সরকারি খাসজমিতে গড়ে ওঠা বস্তির বাসিন্দাদের বসবাসের বৈধ অধিকার দিতে চায় শিলচর পুরসভা। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের রাজস্ব ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের অনুমতি চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আজ পুরবোর্ডের বৈঠকে এ নিয়েই বিস্তৃত আলোচনা হয়। কংগ্রেস পুর পরিষদীয় দল আপত্তি না তুললেও সরকারি নিয়মনীতি মেনে চলতে পরামর্শ দিয়েছে। বসবাসের বৈধ অধিকারের চেয়ে কংগ্রেস সদস্যরা জমির পাট্টা দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিতে বিজেপি পরিচালিত পুরসভাকে অনুরোধ জানায়।
পুরবোর্ডের বৈঠকের পর সভাপতি নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর জানান, বস্তিবাসীরা শহরে বসবাসের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। পানীয় জল, বিদ্যুৎ কিছুই বাদ নেই। জঞ্জাল নিষ্কাশন থেকেও বঞ্চিত নন তাঁরা। কিন্তু পুরসভা তাঁদের বসবাসের বৈধতা স্বীকার করছে না বলে ওইসব এলাকায় দালানবাড়ি তৈরির জন্য কোনও মাসুল আদায় করতে পারছে না। একই ভাবে বস্তির দোকানগুলিতে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার কোনও নিয়ম চালু হয়নি। ফলে লাইসেন্স ফি-ও সংগ্রহ করা হচ্ছে না। অনেকে একে সুযোগ হিসেবে ধরে নিয়ে বিনা মাসুলে দালানবাড়ি-ব্যবসাবাণিজ্য করে চলেছেন। অনেকে আবার অনুমতি না-মেলায় নিজের ইচ্ছেমত বাড়িঘর সাজাতে পারছেন না।
নীহারবাবুর কথায়, ‘‘এখন বস্তির বাড়িগুলিতে বসবাসের বৈধতা মেনে নিলে অন্যান্য এলাকার মতো তাঁরাও হোল্ডিং নম্বর পাবেন। ওই নম্বর ব্যবহার করে পুরসভার আওতায় থাকা সমস্ত কিছুর জন্য আবেদন করতে পারবেন। বিনিময়ে পুরসভা নির্ধারিত হারে তাঁদের কাছ থেকে মাসুল আদায় করবে।’’
প্রবীণ আইনজীবী নীহারবাবু আশাবাদী, রাজ্য সরকার এই অনুমতি দিতে আপত্তি করবে না। কারণ হোল্ডিং নম্বর সহ সমস্ত কাগজপত্রে সরকারি খাসজমির কথা স্পষ্ট উল্লেখ থাকবে।
পুরসভার বিরোধী দলনেতা অলক কর বলেন, ‘‘সরকারি নিয়মনীতি মেনে বস্তিবাসীদের হোল্ডিং দেওয়া গেলে আমাদের আপত্তির কিছু নেই।’’ তাঁর আশঙ্কা, সরকার অনুমতি না দিলে পুরসভা বস্তি এলাকায় পানীয় জল, বিদ্যুৎ-সহ সমস্ত সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেবে। তিনি আগাম জানিয়ে রাখেন, ওই রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কংগ্রেস সর্বশক্তি দিয়ে লড়বে। বস্তিবাসীদের বসবাসের বৈধ অধিকার না দিলেও মানবিক কারণে তাঁদের আলো-জলের ব্যবস্থা পুরসভাকে করে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে সরকার ওই সব জমির পাট্টা দিয়ে দিলে সব সমস্যা মিটে যায় বলে মন্তব্য করেন অলকবাবু। প্রসঙ্গত, ‘আরবান লোকাল সেলফ গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া’ বইতে লেখক রামনারায়ণ প্রসাদ ২০০১ সালের পরিসংখ্যান তুলে জানিয়েছেন, শিলচর শহরে বস্তিবাসীর সংখ্যা ৭৪ হাজার, যা মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ। পরবর্তী সময়ের কোনও পরিসংখ্যান পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর আজ দিতে পারেননি। ন্যাশনাল স্লাম ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম-র এক রিপোর্টে জানা যায়, শিলচরে ৪৩টি বস্তি-পকেট রয়েছে। ২৮ ওয়ার্ডের ২২টিতেই কম-বেশি বস্তি রয়েছে। এর মধ্যে মালিনিবিল, ইদগাঘাট, ইটখলাঘাট, কালীবাড়িচর, নিউ কলোনি উল্লেখযোগ্য।
তবে দ্য ক্লেরিয়ন-এ প্রকাশিত ইমপ্যাক্ট অব স্লাম এরিয়াজ ইন দ্য এনভায়রনমেন্ট অব শিলচর টাউন অব আসাম প্রবন্ধে গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের গবেষক মনালি সিংহ ও জয়শ্রী বরা জানিয়েছেন, শিলচরের বস্তিগুলির অধিকাংশ বাড়ি বাঁশ-বেতে তৈরি। উপরে বেশির ভাগেরই টিন দেওয়া। ২০ শতাংশ ঘরে ত্রিপল দেওয়া। ১২.৫ শতাংশ বাড়িতে রয়েছে ইটের দালান, টিনে ঢাকা। তাঁরা সবাই অবশ্য জমির পাট্টার দাবিদার। হোল্ডিং নম্বরের আগে পাট্টা প্রদানের জন্য তাঁরা জোরালো দাবি করেন। বস্তিবাসীরা বলেন, পাট্টা মিললে এমনিতেই হোল্ডিং নম্বর পড়বে। এ জন্য এত জটিলতার প্রয়োজন পড়ে না। কাছাড় জেলা যুব মোর্চার সভাপতি, পুর সদস্য রাজেশ দাস বলেন, আজকের সিদ্ধান্ত ওই দাবি আদায়েরই একটি প্রক্রিয়া। বস্তিবাসীরা হোল্ডিং পেয়ে গেলে পাট্টার দাবির যৌক্তিকতা বাড়বে। তিনি জানান, তাঁর ওয়ার্ডেই সবচেয়ে বেশি বস্তিবাসী। মোট ভোটারের ৪০ শতাংশ। ফলে তিনি তাঁদের পাট্টা আদায়ে সক্রিয় বলে দাবি করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy