অদ্ভুতদর্শন বলা যায় না তাকে। চোখ-কান, হাত-পা সবই ঠিক আছে। আবার অদ্ভুতও। কারণ নবজাতকের পেটের নাড়িভুড়ি সব বাইরে।
এমনই এক শিশুর জন্ম হল গত কাল দুপুরে। বর্তমানে সে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এনআইসিইউ-তে চিকিৎসাধীন।
লাবকের বিপি কেডিয়া সেন্ট্রাল হসপিটাল সূত্র জানিয়েছেন, গত কাল দুপুরে লালং চা বাগানের দীনেশ ফুলমতির স্ত্রী রেণু ফুলমতি এক কন্যা-সন্তানের জন্ম দেন। স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই জন্ম হয় তার। কিন্তু নাড়ি-ভুড়ি বেরনো দেখে সঙ্গে সঙ্গে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মা-ও সন্তানকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
লালং চা বাগানের শ্রমিক দীনেশবাবুর অভিযোগ, গতকাল মেডিক্যালে আনা হলেও বিনা চিকিৎসায় তাঁর শিশুসন্তানকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। নিজেদের উদ্যোগে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। একজন বাগানশ্রমিকের পক্ষে কি আর নিজের খরচে গুয়াহাটি নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব! ফলে ফিরে যান লক্ষ্মীপুর মহকুমার লাবকেই। বিপি কেডিয়া হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে আর্জি জানান, তাঁদের পক্ষে যেটুকু চিকিৎসা সম্ভব তাই যেন করা হয়।
কিন্তু বিনা চিকিৎসায় কি একটি নবজাতককে মারা যেতে দেওয়া যায়! লালং চা বাগান এবং লাবক হাসপাতালের পক্ষ থেকে বিষয়টি জেলাশাসক এস বিশ্বনাথনের নজরে আনা হয়। বিশ্বনাথন কথা বলেন মেডিক্যাল কলেজের সুপার এএস বৈশ্যের সঙ্গে। পরে দীনেশ-রেণু ফের নবজাতককে নিয়ে মেডিক্যালে যান। ভর্তি করা হয় এনআইসিইউ-তে। শিশুবিভাগ ও শল্যচিকিৎসা বিভাগের চিকিতসকরা যৌথভাবে শিশুটির চিকিৎসা করছেন।
মেডিক্যালের সুপার, শল্য চিকিতসক বৈশ্যর কথায়, আসলে গর্ভের মধ্যেই শিশুটির পেটের চামড়া (অ্যাবডোমিনাল ওয়াল) তৈরি হয়নি। তৈরি হয়নি নাভিও। ফলে ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র, লিভার-সহ পেটের ভেতরে যা যা চামড়ায় ঢাকা থাকে, সব বেরিয়ে রয়েছে। দুর্লভ ঘটনা না হলেও এমনটা খুব কমই হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে গ্যাসট্রপোকেসিস। এটি একধরনের গর্ভস্থ সমস্যা। এই ধরনের শিশুর জীবন যথেষ্ট ঝুঁকিবহুল।
জন্মের সময় শিশুটির ওজন ছিল ২ কিলোগ্রাম। আজ মেডিক্যালে ভর্তি করানোর সময় তা কমে হয় ১ কিলো ৮০০ গ্রাম। একেও বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন চিকিৎসকরা। দীনেশ-রেণুর এটিই প্রথম সন্তান। তাদের কথায়, গর্ভে থাকা কালে একবারও অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়নি। কী করে যে এমনটা হল! বৈশ্যবাবুর কথায়, তাঁর পেশাগত জীবনে এটি তৃতীয় ঘটনা। এর মধ্যে বছর সাতেক আগে একটি ছেলেকে তিনি বাঁচাতে পেরেছিলেন। বিনা চিকিতসায় ফেরত পাঠানো বা গুয়াহাটি নিয়ে যাওয়ার পরামর্শের কথা অবশ্য তিনি অস্বীকার করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy