—ছবি পিটিআই।
তালি বাজাতে দু’হাতই দরকার।
বলা হয় এই প্রবাদবাক্যটি তৈরি হয়েছিল প্রাচীন রোমান সভ্যতায়। কারণ সেই সময়েই নাটক, ঘোড়ায় টানা রথের দৌড়, খেলাধুলোর তারিফ করতে হাততালির প্রথা শুরু। তবে সে ছিল প্রাচীন হাততালি। দু’টি হাতের পাতা আর আঙুলের ঠোকাঠুকি। তাতে আওয়াজ হত না তেমন। কিছু পরে দুই তালু বাজিয়ে অভিনন্দন জানানো শুরু। তারও পরে টেবিল চাপড়ানো।
মজার ব্যাপার, আজ ভারতের সমাজ-রাজনীতিতে যে হাততালি নিতান্ত জলভাত হয়ে গিয়েছে, তা কখনই দেশের ঐতিহ্যে ছিল না। স্বামী বিবেকানন্দ আমেরিকাবাসীকে ‘ভাই এবং বোনেরা’ সম্বোধন করার পর দীর্ঘ ক্ষণ বক্তৃতা বন্ধ রাখতে হয়েছিল শিকাগোর প্রেক্ষাগৃহে অভিনন্দনের তুমুল ঝড়ের জন্য। কিন্তু ভারতে মুখে সাধুবাদ দেওয়া বা শূন্যে হাত ছোড়াই ছিল দস্তুর।
ব্রিটেন থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়ে ভারতেও হাততালি ও টেবিল চাপড়ানো ক্রমশ প্রথাসিদ্ধ হয়ে উঠেছে। লোকসভায় রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় সেনাদের শক্তি বাড়াতে রাফাল বিমান কেনার প্রসঙ্গ উঠতেই সরকার পক্ষের দীর্ঘ হাততালি বৃহস্পতিবারেও নজর কেড়েছে। রাজনীতিকরা বলছেন, মোদী জমানায় এই হাততালির সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে আরও ছন্দোবদ্ধ এবং মিল খাওয়ানো। অথচ ক্ষমতায় আসার ঠিক এক বছর আগে রাজনাথ সিংহ মনমোহন সরকারের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘‘আমরা দায়িত্বশীল বিরোধী দল। চিয়ারলিডার তো নই যে সমস্ত দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে হাততালি দিতে থাকব!’’ যদিও ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’ অনুষ্ঠানে মোদী মঞ্চে প্রবেশের পর তুমুল হাততালিই হোক কি ‘নর্মদে সর্বদে’-র গগনবিদারী স্লোগান (প্রধানমন্ত্রী এবং দর্শকাসনে বসা বিপুল সংখ্যক কর্মী যৌথ ভাবে) প্রধানমন্ত্রীর জনসংযোগের বৈশিষ্ট্য হিসাবেই চোখে পড়েছে বার বার।
শুধ হাততালিই নয়, ছন্দ মিলিয়ে স্লোগান দেওয়ার বিষয়টিও মোদীর জনসভায় সুচারু ভাবে সম্পন্ন হয় তাঁর বিশাল সমর্থক বাহিনীর সৌজন্যে। এ’টিও ভারতের সনাতন ঐতিহ্যে সম্পৃক্ত নয়। এই ‘সিনক্রোনাইজড’ অভিবাদনের জন্য প্রসিদ্ধি ছিল রাশিয়া, নরওয়ে-সহ পূর্ব এবং পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশের। পরে আমেরিকার পপ কালচার এবং রক সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে এই বিষয়টি জনপ্রিয় হয়ে কালক্রমে আসে ভারত এবং বাংলাতেও। তবে রাজনীতির জগতে হাততালির বাপ-ঠাকুর্দা ছিল ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ‘হিয়ার’, ‘হিয়ার’ ধ্বনি। সপ্তদশ শতকের শেষে ব্রিটেনে কোনও সাংসদের বক্তৃতা মনে ধরলে সহযোগী দলের সতীর্থরা চিৎকার করে উঠতেন এ কথা বলেই।
যোগশাস্ত্র বলছে, প্রতিদিন বিশ মিনিট হাততালি দিলে রক্তসঞ্চালন এবং কর্মক্ষমতা বাড়ে। হাতের পাতার ২৮টি স্নায়ুকেন্দ্র সজাগ হয়, বৃদ্ধি পায় শারীরিক সক্ষমতা। যোগাসনে পারদর্শী নরেন্দ্র মোদী হয়তো গত পাঁচ বছরে এই দিকটিও ভেবে দেখেছেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy