Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

নোট নেই এটিএমে, হয়রানি বরাকে

গত রাত পর্যন্ত সাধারণ মানুষ সব সমস্যা মেনে নিচ্ছিলেন। আশায় ছিলেন, আজ এটিএম খুললেই টাকা মিলবে। পরিমাণ সীমিত হলেও জরুরি প্রয়োজন মেটানো যাবে। কিন্তু বেলা বাড়তেই ধৈর্যের বাঁধে ভাঙন ধরে।

নতুন টাকার আশায়। করিমগঞ্জের একটি ব্যাঙ্কে গ্রাহকদের ভিড়। শুক্রবার উত্তম মুহরীর তোলা ছবি।

নতুন টাকার আশায়। করিমগঞ্জের একটি ব্যাঙ্কে গ্রাহকদের ভিড়। শুক্রবার উত্তম মুহরীর তোলা ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:০৪
Share: Save:

গত রাত পর্যন্ত সাধারণ মানুষ সব সমস্যা মেনে নিচ্ছিলেন। আশায় ছিলেন, আজ এটিএম খুললেই টাকা মিলবে। পরিমাণ সীমিত হলেও জরুরি প্রয়োজন মেটানো যাবে। কিন্তু বেলা বাড়তেই ধৈর্যের বাঁধে ভাঙন ধরে। স্টেট ব্যাঙ্কের প্রধান শাখা ছাড়া কোথাও কোনও এটিএমে টাকা ঢোকেনি। এমনকী, ডাকঘর-ব্যাঙ্কগুলিতেও টাকা নেই। খোদ স্টেট ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখায় সকাল থেকে মানুষ দাঁড়িয়ে। তাঁদের বার বার একটিই কথা শোনানো হয়, টাকা এলেই পুরনো নোট বদল, অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত বিকেলে টাকা পৌঁছয়। গ্রামাঞ্চল নয়, শহরের বুকে বিলপার শাখাতেও ছিল এই দৃশ্য। অন্যান্য ব্যাঙ্কগুলি রীতিমতো হাত তুলে দিয়েছে। ইয়েস ব্যাঙ্কের শিলচর ম্যানেজার জয়দেব দাস বলেন, ‘‘স্টেট ব্যাঙ্ক টাকা দিতে পারছে না। আমরা কী করব!’’

একই অবস্থা ডাকঘরগুলিতে। শিলচর প্রধান ডাকঘরে সকাল সাড়ে ৮টায় মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছেন। চোখের সামনে ঝুলছিল— ‘স্টেট ব্যাঙ্ক থেকে টাকা এলেই আমরা আপনাদের সেবা করতে পারি।’ টাকা যখন পেয়েছেন তাঁরা, তখন বিকেল ৪টে। এ ভাবেই দিনভর দাঁড়িয়ে থেকে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে যখন নোট পৌঁছয়, সে সময় হুলুস্থুলু পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বেশ কিছু জায়গায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

শিলচরের চেয়ে বাজে অবস্থা করিমগঞ্জ-হাইলাকান্দিতে। দিনভর এখানে-ওখানে হুড়োহুড়ি চলে। সবাই এই পরিস্থিতির জন্য স্টেট ব্যাঙ্ককেই দায়ী করছেন। তিনদিন থেকে নানা ভাবে প্রস্তুতির কথা বলা হলেও আজ স্টেট ব্যাঙ্ক কারিগরি ত্রুটির জন্য টাকা বিলিতে বিকেল গড়ায়। সাধারণ অ্যাকাউন্ট-হোল্ডারদের মতো ব্যাঙ্কগুলিকেও একই শ্রেণিভুক্ত করায় এই সমস্যা হয়েছে। যখনই কোনও ব্যাঙ্ককে নির্দিষ্ট পরিমাণ অঙ্ক দেওয়ার উল্লেখ করা হয়েছে, অনলাইনে তখনই জানানো হয়, কোনও অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকার বেশি দেওয়া সম্ভব নয়।

স্টেট ব্যাঙ্কের শিলচর অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার হিমাঙ্কবিহারী রায় অবশ্য এই সমস্যার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘‘তাঁরাই সিস্টেমে গণ্ডগোল করে রেখেছে। তাঁদের নির্দেশের বাইরে এক পা চলার সামর্থ কোথায় আমাদের!’’

তবে ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার চিফ রিজিওনাল ম্যানেজার হীরেন্দ্র নারায়ণ ঘোষাল জানিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে লেনদেন খুব কম ব্যাঙ্কেরই। তবে তাঁদের চাহিদামতো টাকা দিতে কোনও সমস্যা হয়নি। কারণ অ্যাকাউন্ট হোল্ডাররা এক শ্রেণিতে পড়েন। নিজের ব্যাঙ্ক শাখাগুলি আরেক শ্রেণি। অন্য ব্যাঙ্ক আরেকটি শ্রেণিতে পড়ে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আগেই নির্দেশিকা জানিয়ে দিয়েছিল।

তবে কেন এটিএমগুলিতে টাকা ঢুকল না? এখানে অবশ্য হীরেন্দ্র নারায়ণ ঘোষাল ও হিমাঙ্কবিহারী রায়ের বক্তব্যে মিল রয়েছে। দু’জনই জানিয়েছেন, নতুন নোট না এলে এটিএম-সেবা প্রদান সম্ভব নয়। যে টাকা দুই চেস্ট ব্যাঙ্কে মজুত রয়েছে, সেগুলি দিয়ে শাখা-ব্যাঙ্কগুলিকে কোনওক্রমে চালানো যাচ্ছে। নতুন নোট এলেই এটিএম চালু হবে। তা সোমবারের আগে সম্ভব বলে মনে করছেন না ব্যাঙ্ককর্তারা।

টাকা না আসার জন্যও হিমাঙ্কবাবু রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে দায়ী করেন। তিনি বলেন, একে তো টাকা নেই। কাল রাতে সামান্য যেটুকু এসে পৌঁছেছে, তাও সমস্ত ২ হাজার টাকার নোট। ১০০, ৫০০ ছাড়া ২ হাজার নোটে মানুষের বর্তমান সমস্যা মিটবে না। তাই সেগুলি আপাতত পড়েই রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আজ সকাল ১০টার আগে আমাদের টাকার কত চাহিদা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাড়া মেলেনি।’’

স্টেট ব্যাঙ্কের চিফ ম্যানেজার (জিবি) দীপকচন্দ্র দাস জানান, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গুয়াহাটি শাখায় টাকা এসে গিয়েছে। টাকা বহণের উপযুক্ত গাড়ি এবং নিরাপত্তার কিছুটা সমস্যা রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পাঠানোর দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। নিজ দায়িত্বে সকলের টাকা এই সময়ে আনাটা ঝুঁকিবহুল। তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে এ নিয়ে কথা চলছে বলে জানিয়েছেন দাসবাবু। তিনিই জানান, শিলচর প্রধান শাখার তিনটি এটিএম এবং করিমগঞ্জে তাদের দু’টি এটিএমে টাকা ঢোকানো হয়েছে। ডাকঘর সূত্র জানিয়েছেন, সারাদিন অপেক্ষার পর বিকেল ৪টায় তারা মাত্র ৫ লক্ষ টাকা পেয়েছেন। ওই টাকা প্রধান ডাকঘরেই বিলি হয়ে যাচ্ছে। ৫৬টি শাখা ও উপ-ডাকঘর রয়েছে শিলচর প্রধান ডাকঘরের অধীনে। তাদের কাউকে একটি টাকাও পাঠানো যায়নি। তাঁরা বিষয়টি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নজরে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সূত্রটি।

তবে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, টাকা নিয়ে তাদের সমস্যা হচ্ছে না। নিজস্ব মজুত দিয়ে চলে যাচ্ছে তাদের। এমনকী, আজ দুয়েকটি এটিএমেও টাকা ঢোকানো হয়েছিল। উল্লাসকর দত্ত সরণী শাখার ম্যানেজার প্রদীপ কংসবণিক জানান, তবে কত সময় এ ভাবে চালানো যাবে, বলা মুশকিল।

শিলচর শহরে যাই হোক, মফস্বলের ব্যবসায়ীরা চিন্তায়, কাল থেকে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। মানুষের হাতে একেবারে টাকা নেই। এমনিতেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই ঘোষণার পর মানুষের কেনাকাটা কমে গিয়েছে। তবু অনেকে আশায় ছিলেন, হাতের টাকা খরচ হয়ে গেলেও শুক্রবার এটিএম খুলবে। কিন্তু আজকের অনিশ্চয়তায় কেউ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া একটি টাকাও খরচ করবেন না।

এ দিকে, চা বাগানগুলির সাপ্তাহিক মজুরি নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে, এর সমাধান হতে চলেছে বলে জানিয়েছেন কাছাড়ের জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন। স্টেট ব্যাঙ্কের রিসার্চ অফিসার অরূপজ্যোতি দাসকে উদ্ধৃত করে তিনি জানিয়েছেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক চা বাগানগুলিকে চাহিদামতো মজুরির অর্থ প্রদানে সম্মত হয়েছে। তবে সে জন্য তাদের পৃথক অ্যাকাউন্ট করতে হবে। বিশেষ শ্রেণির ওই অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকার সর্বোচ্চ সীমা তুলে দেওয়া হবে। নতুন নোটের অভাবে চা বাগানের মজুরি বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে জেলাশাসকের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন হাইলাকান্দির চা বাগানের পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা । এ দিন প্রাক্তন বিধায়ক রাহুল রায়ের নেতৃত্বে বিভিন্ন চা বাগানের প্রতিনিধি জেলাশাসক মলয় বরার হাতে স্মারকপত্র তুলে দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

barak valley ATM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE