Advertisement
E-Paper

টাকা মিলবে কবে, প্রশ্ন উপত্যকায়

টাকা আসেনি আজও। না স্টেট ব্যাঙ্ক, না ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের কাছে। বরাক উপত্যকায় শুধু এই দুই ব্যাঙ্কেই সরাসরি টাকা আসে। কবে পাঠাতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, কেউ বলতে পারছেন না। কাল আসছে, কাল আসছে করে অনুমান করতেও রাজি নন তাঁরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৪৬
পড়াশোনা ফেলে। অভিভাবকদের সঙ্গে ব্যাঙ্কে পড়ুয়ারাও। রবিবার করিমগঞ্জে। ছবি: উত্তম মুহরী

পড়াশোনা ফেলে। অভিভাবকদের সঙ্গে ব্যাঙ্কে পড়ুয়ারাও। রবিবার করিমগঞ্জে। ছবি: উত্তম মুহরী

টাকা আসেনি আজও। না স্টেট ব্যাঙ্ক, না ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের কাছে। বরাক উপত্যকায় শুধু এই দুই ব্যাঙ্কেই সরাসরি টাকা আসে। কবে পাঠাতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, কেউ বলতে পারছেন না। কাল আসছে, কাল আসছে করে অনুমান করতেও রাজি নন তাঁরা।

ব্যাঙ্কে গিয়ে মানুষ ৫ দিন ধরেই লাইন ধরে টাকা জমা করছেন। কিন্তু সেগুলি সবই ৫০০, ১ হাজার টাকার নোট। যেগুলি আগেই বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য কোনও নোটে টাকা জমানো বন্ধই প্রায়। ফলে টাকার অন্তর্মুখী স্রোতের একটাই উপায়— রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

৮ নভেম্বর নতুন নোটনীতি ঘোষণার পর এক দিনই টাকা ঢুকেছিল বরাক উপত্যকায়। তা-ও শুধু কতগুলি ২ হাজার নোট। সে জন্য এটিএমগুলিও অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। স্টেট ব্যাঙ্ক শুধু তাদের শিলচর সদর শাখা চত্বরের ৩টি এটিএমে টাকা দিচ্ছিল এত দিন। আজ আরও ৯টি এটিএম কিছুক্ষণের জন্য চালু করা হয়। আইসিআইসিআই চালায় ৮টির মধ্যে ৫টি। এক্সিস ব্যাঙ্ক গত কাল তাদের প্রায় সবকটি এটিএমে অল্প করে হলেও টাকা রেখেছিল। আজ চলেছে মাত্র ১টি। ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক শুধু তাদের লক্ষ্মীপুর এটিএম-এ টাকা ঢোকাতে পেরেছে।

তবে স্টেট ব্যাঙ্কের সদর শাখার ৩টি এটিএম আজ বিকেল ৪টা নাগাদ বন্ধ হয়ে যায়। কার্ড হাতে লাইনে তখন প্রচুর মানুষ। আচমকা কাগজ সেঁটে দেওয়া হয়, ‘টাকা নেই। আজ আর মেশিন চলবে না।’ ক্ষোভ দেখা দেয় লাইনে দাঁড়ানো শতাধিক মানুষের।

ক্ষোভ বাড়ছে গ্রাম-শহর সর্বত্র। মানুষের নিত্যদিনের খরচ জোগানো মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে এক জনকে যে এক বারই বিনা অ্যাকাউন্টে ৪ হাজার টাকা বদলে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে, তা জানা ছিল না অনেকের। ফলে কেউ কেউ প্রথম বা দ্বিতীয় দিন টাকা বদলে নিয়ে আজ আবার লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু মেশিনে তাঁর নাম লিখতেই বেরিয়ে আসে আগে টাকা একবার বদলানোর কথা। এ নিয়েও অসন্তোষ ছিল এক-দুই জায়গায়।

ক্ষোভ রয়েছে টাকা বদলাতে বা তুলতে গিয়ে ২ হাজার টাকার নোট দেখে। তাঁদের প্রশ্ন, আজকের বাজারে কে দেবে ২ হাজার টাকার খুচরো! কেউ কেউ অবশ্য বলেন, ‘‘নিয়ে রাখি, দেখা যাবে।’’ দু-চারজনকে দেখা দিয়েছে, ২ হাজার টাকা নোটের ঝামেলা থেকে বাঁচতে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে ১ হাজার টাকা তুলতে চাইছেন।

স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার হিমাঙ্কবিহারী রায় বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ৩০ কোটি টাকা বিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা যায়, ব্যাঙ্কে নোটের সঞ্চয় এখন একেবারে শেষের পর্যায়ে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক টাকা না পাঠালে আর কিছু করার থাকবে না।’’ ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের চিফ ম্যানেজার দিব্যেন্দু জানার কথায়, ‘‘আমাদের সঙ্গে ১৪টি ব্যাঙ্কের লেনদেন রয়েছে। সবাইকেই ৫ দিন ধরে কিছু কিছু টাকা দেওয়া হচ্ছে।’’ তিনি জানান, এর মধ্যে ২২টি চা বাগানে সাপ্তাহিক মজুরির জন্য ১ কোটি ২০ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। ফলে এখন যে টাকার মজুত হাতে রয়েছে, আগামী কাল পর্যন্ত এতে চলে যাবে বলে তিনি আশা করছেন। দিব্যেন্দুবাবুর দুশ্চিন্তা, এর পর কী হবে। কারণ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে তাঁরা কোনও স্পষ্ট জবাব পাচ্ছেন না।

হিমাঙ্কবাবু অবশ্য টাকার এত সঙ্কট নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি জানান, ব্যাঙ্ক বা ডাকঘর ছোট অঙ্কের নোটগুলি কখনও চেস্টে জমা রাখার জন্য পাঠায় না। সেগুলি নিজেদের কাছে রেখে দেয়। এখন ওই নোট এরা বাজারে ছাড়ছে না কেন। এর ওপর রয়েছে, ডাকটিকিট বিক্রির প্রতি দিনের টাকা। সেই টাকা এখন বিলিয়ে দেওয়া যেতে পারে। তা হলে সঙ্কট কিছুটা কমে।

ডাকঘর কর্তৃপক্ষ অবশ্য তাঁর সন্দেহকে অমূলক বলে মন্তব্য করেন। তাঁদের কথায়, জেলা জুড়ে এখন প্রতিদিন ডাকটিকিট বিক্রি হয় মাত্র ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। ৫০ -৬০ লক্ষ টাকা নিয়েও যখন শাখা ডাকঘরগুলিকে দেওয়া যাচ্ছে না, তখন ডাকটিকিট বিক্রির টাকা তাঁরা হাতে নিয়ে বসে নেই। এ ছাড়া, চাহিদার তুলনায় ওই টাকা এত নগণ্য যে, দেওয়া আর ধরে রাখায় কোনও ফারাক হবে না। ডাক কর্তৃপক্ষ জানান, স্টেট ব্যাঙ্ক থেকে তাঁরা নতুন নির্দেশিকার পর মাত্র দু’দিন টাকা পেয়েছেন। এমনকী, আজও কোনও টাকা মেলেনি। দু’দিনের সামান্য টাকা থেকে আর্মি পোস্টাল সার্ভিস এবং রেলওয়ে মেল সার্ভিসকেও টাকা দিতে হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামাঞ্চলের মানুষ ডাকঘর নির্ভর। কিন্তু শাখাগুলিতে দেওয়ার মতো টাকা দিচ্ছে না ব্যাঙ্ক। তার উপর অহেতুক দোষারোপ!’’

নাম প্রকাশে রাজি না হলেও স্টেট ব্যাঙ্কের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অন্যান্য ব্যাঙ্কের কর্মকর্তারাও। তাঁদের কথায়, ‘‘৯ তারিখ থেকে স্টেট ব্যাঙ্কে গিয়ে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে হচ্ছে। এ যেন তাঁরা আমাদের দান করছেন।’’ তাঁদের ধারণা, স্টেট ব্যাঙ্ক শুধু নিজেরা নোট বদলে ও টাকা দিয়ে মানুষের মধ্যে বিশেষ ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে চাইছে। অন্য ব্যাঙ্কের গ্রাহকরা টাকা তুলতে গিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়ে যেন তাঁদের উপর অসন্তুষ্ট হয়।

তবে স্টেট ব্যাঙ্কও যে সব জায়গায় নিজেদের গ্রাহককে সন্তষ্ট করতে পারছে না, এমন নয়। এর উপর তাদের এটিএমগুলি অচলই রয়ে গিয়েছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।

কংগ্রেস এই দুর্ভোগের জন্য মোদী সরকারের পরিচালন ব্যবস্থাকে দায়ী করে। শিলচর জেলা কংগ্রেস সভাপতি, প্রাক্তন সাংসদ কর্ণেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রয়োজনীয় টাকার ব্যবস্থা না করে এই ধরনের সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের সঙ্গে তামাশার সামিল।’’ কংগ্রেস বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালা বলেন, ‘‘উপযুক্ত কর দিয়ে যাঁরা ব্যাঙ্কে টাকা জমিয়েছেন, তাঁদের টাকা তোলার উর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া মৌলিক অধিকার হরণের সামিল।’’ তিনি জানান, আগামী কাল থেকে যুব কংগ্রেস-এনএসইউআই কর্মীরা কাল থেকে মানুষকে টাকা পেতে সাহায্য করার জন্য ময়দানে নামবে। লাইনে বৃদ্ধ, অসুস্থ ও মহিলাদের জল পান করাবে। অশিক্ষিতদের ফর্ম পূরণ কর দেবে। রাজ্য কংগ্রেস মুখপাত্র দীপন দেওয়ানজি, জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কিশোর ভট্টাচার্য, রাজেশ দেব, পার্থরঞ্জন চক্রবর্তীও সাংবাদিকদের সঙ্গে এ নিয়ে মতবিনিময় করেন।

ডিমা হাসাও জেলার ব্যাঙ্কগুলিতে খুচরো টাকার অভাব রয়েছে। আজও হাফলং শহরের বিভিন্ন ব্যাঙ্কে গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন দিতে দেখা যায়। পুরনো ৫০০ ও ১ হাজার টাকা বদল করে অনেকে দু’টি ২ হাজার টাকার নোট পেয়েছেন। এ দিন পাহাড়ি জেলার কোনও এটিএম খোলেনি। সব ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন, ৩ সপ্তাহের আগে পাহাড়ি জেলার কোনও এটিএম-এ টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। টাকা না পেয়ে নাজেহাল পাহাড়ি জেলার মানুষ। সামনেই জেলার বিভিন্ন স্কুলে পরীক্ষা। অনেকে টাকার অভাবে স্কুলের বেতন মেটাতে পারেননি।

Bank ATM Money
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy