্বর অবরুদ্ধ ছিল।
নিখোঁজ ছাত্র নজীব অহমদ।
আজও সে ধরনের কিছু হতে পারত। তাই তারা ঝুঁকি নেয়নি। বিরোধীদের অভিযোগ, কেন্দ্রের নির্দেশে দিল্লি পুলিশ রাজধানীকে দুর্গ বানিয়ে আন্দোলন স্তব্ধ করতে চেয়েছে। এটা চরম স্বৈরাচারিতা। রবিবার দুপুর থেকে ইন্ডিয়া গেট চত্বরের আশাপাশে জড়ো হতে থাকেন জেএনইউয়ের পড়ুয়ারা। নজীবের বোনকে নিয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে যোগ দেন তাঁর মা ফতিমা অহমদ। অবিলম্বে নজীবকে উদ্ধারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ভিড় বাড়তে শুরু করায় সক্রিয় হয়ে ওঠেন পুলিশ-কর্তারা।
বিক্ষোভ শুরু হওয়ার অল্পক্ষণের মধ্যেই শ’দুয়েক পড়ুয়ার পাশাপাশি আটক করা হয় নজীবের মা এবং বোনকে। জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক শতরূপা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুলিশ নজীবকে খুঁজতে ব্যর্থ, অথচ ছেলের খোঁজে আসা মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে বাধেনি! ওনাকে মারধর করা হয়েছে। হিঁচড়ে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়েছে।’’ কাঁধে ও পায়ে চোট লাগে নজীবের বোনের। নজীবের মা-কে মায়াপুরী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে থানায় গেলে কেজরীবালকে জানানো হয়, ফতিমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে এসেছে পুলিশ। নজীবের বোন ও বাকি পড়ুয়াদের মন্দির মার্গ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
দিল্লি পুলিশের আচরণের নিন্দা করেছে বিরোধীরা। ফতিমাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার ছবি টুইট করেন সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি। সিপিএম ও কংগ্রেস দু’দলই জানিয়েছে, আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে এ নিয়ে সরব হবে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy