কাকভোরে তোলপাড় উপত্যকা। জম্মু-কাশ্মীরে অশান্তি জিইয়ে রাখতে টাকা ছড়াচ্ছে পাক জঙ্গিরা। এমন অভিযোগের তদন্তে নেমে আজ দিনের শুরুতেই কাশ্মীরের ১৮টি জায়গায় তল্লাশি চালাল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। তল্লাশি চলল দিল্লির ৮ ব্যবসায়ীর বাড়ি ও দফতরে। অভিযোগ, এরা হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা পাচারে জড়িত এবং প্রত্যেকেই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানির ঘনিষ্ঠ। এনআইএ তল্লাশি চালায় হরিয়ানার সোনেপতেও। দিনভর ২৯টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হলো নগদ প্রায় ২ কোটি টাকা। যার মধ্যে শুধু কাশ্মীর থেকেই মিলেছে ৬৫ লক্ষ। সঙ্গে ৮৫টি স্বর্ণমুদ্রা এবং নানাবিধ অলঙ্কার। হিজবুল মুজাহিদিন ও লস্কর-এ-তইবার একগুচ্ছ লেটারহেডের সঙ্গে বেশ কিছু ল্যাপটপ, পেন-ড্রাইভও হাতে এসেছে গোয়েন্দাদের।
উপত্যকায় পাক টাকার খোঁজে সম্প্রতি নইম খান, গাজি জাভেদ বাবা এবং ফারুক আহমেদ দার নামের তিন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে জেরা করে এনআইএ। এই নইম খানকেই দিন কয়েক আগে এক টিভি চ্যানেলের স্টিং অপারেশনে পাকিস্তান থেকে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করতে শোনা গিয়েছিল। এদের থেকে তথ্য পেয়েই তল্লাশি অভিযানে নামে এনআইএ। গিলানির সঙ্গে এফআইআর-এ নাম রয়েছে ২৬/১১ হামলার মূল চক্রী হাফিজ সৈয়দেরও।
এ দিনই আবার ২০০৫-এর একটি মামলায় অভিযুক্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সাবির শাহকে নতুন করে সমন পাঠিয়েছে ইডি। হাওয়ালার মাধ্যমে কাশ্মীরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ঢোকানোর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধেও ।
গত বছর হিজবুল কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর থেকেই ফের অশান্তি শুরু হয়েছে উপত্যকায়। অভিযোগ, পুলিশকে পাথর ছোড়া থেকে শুরু করে সরকারি সম্পত্তি নষ্টের যে তাণ্ডব শুরু হয়েছে ইদানীং, তাতে মদত দিচ্ছে পাক-জঙ্গিরাই। গত মাসেই এ নিয়ে তদন্তে নামে এনআইএ। দিন কয়েক আগে এফআইআর দায়ের করে শ্রীনগরের শহরতলি হুমহামায় ঘাঁটি গাড়ে এনআইএ। আজ রাজ্য পুলিশ ও সিআরপিএফ-কে নিয়ে যৌথ তল্লাশি অভিযান চলে সেখান থেকেই। গিলানির জামাই আলতাফ ফানটুশ, ব্যবসায়ী জহুর ওয়াটালি, মিরওয়াইজ উমর ফারুকের আওয়ামি অ্যাকশন কমিটির নেতা শহিদ-উল-ইসলাম-সহ বেশ কয়েক জন দ্বিতীয় সারির হুরিয়ত নেতার বাড়ি এবং দফতরে হানা দেয় এনআইএ।
কী ভাবে টাকা ঢুকছে উপত্যকায়? সূত্রের খবর, তদন্তে নেমেই গোয়েন্দারা জানতে পারেন পাকিস্তানের ফালাহ-ই-ইনসানিয়ত ফাউন্ডেশন এবং আল রহমত ট্রাস্টের কথা। ‘স্বেচ্ছাসেবী’
এই ধরনের সংগঠনকেই মাধ্যম
করছে পাক জঙ্গিরা। একটি রিপোর্ট বলছে, কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দিতে ৭৮ কোটি পাকিস্তানি টাকা ব্যবহার হয়েছিল। এ দফায় টাকার অঙ্কটা আরও বড় বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের।
এনআইএ-র আজকের অভিযানের পরে কাশ্মীরে স্থিতাবস্থা ফেরানো নিয়ে আশাবাদী কেন্দ্রও। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘কাশ্মীরে অশান্তি ছড়াতে যে ভাবে বাইরে থেকে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে, তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।’’ তাঁর দাবি— অশান্তি নয়, কাশ্মীরের মানুষ উন্নয়নেরই শরিক হতে চায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy