গুজরাতের পথে এগোল বিহার।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। আগামী বছর ১ এপ্রিল থেকে রাজ্যে মদ বিক্রি নিষিদ্ধ করার কথা ঘোষণা করলেন তিনি। আজ সকালে স্কুলছাত্রীদের এক অনুষ্ঠানে নীতীশ এ কথা জানান। রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে বিরোধী বিজেপি এবং লোকজনশক্তি পার্টি।
এ দিন নীতীশ বলেন, ‘‘মদের জন্য সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় গরিব মানুষের। দিনমজুরদের টাকা মদের পিছনে খরচ হয়ে যায়। মহিলাদের উপরেও অত্যাচার হয়।’’ তিনি জানান, গরিব মানুষ দেশি এবং অবৈধ মদ পান করেন। যার জেরে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। পরিবার নষ্ট হয়ে যায়। সে দিকে তাকিয়েই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নীতীশের মন্তব্য, ‘‘এ জন্য হয়তো রাজস্বের কিছুটা ক্ষতি হবে। তবে আমরা তা অন্য ভাবে পুষিয়ে নেব।’’ এ নিয়ে লোকজনশক্তি পার্টির নেতা চিরাগ পাসোয়ান বলেন, ‘‘সরকারের উচিত কড়া ভাবে মদ্যপান বিরোধী আইন প্রয়োগ করা।’’ তবে বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, ‘‘আরও ভাল হতো যদি সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা লালু প্রসাদ ঘোষণা করতেন।’’ তবে রাত পর্যন্ত লালু প্রসাদ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
নীতীশ কুমারের ঘোষণার পরই ‘সোশ্যাল মিডিয়া’ জুড়ে হইচই শুরু হয়ে যায়। দুপুরে পটনার এক সাংবাদিকের মোবাইলে এসএমএস করে মুখ্যমন্ত্রীকে আগামী কাল বোমা মেরে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। এই ঘটনায় শহরের শ্রীকৃষ্ণপুরী থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত শুরু করেন পটনার এসএসপি বিকাশ বৈভব। ওই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে সন্ধেয় মধুবনি
থেকে অজয় কুমার নামে এক
যুবককে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের ধারণা, মদ বন্ধ করার জন্যই মুখ্যমন্ত্রীকে এই হুমকি।
গত ৯ জুলাই গাঁধী ময়দান লাগোয়া শ্রীকৃষ্ণ মেমোরিয়াল হলে নারী ও সমাজকল্যাণ দফতরের রাজ্যস্তরের কর্মশালায় মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে কয়েক জন মহিলা রাজ্যে মদ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল— মদের জন্য সংসারে শান্তি নেই। আয়ের বেশির ভাগই চলে যাচ্ছে নেশার জিনিসের পিছনে। সরকার কিছু করছে না। মন দিয়ে মহিলাদের অভিযোগ শোনার পরে সেই সভাতেই নীতীশ বলেছিলেন, ‘‘প্রতি বছর অবৈধ মদ খেয়ে কয়েক হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন। এর জেরে রাজ্যে অপরাধও বাড়ছে। রাজ্যের মানুষকে সুস্বাস্থ্য দেওয়ার জন্য মদ বন্ধ করার সময় এসেছে।’’ ক্ষমতায় ফিরলে মদ বন্ধ করা হবে বলেও তিনি ঘোষণা করেছিলেন। সেই ঘোষণা ছিল বিহার বিধানসভা ভোটের আগে নীতীশ কুমারের কার্যত প্রথম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। সেই সময়ে জেডিইউয়ের অন্দরমহলে প্রশ্ন উঠেছিল, এমন ঘোষণায় কি কোনও লাভ হবে? রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, সেটাই ‘মাস্টার স্ট্রোক’ ছিল নীতীশের। মহিলারা নির্বাচনে দু’হাত তুলে নীতীশকে সমর্থন করেছেন। কমিশনের হিসেবেও দেখা যায়, গোটা রাজ্য জুড়ে নির্বাচনে পুরুষদের চেয়ে মহিলাদেরই ভোটদানের হার বেশি।
২০০৭ সালে নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার রাজ্যে নতুন আবগারি নীতি তৈরি করেছিল। অভিযোগ, সেই নীতির জেরে রাজ্যে মদের বিক্রি বেড়েছে। সমীক্ষাতেও দেখা গিয়েছে, সরকারি নীতির জেরে পুরুষদের মধ্যে মদ্যপান বেড়েছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। মহিলাদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ। মদের বিরুদ্ধে রাজ্যে ছোট-বড় আন্দোলনও হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করেছে। একটি বেসরকারি সংস্থা বিহারে মাদকের প্রভাব নিয়ে সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। তাতে দেখা যায়, রাজ্যের প্রায় ৫৮ শতাংশ বাসিন্দা মদ্যপান করেন। বিক্রি হওয়া মদের ৬৮ শতাংশ পান করেন ১৮ থেকে ৩৫ বছরের তরুণ। স্বাভাবিক ভাবেই বিহারের এই মাদক-চিত্র বদলাতে উদ্যোগী হন নীতীশ কুমার। নিজের তৈরি নীতিই এ বার তাই পাল্টে দিতে চাইছেন তিনি।
আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৫ সালে মদ বিক্রি থেকে রাজ্যের আয় হতো প্রায় ৩১৯ কোটি টাকা। সেখানে ২০১২-১৩ সালে আয় হয় ২ হাজার ৪৩১ কোটি। ২০১৩-১৪ সালে তার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। গত আর্থিক বছরে আয় ছাড়ায় ৪ হাজার কোটি টাকার উপরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy