Advertisement
০২ মে ২০২৪

চাঁদার গাড়ি হল না রামিয়ার, ভিএসের বিলে ‘না’ বিজয়নের

কেরল থেকে এ বার লোকসভায় একমাত্র মহিলা সাংসদ রামিয়া হরিদাস। যুব কংগ্রেসের এই দলিত নেত্রীকে তাঁর ‘কৃতিত্বে’র স্বীকৃতি হিসেবে গাড়ি উপহার দেওয়ার মনস্থ করেছিলেন সংগঠনের নেতারা।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৯ ০২:১৫
Share: Save:

প্রথম জন তরুণ সাংসদ। দলের কর্মীরা চাঁদা তুলে তাঁকে গাড়ি উপহার দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাধ সেধেছে দল। দ্বিতীয় জন প্রবীণ নেতা এবং রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দফতরের দুই সহকারীর সরকারি সফরের বিমান টিকিটের বিল পাঠানো হয়েছিল রাজ্য সরকারের কাছে। কিন্তু স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী সে বিলে অনুমোদন দেননি! এই দুই ‘না’ ঘিরেই বিতর্ক দেখা দিয়েছে কেরলের রাজনীতিতে।

কেরল থেকে এ বার লোকসভায় একমাত্র মহিলা সাংসদ রামিয়া হরিদাস। যুব কংগ্রেসের এই দলিত নেত্রীকে তাঁর ‘কৃতিত্বে’র স্বীকৃতি হিসেবে গাড়ি উপহার দেওয়ার মনস্থ করেছিলেন সংগঠনের নেতারা। ঠিক হয়েছিল, গণ-চাঁদা তুলে (ক্রাউড ফান্ডিং) গাড়ি কেনা হবে। কিন্তু কংগ্রেসের সাংসদের গাড়ি কেনার জন্য কেন সাধারণ মানুষের কাছে চাঁদা চাওয়া হবে, এই নিয়ে প্রথম বিতর্ক বাধে। তখন যুব কংগ্রেস নেতৃত্ব জানান, তাঁদের সংগঠনের কর্মীরাই গাড়ির জন্য ১৪ লক্ষ টাকা তুলে দেবেন। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব জানান, এমন সিদ্ধান্ত দলের আদর্শ ও ভাবনার সঙ্গে মানানসই নয়। শেষমেশ রামিয়াই পরিকল্পনা বাতিল করতে বলেছেন।

দ্বিতীয় বিতর্কের কেন্দ্রে আবার সিপিএমে ভি এস অচ্যুতানন্দন ও পিনারাই বিজয়নের পুরনো দ্বন্দ্ব। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভি এস এখন রাজ্যের প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান। তাঁর পদের মর্যাদা পূর্ণমন্ত্রীর সমতুল। সম্প্রতি ওই কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি সরকারি সফরে গিয়েছিলেন। তার জন্য তাঁর দফতরের দুই সহকারীর বিমান টিকিট ও অন্য খরচ বাবদ ৮৩ হাজার ৩২৩ টাকার বিল পাঠানো হয়েছিল। অর্থ দফতরের সংশ্লিষ্ট আধিকারিক এবং অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাক ফাইল ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারি সূত্রের খবর, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন ‘নোট’ দিয়ে সেই ফাইল আটকে দিয়েছেন। কেন হঠাৎ ভি এসের দফতরের বিল নিয়ে এমন ‘কঠোর মনোভাব’ বিজয়নের, প্রশ্ন উঠেছে সিপিএমের অন্দরেও। অর্থমন্ত্রী আইজ্যাক অবশ্য বলেছেন, কোথাও কোনও ‘টেকনিক্যাল’ সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। ভাল করে না জেনে তিনি মন্তব্য করতে চান না।

সাংসদ রামিয়ার বিষয়ে মুখ খুলেছিলেন কেরল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মুল্লাপল্লি রামচন্দ্রন। যুব কংগ্রেসের ‘ক্রাউড ফান্ডিং’-এর উপহারকে তাঁর জন্য ‘সম্মান’ বলেই বর্ণনা করেছিলেন রামিয়া। ভাবা হয়েছিল, ৯ অগস্ট যুব কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসে তাঁর হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু প্রদেশ সভাপতি রামচন্দ্রন বলেন, ‘‘সাংসদেরা গাড়ি কেনার জন্য সহজ শর্তে ঋণ পান। গাড়ি দরকার হলে সাংসদ সে ভাবেই ব্যবস্থা করতে পারেন। চাঁদা তুলে গাড়ি কিনে দেওয়া আমাদের দলের দর্শনের সঙ্গে খাপ খায় না। আমি রামিয়ার জায়গায় থাকলে এমন প্রস্তাবে ‘না’ বলতাম!’’

শেষ পর্যন্ত রামিয়াও ‘না’ বলেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দল আমাকে সাংসদ করেছে। দলের আদর্শই শেষ কথা। এমন কিছু করতে চাই না, যাতে দলের ভাবমূর্তিতে আঁচড় লাগে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE